সফল হোক বই উৎসব

28

 

আজ ৩১ ডিসেম্বর, থার্টিফার্স্ট নাইট। আজ সন্ধ্যা আকাশে সূর্য স্তমিত হওয়ার সাথে সাথে বিদায়ের বিউগল বেজে উঠবে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের। রাত ১২টায় বহুল আলোচিত ও নানা ঘটনা প্রবাহের স্মৃতি রেখে বিদায় নেয়ার পর ১২.০১ মিনিটে নতুন বছরের সুচনা হবে। শুভ ইংরেজি নববর্ষ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কোটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই দিয়ে বাংলাদেশ সরকার দিনটি উদযাপন করবে। এবারে বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসবকে বলা হচ্ছে ‘বই উৎসব’। দেশের সব প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একই সময়ে এ উৎসব উদযাপন করা হবে। শুরু থেকেই এবার বই উৎসব নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা গিয়েছিল। তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, কাগজের উচ্চমূল্য, আমদানি বন্ধ থাকা, দেরিতে দরপত্র আহ্বানসহ নানা প্রতিক‚লতার মধ্যে যথাসময়ে বই বিদ্যালয়ে না পৌঁছার কারণে এ উৎসব আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু সরকার এসব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জানুয়ারির ১ জানুয়ারি ২০২৩ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেছে। শিক্ষার্থীদের হাতে নির্দিষ্ট সময়ে নতুন বই তুলে দেয়া সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বলা যায়, নববর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বাড়তি আনন্দের দিন। দেশের প্রতিটি জনপদে চলবে এ উৎসব। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছানো নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বই উৎসব সফল হবে- এ প্রত্যাশা আমাদের। জানুয়ারির ১ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। মাধ্যমিকের প্রায় ৭৫ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে দেশের সব জেলা উপজেলায়। প্রাথমিকে পৌঁছেছে ৬৩ শতাংশ। বর্তমান সরকার প্রথম দফায় দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১০ সাল থেকে উৎসবের মাধ্যমে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। করোনার কারণে বিগত দুই বছর ব্যাপক আয়োজনে উন্মুক্তভাবে বই উৎসবের আয়োজন করা না হলেও বিতরণ ঠিকই করা হয়েছিল। এবার যেহেত করোনার বাধানিষেধ নেই, তাই বই উৎসব করার আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আশা করা হচ্ছে, দেশব্যাপী যথাসময়ে বই উৎসবের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীও হাতে বই বিতরণ করা হবে। তবে অতীতে বই বিপণন নিয়ে নানা ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। বিনামূল্যে বিতরণের বই কালোবাজারে বিক্রি, বইয়ের সঙ্গে নোট বই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির বই বছরের পর বছর সময় মতো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রকাশকরা।
অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকের মান নিয়েও সংশয় ছিল। অস্পষ্ট ছাপা, নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হতো এসব পাঠ্যপুস্তকে। কিন্তু‘ বর্তমানে যে ঝকঝকে ছাপা রঙিন বইগুলো শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের বই পাঠের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যাবে। সদিচ্ছা থাকলে এসব অন্তরায় দূর করা যায়, সেটা প্রমাণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী এর আগে একাধিকবার শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি যে দারিদ্র্যমুক্তির কার্যকর অস্ত্র তা প্রমাণিত হয়েছে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্তির ঘটনায়। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের এক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যে জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক তা বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত হয়েছে। সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ ও নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তা বিশ্ব সমাজেরও প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিনামূল্যের বই এখনো বাজারে পাওয়া যায়। ফলে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, দেশে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ ও বিতরণকে ঘিরে যে কায়েমি চক্র গড়ে উঠেছিল তারা এখনো সক্রিয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় মনোভাবই প্রত্যাশিত। পাশাপাশি মনে রাখা দরকার, বই উৎসবকে তাৎপর্যবহ করতে হলে শিক্ষার মানের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। জানা-শোনার জগৎকে আরো প্রসারিত করা চাই। এজন্য সাধারণ জ্ঞানের ওপর শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে পারিবারিক শিক্ষার ওপরও, যাতে একজন শিক্ষার্থী নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন হিসেবে গড়ে ওঠে।