সাতকানিয়ায় নিজ ঘরে খুন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

90

সাতকানিয়ায় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক মিঞাকে (৯০) ঘরে ঢুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার সকালে কেওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া চেয়ারম্যান পাড়াস্থ নিজবাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে রাতের যে কোন সময় কে বা কারা ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাকে হত্যা করে। একই সময় বাড়িতে থাকা কর্মচারী জমির উদ্দিনকে (৩০) হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয় বলে জানা গেছে।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন খুনের ঘটনাটি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, পুলিশ এ ঘটনায় বাঁশখালীর জলদির হাবিবুর রহমানের পুত্র গৃহকর্মী জমির উদ্দিন (২৮), হ্নীলার বাসিন্দা নুর উদ্দিন (৫০) ও নুর নাহারকে (৫২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে।
পরিবারের পক্ষে খুনের ঘটনায় কারা জড়িত- এ ধারণা দিতে না পারলেও তদন্তপূর্বক জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান আব্দুল হক মিঞার ছেলে মাঈনুদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল হক মিঞার সন্তানরা কেরানীহাট এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায় সম্পৃক্ত। ছোট ছেলে ছাড়া অন্যরা পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করেন। ঘটনার দিন ছোট ছেলের স্ত্রী-সন্তানরা বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে আব্দুল হক মিঞা ও গৃহকর্মী জমির অবস্থান করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে প্রতিদিনের মত স্থানীয় নুর নাহার কাজ করতে আসলে বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ দেখেন। অনেক ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায়, বাড়ির পেছনে গিয়ে দেখেন দরজা খোলা। তিনি ভেতরে ঢুকে গৃহকর্মী জমিরের হাত-পা বাঁধা ও আব্দুল হক চেয়ারম্যানের লাশ খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিনি দ্রুত স্থানীয়দের জানালে ওই বাড়িতে লোকজনের ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়াার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, সাতকানিয়া সর্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা জানান, গুরুত্ব সহকারে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।
সকালে কাজ করতে আসা গৃহকর্মী নুর নাহার বেগম বলেন, আমি এসে সমনের দরজা বন্ধ দেখি। অনেক ডাকাডাকির পর পিছনে গিয়ে দেখি দরজা খোলা। ভেতরে গিয়ে দেখি জমিরের হাত-পা বাঁধা, আর চেয়ারম্যান সাহেবের লাশ খাটে পড়ে আছে। পরে লোকজনকে খবর দিলে তারা এসে জমিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিহতের ছেলে ব্যবসায়ী মাঈনুদ্দিন বলেন, আমার বাবার নগদ প্রায় ৩ লাখ টাকা, ১৫ ভরির মত স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। আমার বাবার কাছে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ দলিলগুলো নিয়ে গেছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। হত্যাকারীরা আর কি কি নিয়ে গেছে, পরে জানা যাবে।
আব্দুল হক মিঞা হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মানুষ আব্দুল হক মিঞাকে দেখতে ভিড় করেন তার বাড়িতে। এ সময় ভিড় সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
জানা যায়, বেলা ১১টা পর্যন্ত নিজ পরিবারের কোন সদস্য উপস্থিত না থাকলে স্থানীয়দের অনেকেই শোকে কাতর হয়ে পড়েন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসলে শুরু হয় কান্নার রোল। বড় ছেলে নেজাম উদ্দিন সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতি, কেরানীহাট ল্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি। আর আব্দুল হক মিয়া ছিলেন কেরানীহাট জামেউল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার সহ-সভাপতি, জনার কেঁওচিয়া নানু পুকুর শাহি জামে মসজিদ, এডভোকেট কাছিম আলী ফাউন্ডেশন, কেরানীহাট-বান্দরবান-চট্টগ্রাম বাস, কোস্টার ও পূর্বাণী মালিক সমিতির সভাপতি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সথে সম্পৃক্ত এ প্রবীণ রাজনীতিবিদকে হারিয়ে পুরো কেঁওচিয়ায় চলছে শোকের মাতম।
জানা গেছে, কয়েকটি কারণকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারণ গুলি হচ্ছে- বাড়ির ভেতরে থাকা গৃহকর্মীর সম্পৃক্ততা, মালামাল লুটের জন্য দুর্বৃত্তদের হানা ও সম্পত্তির বিরোধ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার জমির দীর্ঘ দিনের কর্মচারী। বাড়িতে আব্দুল হক চেয়ারম্যান ছাড়া থাকতেন জমির। বাড়ির কোন দরজা ভাঙা হয়নি। পিছনের দরজা আর উপরের সিঁড়ি ঘরের দরজাটি খোলা ছিল। খুনিরা কীভাবে বাড়িতে প্রবেশ করলো? কে তাদের দরজা খুলে দিল? নাকি আগে থেকেই দরজা খোলা ছিল। খুনিদের দলে কয়জন ছিল? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে হত্যার মূল কারণ উৎঘাটন ও খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এসপি এসএম রশিদুল হক বলেন, সবদিক মাথায় নিয়েই পুলিশ ঘটনাটি দেখছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডের কারণ জানা যাবে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সাতকানিয়া সর্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। আপাতত মিঞা সাহেবের সাথে থাকা চিকিৎসাধীন জমির উদ্দিনকে আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের একাধিক টিম রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে। আমরা আশাবাদী খুনিরা গ্রেপ্তার হবেই।
আব্দুল হক মিঞার বড় ছেলে নেজাম উদ্দিন জানান, গতকাল দুপুর ১২টায় পুলিশ সুরতহাল রির্পোট শেষ করে ময়নাতদন্তের জন্য আব্দুল হক মিঞার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিজবাড়ি আনা হবে এবং আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জনার কেওচিয়া নানু পুকুর শাহি জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।