সমস্যায় জর্জরিত স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ

7

রাজু দে, বোয়ালখালী

বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ দীর্ঘদিন ধরে নানান সমস্যায় জর্জরিত। ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজে দুইটি বিষয়ে অনার্স, স্নাতক ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। সরজমিনে দেখা গেছে, কলেজের সম্মুখে বিশালকৃতি খেলার খোলা মাঠ পড়ে আছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ কয়েকটি পুকুরসহ মূল্যবান জায়গা এখন অন্যদের দখলে। টয়লেটের দূর্গন্ধ ও জরার্জীণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করেন শিক্ষকরা। জরাজীর্ণ দুইটি ভবন এখন ধসে পড়ার প্রহর গুনছে।
যেকোনো মূহুর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ফলে কলেজটিতে দেখা দিয়েছে কক্ষ সংকট। অপর একটি দ্বিতল বিশিষ্ট জোড়াতালি দেওয়া ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কক্ষ সংকটের কারণে কোনো এক শ্রেণির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে বন্ধ থাকে অন্যান্য শ্রেণির পাঠদান। সেই ভবনেও শ্রেণি কক্ষের ছাদ ছুঁয়ে পড়ে পানি। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র টিউবয়েল। দুইটি শৌচাগারে পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। প্রসাবের দুর্গন্ধে শ্রেণি কক্ষে থাকা দায়। অডিটোরিয়াম নেই। ভবনের ছাদ ছুঁয়ে পড়া পানিতে নস্ট হচ্ছে লাইব্রেরির মূল্যবান বই। লাইব্রেরিতে নেই লাইব্রেরিয়ান। অবহেলায় পড়ে রয়েছে রসায়ন বিভাগের ল্যাব ও আইসিটি ল্যাবের যন্ত্রাংশ। নেই ছাত্র-ছাত্রীদের কমন রুম। জানা গেছে, বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের পদ রয়েছে ২-৩ জন। এর মধ্যে ৮ জন শিক্ষকের পদ শুন্য। শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে নিতে অতিথি শিক্ষক রাখা হয়েছে কলেজে। শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নেই কোনো আবাসনের ব্যবস্থা। জনবলের সংকট প্রবল। ফলে কলেজের ১৯ দশমিক ৪ একরের ভূ-সম্পত্তি হচ্ছে বেহাত।
২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৬টি পদের এর বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের জরাজীর্ণ ভবনেগুলো বিপদজনক চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। অতীতের ছাত্রাবাসগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত কলেজে বেড়েছে বহিরাগতদের আনাগোনা। স্নাতক ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন তারেক বলেন, নানান সমস্যার মধ্যে রয়েছি। শুধু নেই আর নেই। এসব সমস্যা সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। দুঃখ লাগে প্রাণের এই বিদ্যাপীঠের বেহালদশা দেখে। শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনের বেশ কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. পার্থ প্রতীম ধর। তিনি বলেন, কলেজে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের নতুন করে পদ সৃষ্টির প্রয়োজন।
যে কয়েকজন শিক্ষক আছেন এরমধ্যেও ৮টি পদ শুন্য। তিনজন কর্মচারী নিয়ে কলেজ পরিচালনা করা অত্যন্ত কষ্টকর। কলেজের সমস্যা নিয়ে বিগত অধ্যক্ষবৃন্দ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। বর্তমানেও তা নিয়ে বিভিন্ন দফতরে লিখে জানাচ্ছি। ১৯৩৯ সালে কানুনগোপাড়া গ্রামের রসিক চন্দ্র দত্ত ও রত্নগর্ভা মুক্তকেশী দত্তের জ্যেষ্ঠপুত্র রেবতী রমণ দত্ত তাঁরই পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর শিক্ষাবিদ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর নামে এ কলেজ প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে সরকার কলেজটিকে জাতীয়করণ করেন।