সমন্বয়কের মর্যাদা সমুন্নত হোক এগিয়ে যাক চট্টগ্রাম

10

 

ঘোষণায় বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও চট্টগ্রামবাসীর জীবনমানে নেই তার ছোঁয়া। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলাবদ্ধতা, যোগাযোগ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হলেও সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে এর সুফল নগরবাসী পাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রাণভোমরা। তাই দেশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে হবে এবং পরিকল্পিত ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে। বিগত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। চট্টগ্রামও এর থেকে মুক্ত নয়। উন্নয়নের মহোৎসব চলছে নগর-গ্রামে। তবে বরাবরই দুর্ভাগ্য যে, চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এ চট্টগ্রাম শহর। যে যেভাবে পারছেন নিজেদের মতো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে সেবাধর্মী সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন সমন্বয়ের কাজটি যাতে ভালোভাবে করতে পারে সেজন্য আইনগতভাবে ক্ষমতা দিতে হবে। জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে মেয়র সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করলেও কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তা না মানলে সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা আইনে বলা নেই। তদুপরি সিটি করপোরেশনের মেয়র যিনি সবগুলো সেবাদান প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করবেন, তার মন্ত্রী পদমর্যাদাও এখন আর নেই। অথচ ২০১০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মেয়র প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা ভোগ করতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছেন। কিন্তু এ টাকায় যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সবার আগে জানতে হবে- চট্টগ্রামে কী ধরনের উন্নয়ন প্রয়োজন, কী ধরনের উন্নয়ন করা হলে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে। সেটা না জেনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা কাঙ্ক্ষিত উপকারে আসবে না। সূত্র জানায়, ১৯৮২ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র প্রতি মাসে সভা করতেন। ওয়ার্ড কমিশনাররাও থাকতেন। সব সেবা সংস্থার প্রতিনিধি ছিলেন অফিসিয়াল কমিশনার। সব সেবা সংস্থার প্রধানের এ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল। তখনও মেয়র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় ক্ষমতা ভোগ করতেন। আইনী বাধ্যবাধকতায় সকল সংস্থাকে মেয়রের সাথে পরামর্শ করেই কাজ করতে হতো। কিন্তু বিগত প্রায় ১১ বছর ধরে চট্টগ্রামের মেয়রদের মাথা থেকে সেই প্রতিমন্ত্রীর মুকুট সরে গেছে। এতে বিপর্যয় ঘটেছে সমন্বয়ের। অথচ দেশের প্রধান নগর ও রাজধানী ছাড়াও তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরে থাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ চট্টগ্রাম দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর নগর, জনসংখ্যা, আয়তন ও শিল্প-ব্যবসা বাণিজ্যেও ঢাকার দুই সিটির চেয়ে কম নয়। এরপরও চট্টগ্রামের প্রধানসমন্বয়কের মর্যাদা সমুন্নত না হওয়া চট্টগ্রামবাসীর জন্য দুর্ভাগ্যের বলা যায়। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার দুই মেয়রকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়েছে সরকার। ২৭টি ওয়ার্ডে ২০ লাখ মানুষ বাস করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে। ২০১১ সালে গঠিত হওয়া এই সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী উপমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন। ৫ লাখ মানুষের শহর রাজশাহী। ৩০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন। একইভাবে ১৫ লাখ মানুষের বাস খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (খুসিক) ৩১টি ওয়ার্ড। খুশিক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককেও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়েছে সরকার। রাজনীতি, ভৌগোলিক ও বাণিজ্যিক বিচারে ঢাকার পরে চট্টগ্রামের অবস্থান হলেও গত ১০ বছরে কোনো মেয়র প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর মর্যাদা পাননি। অথচ জনসংখ্যা ও ওয়ার্ডের তুলনায় নারায়াণগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে। ৬০ লাখ মানুষের শহর চসিকে রয়েছে ৪১টি ওয়ার্ড।
আমাদের মনে রাখা চাই, চট্টগ্রামের জন্য ১৯৬১ সালে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল। একই সময়ে চেন্নাইয়ের জন্য একই মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল। তারা এটি বাস্তবায়ন করে কোন পর্যায়ে আছে, আমরা কোন পর্যায়ে আছি? এরপরও আরও কয়েকটি চমৎকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল। এখানে কোথায় পার্ক, আবাসিক ও খেলার মাঠ হবে এসব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এর কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। এক্ষেত্রে অবশ্যই সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতাকে সংহত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামের উন্নয়ন সত্যিকার অর্থে ফলপ্রসূ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সমন্বয় সেল করা দরকার। সেখান দিয়ে চট্টগ্রামের সব প্রকল্প, সমন্বয়ের কথা হবে। কেননা সব মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জবাবদিহি করতে বাধ্য। আমরা আশা করি, চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে সফল করতে সকলপক্ষ নিজেদের সমন্বয়সাধনে মনোনিবেশ করবেন। এগিয়ে নেবেন চট্টগ্রামকে।