সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি কাম্য

8

সম্প্রতি নানা ইস্যুতে দেশের রাজনীতি উত্তপ্ত। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১২ দলসহ সমমনা চুয়ান্ন দল মিলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিভাগীয় মহাসমাবেশ, গণমিছিল, অবস্থান ধর্মঘট কোনরকম বড়ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবেই সমাপ্ত করেছে। এজন্য সরকারের প্রশাসনিক সহযোগিতা এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংযমি মনোভাব জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। গত ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিএনপি দেশব্যাপী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। আশা করা হয়েছিল, আগের কর্মসূচির মত এবারও কোনরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সমাপ্ত হবে। সারা দেশে তাই হয়েছে শুধু চট্টগ্রাম ছাড়া। চট্টগ্রামে যাই হয়েছে তা কারো কাম্য ছিল না। খবরে প্রকাশ, কাজীর দেউড়ি এলাকায় নির্ধারিত ব্যারিকেড স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে একটি মিছিল থেকে। এসময় পুলিশ হামলাকারীদের ধাওয়া করতে গিয়ে পুরো এলাকা রণাঙ্গনে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা এসময় কাজীর দেউড়ীর পুলিশ বক্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করেন বলে সংবাদপত্রে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপানো হয়। এঘটনা দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলেছে নিঃসন্দেহে। ঘটনার পর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী গ্রেফতারসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা মনে করি, পুলিশের ব্যারিকেডে যারা আক্রমণ করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে দলের কর্মী হতে পারে না। তারা বরং বিরোধী দলের আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বিএনপির উচিৎ দলে বিশৃঙ্খলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। না হয় সামনের কর্মসূচিগুলোতে এধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটানোর অপপ্রয়াস চালানো হতে পারে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দেখা যায় শীতকাল এবং ভোটের মৌসুম এলেই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। তাই এবার শীতে রাজনৈতিক উত্তাপ একটু বেশি। আগামীতে এ উত্তাপ যে আরও বাড়বে এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। যদিও নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির অবস্থান দুই মেরুতে।
সরকারি দলের নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নেতাদের এই মাঠ গরম করা বক্তৃতা-বিবৃতিতে কর্মীদের মধ্যেও নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সেই প্রতিক্রিয়া কথায় সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা হয় না। কিন্তু সেটি যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং এক দলের কর্মীরা আরেক দলের কর্মীদের ওপর হামলা চালান, তখনই মহা-উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি ধারাবাহিক বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগও তাদের সম্মেলনসহ জেলা ও বিভাগে জনসভা করে আসছে। রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মর্সূচির সময় তারাও নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে বিএনপি ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশ সম্পন্ন করার পর সফলভাবে অবস্থান কর্মসূচিও শেষ করেছে। কিন্তু চট্টগ্রামে যা ঘটেছে তাতে পুলিশের আত্মরক্ষার বিষয়টি অপেক্ষা করার কোন কারণ নেই। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও উভয়পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়াও স্বাভাবিক। এঘটনায় পুলিশের দাবি তাদের ২০জন সদস্য আহত হয়েছে, এরমধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। আমরা মনে করি, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের কর্মসূচি ও পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানাতে পারে। কিন্তু এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপর হামলা, একে অন্যকে দেখে নেওয়া এবং দেখিয়ে দেওয়ার হাকডাক শান্তিকামী মানুষকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। দেশ যখন বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে সংকটের মুখে, তখন কোনো পক্ষেরই এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজপথে ফয়সালা করা কিংবা রাজপথ দখল করার হুমকিধমকি কোনোভাবে কাম্য নয়। আমরা আশা করি, চট্টগ্রামে যা ঘটেছে, তার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেইদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক কারণে ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন কাউকেও পুলিশী হয়রানী করাও কাম্য নয়। দীর্ঘ একদশক প্রায় রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের কারণে দেশের যে অদম্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা যেন কোনভাবেই বিঘœ না ঘটে সেই দিকে মনোযোগ দিবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো-এমন প্রত্যাশা সকলের।
সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক
কর্মসূচি কাম্য

সম্প্রতি নানা ইস্যুতে দেশের রাজনীতি উত্তপ্ত। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১২ দলসহ সমমনা চুয়ান্ন দল মিলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিভাগীয় মহাসমাবেশ, গণমিছিল, অবস্থান ধর্মঘট কোনরকম বড়ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবেই সমাপ্ত করেছে। এজন্য সরকারের প্রশাসনিক সহযোগিতা এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংযমি মনোভাব জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। গত ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিএনপি দেশব্যাপী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। আশা করা হয়েছিল, আগের কর্মসূচির মত এবারও কোনরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সমাপ্ত হবে। সারা দেশে তাই হয়েছে শুধু চট্টগ্রাম ছাড়া। চট্টগ্রামে যাই হয়েছে তা কারো কাম্য ছিল না। খবরে প্রকাশ, কাজীর দেউড়ি এলাকায় নির্ধারিত ব্যারিকেড স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে একটি মিছিল থেকে। এসময় পুলিশ হামলাকারীদের ধাওয়া করতে গিয়ে পুরো এলাকা রণাঙ্গনে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা এসময় কাজীর দেউড়ীর পুলিশ বক্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করেন বলে সংবাদপত্রে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপানো হয়। এঘটনা দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলেছে নিঃসন্দেহে। ঘটনার পর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী গ্রেফতারসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা মনে করি, পুলিশের ব্যারিকেডে যারা আক্রমণ করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে দলের কর্মী হতে পারে না। তারা বরং বিরোধী দলের আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বিএনপির উচিৎ দলে বিশৃঙ্খলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। না হয় সামনের কর্মসূচিগুলোতে এধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটানোর অপপ্রয়াস চালানো হতে পারে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দেখা যায় শীতকাল এবং ভোটের মৌসুম এলেই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। তাই এবার শীতে রাজনৈতিক উত্তাপ একটু বেশি। আগামীতে এ উত্তাপ যে আরও বাড়বে এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। যদিও নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির অবস্থান দুই মেরুতে।
সরকারি দলের নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নেতাদের এই মাঠ গরম করা বক্তৃতা-বিবৃতিতে কর্মীদের মধ্যেও নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সেই প্রতিক্রিয়া কথায় সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা হয় না। কিন্তু সেটি যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং এক দলের কর্মীরা আরেক দলের কর্মীদের ওপর হামলা চালান, তখনই মহা-উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি ধারাবাহিক বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগও তাদের সম্মেলনসহ জেলা ও বিভাগে জনসভা করে আসছে। রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মর্সূচির সময় তারাও নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে বিএনপি ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশ সম্পন্ন করার পর সফলভাবে অবস্থান কর্মসূচিও শেষ করেছে। কিন্তু চট্টগ্রামে যা ঘটেছে তাতে পুলিশের আত্মরক্ষার বিষয়টি অপেক্ষা করার কোন কারণ নেই। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও উভয়পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়াও স্বাভাবিক। এঘটনায় পুলিশের দাবি তাদের ২০জন সদস্য আহত হয়েছে, এরমধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। আমরা মনে করি, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের কর্মসূচি ও পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানাতে পারে। কিন্তু এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপর হামলা, একে অন্যকে দেখে নেওয়া এবং দেখিয়ে দেওয়ার হাকডাক শান্তিকামী মানুষকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। দেশ যখন বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে সংকটের মুখে, তখন কোনো পক্ষেরই এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজপথে ফয়সালা করা কিংবা রাজপথ দখল করার হুমকিধমকি কোনোভাবে কাম্য নয়। আমরা আশা করি, চট্টগ্রামে যা ঘটেছে, তার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেইদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক কারণে ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন কাউকেও পুলিশী হয়রানী করাও কাম্য নয়। দীর্ঘ একদশক প্রায় রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের কারণে দেশের যে অদম্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা যেন কোনভাবেই বিঘœ না ঘটে সেই দিকে মনোযোগ দিবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো-এমন প্রত্যাশা সকলের।