‘সততার মৃত্যু নেই’

299

কোথায় আমাদের নীতি-আদর্শ। কোথায় আমাদের সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য। কোথায় আমাদের মহিমা গাঁথা হাজার বছরের সংস্কৃতি সভ্যতা। সবই আজ ম্লান হতে বসেছে। আমরা জানতাম শুধু একজন বিপ্লবীর মৃত্যু আছে; কিন্তু তার নীতি-আদর্শের কখনও মৃত্যু হয় না। কোথায় চলে যাচ্ছে সেই নীতি। কোথায় গেল সেই অনুপম আদর্শগুলো। কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে সেই সততা। যে সততার কাছে একদিন অসৎরা হার মেনেছে। দুর্বৃত্তরা সৎ মানুষগুলো দেখলে ভয় পেয়েছে। সৎ-আদর্শবান ব্যক্তিদের দেখলে শ্রদ্ধায় বুক ভরে এসেছে। তাদেরকে মাথার মুকুট হিসেবে গর্ব করেছে। কিন্তু এসব অনুপম আদর্শ আজ কোথায়?
টাকা এবং তোশামোদি-মালিশের কাছে নীতি-নৈতিকতা আজ মুখথুবড়ে পড়ছে এবং নীতি-নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। মানুষ তার বিবেককে বর্জন করছে। আদর্শকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দিচ্ছে। ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সততা আরও অনেক আগে হারিয়ে গেছে। টাকার কাছে সব নীতি, আদর্শ ধ্বংস হয়ে গেছে। আজকের এই সমাজ ব্যবস্থায় নীতি, আদর্শ খাঁচায় বন্দি। টাকা হলে কী না হয়? বাঘের চোখ মেলে। নতুন নতুন বন্ধু মেলে। দূরের আত্মীয় পরম আত্মীয় হয়। রক্তের বন্ধন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বড় বড় পদ পাওয়া যায়।
অর্থের দাপটে আর চামচাদের পালিশে-মালিশে আদর্শবানদের স্থান বর্তমান সমাজে একপ্রকার নেই বললে চলে। যারা আছেন তারা আজ অপাংক্তেয়। নিজ ঘরে যেন পরবাসী। ভাবখানা এমন যে, সমাজে শোষণকারীদের বেদবাক্য শুধু শুনবেন, আর অন্যায় কর্মকাণ্ড দেখেই যাবেন, তবে কোনো কিছু বলবেন না। এদের অবস্থা তাই। তারা দেশ-জাতিকে নিয়ে কোনো কিছু ভাবতে পারবেন না। জাতির ও সমাজের দুঃসময়ে মত প্রকাশ করতে পারবেন না। দুর্গত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারবেন না। আদর্শবান, সত্যবাদীরা এখন অতীত স্মৃতি মাত্র। তাদের কথা আরব্য রজনীর উপন্যাসের মতো। সৎবাক্য এখন আর কেউ শোনেন না। এমন কি কেউ কানের কর্ণকুহরে প্রবেশও করতে চান না।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা! কিভাবে টাকার কাছে আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা জিম্মি হয়ে পড়ছে; বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সমকালীন কিছু ঘটনা প্রবাহের আলোকে নিবন্ধটি সম্যক আকারে স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিবেকের পরাজয় : মনে পড়ে সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর কথা। আজ তিনি না ফেরার দেশে। বছর দশেক আগে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- ‘আজ কালো অর্থের এক ব্যবসায়ীর কাছে হেরে গেলাম। সারা জীবনের নীতি আদর্শ সততা অর্থের কাছে পরাজয় হলো’। মরহুম রাজ্জাক আলী সাহেব শিক্ষিত, মার্জিত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক ছিলেন। নীতি আদর্শকে কখনও তিনি বিকিয়ে দেননি। পারলে সমাজের কাছে তার এতো রাজনৈতিক ব্যর্থতা ফুটে উঠত না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলত না। তবে এ কথা বলা যায়, দেশ-জাতির সাথে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। করেননি বিধায় মনের আক্ষেপে পত্রিকায় সাক্ষাতকারে সেদিন অপ্রিয় হলেও এতো সব কথা বলে ফেলেছিলেন। মরহুম রাজ্জাক আলী সাহেবের মতো অনেক নীতিবানরা এই আদর্শহীন নীতি বর্জিত সমাজ ব্যবস্থায় হাবুডুবু খাচ্ছেন। একাকীত্ব জীবনযাপন করছেন। মনের দুঃখে গুজরান করছেন। দিনের পর দিন একা হয়ে যাচ্ছেন। বন্ধুহীন হয়ে পড়ছেন।
প্রফুল্ল কুমার শীল। খুলনার নির্বাচনী বটিয়াঘাটা-দাকোপ এলাকায় একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। শিক্ষিত, মার্জিত ধর্মপ্রাণ এই ভদ্রলোক সংখ্যালঘু বটিয়াঘাটা-দাকোপ অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনিও আজ না ফেরার দেশে। সাধু, সন্যাসব্রত ছিল তার জীবন। জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন ধর্মশালায়। শুনেছি এই ভদ্রলোক পারতপক্ষে কখনও মিথ্যা কথা বলেননি। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। টাউট, বাটপারকে আশ্রয় দেননি। সততা, নিষ্ঠা এবং নির্লোভতা ছিল তার জীবনের পরম আরাধ্য। দ্বিতীয়বার নির্বাচনে তাকে আর নমিনেশন দেয়া হয়নি। তার মনে বারবার নানা প্রশ্ন, নানা সংশয় দেখা দিতে লাগল। তাকে নমিনেশন না দেয়ার কারণ কী? তিনি নানাভাবে জানতে উৎসুকবোধ করলেন। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে কারণ জানতে চাইলেন। সদুত্তর না পেয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করলেন। সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন। জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গেলেন। ভোট প্রার্থনা করলেন। ভোট পেলেন। তবে পরাজয় হলো না। এবার তিনি জানতে পারলেন কী ছিল তার অপরাধ? অপরাধ ছিল তার একমাত্র সততা এবং সন্যাসব্রত জীবন। দলীয় হাইকমান্ডের অভিমত, তার এখন রাজনীতি না করাই ভালো। কারণ এই হাল জামানায় তিনি বড়ই বেমানান। তাই দল তাকে নমিনেশন দেয়নি।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এবার মুক্ত আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে বিবেকের কাছে একরাশ প্রশ্ন করুন। এখানে মি. শীলের কী কোনো পরাজয় হয়েছে? না তাঁর কোনো পরাজয় হয়নি। সৎ, আদর্শিক মানুষগুলোর পরাজয় হয়েছে। সততা এবং আদর্শের অপমৃত্যু হয়েছে। দেশ-জাতির পরাজয় হয়েছে। কালো টাকার কাছে ১৭ কোটি বিবেকের পরাজয় হয়েছে।
সততার পরাজয় : জীবনের এই বাঁকে বাঁকে দেখেছি একই বিল্ডিংয়ে একজন সততা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পাদন করছেন। অপরজন দেদারছে ঘুষ খাচ্ছেন, বাড়ি বানাচ্ছেন, নতুন নতুন নানা ব্রান্ডের গাড়ি কিনছেন, চাকরিতে তেল শুধু মালিশ করেই প্রমোশন পাচ্ছেন, ছেলেমেয়ে আমেরিকা-লন্ডনে ফ্রি-স্টাইলে চলছেন, ফিরছেন? সমাজের মানুষ তাদের কদর করছেন। নানাভাবে বাহবা দিচ্ছেন।
আর দুর্ভাগ্য! সৎ অফিসারটির কোনো প্রমোশন নেই। প্রমোশন দূরের কথা, প্রতিনিয়ত ফেসেলেটিস থেকে বঞ্চিত ওএসডি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ছেলেমেয়ে আছেন দুঃখকষ্টে। সংসার প্রায় অচল। বউ-এর সাথে লেগে থাকে সার্বক্ষণিক প্যাচাল। তাই সংসারে শনির দশা লেগেই আছে। এক কথায় দুর্নীতি না করায় ঘরে-বাইরে দুর্গতি তার পেছনে ছুটছে। শেষ পর্যন্ত ঐ সৎ অফিসারটির সততা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। সমাজ, পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা তাকে জিম্মি করে ফেলে। এক পর্যায়ে মিথ্যার কাছে বিবেকের পরাজয় হয়। হতাশার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে একদিন জীবন দূর্বিপাকে ভেসে যায়। অতঃপর নির্মম মৃত্যুকে আহ্বান জানায়।
মেধাবীরা হারিয়ে যাচ্ছে : চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঈশানকোণে কালো মেঘ। দুর্গতি শুধু পিছে ছুটছে। হতাশায় নিমজ্জিত গোটা জাতি। প্রতিটি সেক্টর বাজিকররা ঘিরে ফেলেছে। চারদিকে শুধু ঘুষ, দুর্নীতি আর নানা অনিয়ম। সততার নেতৃত্বশূন্য। মেধাশূন্য। সর্বত্রই বিভাজন। এই দুর্গতির হাত থেকে জাতি কবে রক্ষা পাবে? কে কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করবেন। কে এগিয়ে আসবেন। কে খামোশ উচ্চারণ করবেন? আশা মিলেও মিলছে না। গোটা জাতি হতাশ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দুরাশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
শ্রদ্ধেয় পিতা বলতেন, যোগ্যতা যার চেয়ার তার। এখানে যোগ্যতা বলতে মেধাকে বুঝানো হয়েছে। কথাটি আজকের জামানায় যথার্থ নয়। এখানে সেই যোগ্য হিসাবে চিহ্নিত, যার টাকা আছে, মামা-খালু আছে। টাকা হলে হাতি মেলে। সম্মান মেলে। দেশে-বিদেশে নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা চলে। এক সময় পড়তাম ‘অর্থই অনর্থের মূল’ বর্তমানের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আবার জোরে-সোরে উচ্চারিত হচ্ছে সবার জন্য শিক্ষা। কথাটি আপেক্ষিক। শুধু রাষ্ট্রীয় শ্লোগান মাত্র। তবে এখনও খাতা-কলমে। কারণ দেখা যায়, বিত্তবানরা তাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের ভালো উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেশের শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত আইন প্রয়োগে ব্যস্ত থাকেন। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যার যার দলীয় কমিটি দিয়ে একপ্রকার জবরদখল, খবরদারী, নিত্যনতুন ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব খাটান। শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় বিত্তহীনদের এখন আর কোনো সুযোগ নেই। যতই সে মেধাবী হোক না কেন। সন্দেহ নেই, একজন শিক্ষার্থী মেধাবান। থেকে কী হবে? কারণ বিত্তহীন পরিবারের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এখন শিক্ষালয় নয়, বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
কেজি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তি চলছে। তবে প্রতিযোগিতা নয়, মেধার চ্যালেঞ্জ নয়, চলছে অর্থের প্রতিযোগিতা। যার বাবার কালো টাকা বেশি তার পুত্রধনদের কপাল খুলবে। তারা সমাজের কাছে চাঁদ কপালি। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের পক্ষে এই অশুভ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পরীক্ষা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। পুলিশি অভিযান চলছে। চোখ ধাঁধাঁনো, লোক দেখানো কিছু ক্রিমিনাল গ্রেফতার হচ্ছে। প্রশ্নফাঁস বাণিজ্য কী বন্ধ হচ্ছে? প্রকৃত রাঘববোয়ালদের কী ধরতে পারছে?
কিউবা ফিদেল কাস্ত্রর দেশ। একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। এক কালের অশান্তির দেশ। নানা অস্থিরতার মধ্যে সেখানে শান্তির বিপ্লব ঘটেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি লাভ করেছে। কিউবার আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা ব্যবস্থা। আর মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর। জাহাজের পানি দেয়া ছিল এদের এক কালের পেশা। তারাই গোটা বিশ্বের চিকিৎসা খাতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। এর মূলে রয়েছে মেধা শক্তিকে মূল্যায়ন করা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা।
আমাদের দেশে মেধাকে কখনও মূল্যায়ন করা হয় না। হয় না বলে কম খরচে অনেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। এদেশে মেধাবীদের গড়ে তুলতে রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। যদি গ্রহণ করতো তাহলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ভেঙে পড়ত না। ঘুষ, দুর্নীতির কাছে জিম্মি হতো না।
একজন মেধাবী রাষ্ট্রের অধিকার থেকে যখন বঞ্চিত হন, তখন সে মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলেন। অনেকে নানাভাবে বিপথগামী হয়ে পড়েন। সমাজ-রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মনে রাখতে হবে টাকা এক জিনিস, মেধা অন্য জিনিস। পরস্পর দু’টি ভিন্ন। তবে একটি ছাড়া অন্যটি চলতে পারে না। যে দেশে মেধাকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হয় না, সে দেশ-জাতি মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ভবিষ্যৎকে ভাবিয়ে তোলে। সময় এসেছে দেশকে নিয়ে ভাবুন, জাতিকে নিয়ে গভীরে চিন্তা করুন। কেজি স্কুল থেকে শুরু করে সকল পাবলিক পরীক্ষায় দুর্নীতি মূলোৎপাটনে ব্যবস্থা নিন। টাকার বিনিময়ে নয়, প্রকৃত মেধাবীদের যোগ্য জায়গায় স্থান দিন। সবার জন্য শিক্ষা এই কথাটি মাথায় রাখুন।
চাই শৃঙ্খলাবোধ : রাতারাতি হঠাৎ বাবু! আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। কালোবাজারি করে, সুদ খেয়ে, সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে তিনি সমাজের বড় বাবু সেজেছেন। শিল্পপতি হয়েছেন। আরও অনেক বিশেষণে ভূষিত হয়েছেন। অর্থ হলেই সে বড় বাবু। কিন্তু অনেকে জানে না বড় বাবু হতে গেলে বাড়তি গুণ লাগে। তিনটি প্রজন্ম শিক্ষা-দিক্ষা, জ্ঞানে-গুণে গুণান্বিত হতে হয়। সামাজিক মর্যাদা অর্জন করতে হয়। বারো গুণের এক গুণ নেই তার মধ্যে। আছে ধান্দাবাজি ফিকিরবাজি, মোসাহেবি, চামচামি। সহজ পথে তিনি অর্থের মালিক হননি। মালিক হয়েছেন বাঁকা পথ অতিক্রম করে। তিনি আবার বড় বাবু! নিজেকে সমাজপতি ভাবেন কী করে? দানবীর হিসেবে জাহির করেন কীভাবে? বিভিন্ন জায়গায় দেখা, এলাকার সবচেয়ে অত্যাচারী মানুষটি মনে করে অত্যাচার করে সে নিজেই অনেক সম্মান অর্জন করেছেন, কিন্তু আসলে কী তাই ? আসলে সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্টতর মানুষ হিসাবে চিহ্নিত হয়। কথায় আছে, শকুন যত উপরে উঠুক না কেন মন থাকে তার নিচের দিকে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একজন কালোবাজারি যতই সমাজে নৈতিকতা দেখাক না কেন, যতই সত্যের বাণী মুখ থেকে খইয়ের মতো বিস্ফোরণ করুক না কেন সমাজের কাছে সে একজন কপট ছাড়া কিছুই না। তার নীতি-নৈতিকতা তলানীতে। একটি জাতির উন্নয়নের মূল রয়েছে নৈতিক চরিত্র এবং শৃঙ্খলাবোধ। নীতি-নৈতিকতার ওপর একটি দেশ গড়ে ওঠে। একটি জাতি সমৃদ্ধি লাভ করে। নীতিবোধ আর জাতির বীরত্ব এক সূত্রে গাঁথা। এই অভিন্নতায় গড়ে ওঠে শৃঙ্খলা, যার মধ্যে শৃঙ্খলা আছে, আদর্শ আছে, সততা আছে তার কোনো মৃত্যু নেই। মৃত্যুর পরেও তিনি জীবিত থাকেন। এই বাংলাদেশে একজন সৎ মানুষ বেঁচে থাকতে এই দেশ, এই জনগোষ্ঠীর কখনও পতন হবে না; ধ্বংস হবে না। কারণ সততার কোনো মৃত্যু নেই। চিরঞ্জীব, আমৃত্যু। আর এই সৎ লোকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তবে তারা ছত্রভঙ্গ। তারা ভাবে বোবার কোনো শত্রু নেই। তাই অবস্থার প্রেক্ষাপটে নীরব, নির্বিকার।
লেখক : বেসরকারী ফার্মের কর্মকর্তা, প্রাবন্ধিক