সবুজে সজীব থাক ফসলের মাঠ

12

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

চলতি বোরো চাষের মৌসুমে লোডশেডিংয়ের কবলে সেচ সুবিধা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বোরো চাষে কৃষক এখন বীজতলা তৈরির পাশাপাশি চারা লাগানোর জন্য জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। জমিকে চাষাবাদ উপযোগী করার জন্য সেচ যন্ত্র দিয়ে পানি ফেলা হচ্ছে জমিতে। প্রায় সময় বিদ্যুৎ না থাকায় যথাসময়ে কৃষক জমিতে পানি দিতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বোরো চাষে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ না পাওয়ার আশঙ্কায় চিন্তিত এখানকার কৃষকেরা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম জুয়েল দাশ জানান, রাঙ্গুনিয়া ২৪ মেগাওয়াট পাওয়ার গ্রীড আমাদেরকে ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিচ্ছে। ফলে চলতি বোরো চাষে কৃষকের চাহিদা মতো বিদ্যুৎ দিতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গেল আমন মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ার ১৫ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। যেখানে ধানে হেক্টর প্রতি ৫.৭ মেট্রিক টন এবং চালে ৩.৭ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। এবার উপজেলার ৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো আবাদের জন্য গত ডিসেম্বর থেকেই কোনো কোনো কৃষক আগাম বীজতলা তৈরি করে এখন রোপণ শুরু করে দিয়েছেন। তবে চারার ঘাটতি পূরণে এখনো বীজতলা তৈরির কাজ চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে বোরো ধান রোপণ মৌসুম। এই লক্ষে গুমাইবিলের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষকের বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। কৃষকরা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছেন, কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ জমির আইল বাঁধছেন, বীজতলা সমান করছেন, কেউবা বীজ বপন করছেন, অনেকে জমিতে পানি দিয়ে জমি চাষাবাদ উপযুক্ত করছেন।
গুমাইবিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, বোরো চাষের বীজতলা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে কৃষকরা। ইতোমধ্যে বোরো চাষে কোথাও কোথাও কৃষক চারা লাগানো শুরু করেছে। তিনি বলেন, সরকারি প্রণোদনা পাওয়া হাইব্রিড জাতের আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে কৃষক। কারণ এই জাতের ধানে ফলন বেশি। প্রণোদনা বীজের বাইরেও কৃষকরা নিজ উদ্যোগে এই বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা করেছেন। এছাড়া ব্রি ধান ২৮, ২৯, ৫৮, ৮৯, ৯২, উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের বীজতলা তৈরি হয়েছে।
চন্দ্রঘোনা ছুফি পাড়া গ্রামের মো. জসিম বলেন, চারা লাগানোর মতো উপযুক্ত হয়েছে। কৃষি অফিসারদের পরামর্শ অনুযায়ী বোরা চাষে প্রতিরোধমূলক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে গুমাই বিলসহ উপজেলার অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে। কৃষি অফিস থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে কৃষকরা ব্যাপক অর্থ খরচ করে বোরো চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। চাষাবাদেও সার সেচ, বীজ আগাছা পরিস্কার, শ্রমিকের চড়া মূল্য- সব মিলিয়ে চাষাবাদ করে যে অর্থ খরচ করা হয় তা ফলন তুলে ব্যয়কৃত অর্থ পাওয়া যায় না।
চন্দ্রঘোনা আধুরপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম সওদাগর জানান, তিনি এবার ৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করবেন। এজন্য ডিসেম্বর থেকে বীজতলা করেছেন। ইতোমধ্যে ৩ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছেন। বাকিগুলোতে আবাদ প্রক্রিয়া চলছে। বীজতলা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী তারা কাজ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, এবার যথাসময়ে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বীজতলার চারা পরিপুষ্ট হয়ে গেছে। গেল মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা ভাল দামও পেয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা ছাড়াই কৃষকরা বোরো আবাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি এবারও ভালো ফলন হবে। কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। আমরা কৃষককে সার্বিক সহযোগিতা করছি।