সংকট উত্তরনে অধিকতর সতর্কতার তাগিদ দিলেন মেয়র পদপ্রার্থী রেজাউল করিম

72

চলমান করোনা সংকট ও আসন্ন সম্ভাব্য সংকট নিয়ন্ত্রনে নগরবাসীকে আরো অধিকতর সতর্কতার তাগিদ দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনা একটি অতি সংক্রমনশীল ও সম্পূর্ণ নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভাইরাস। মুলত মানব দেহকে আশ্রয় করেই এ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। সংক্রমিত ব্যাক্তির স্পর্শে এটি ধাতব পদার্থের উপর সংক্রমিত হয় এ ভাইরাস, এবং অনেক সময়কাল ধরে বেঁচে থাকতে পারে। সংক্রমিত পদার্থের সংস্পর্শেও মানুষের শরীরে প্রবাহিত হতে পারে এ ভাইরাস। যেহেতু এটি বাতাসে টিকে থাকতে পারে না, পারস্পরিক দুরত্ব ও সংস্পর্শ এড়িয়ে জীবন যাপনের মাধ্যমে এর সংক্রমন থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। সাবান পানিতে এ ভাইরাস টিকে থাকতে পারেনা বলে ধাতব পদার্থের সংস্পর্শ জনিত সংক্রমন রোধ করতে বারবার সাবান পানি দিয়ে ভালমতো হাত ধোয়ার কৌশল বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। সে হিসেবে সংক্রমনের শুরুতেই এ ভাইরাসকে রোধ করার সুযোগ আমাদের ছিল। সময়ের আগে চলা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সংক্রমন রোধে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেন। চীনের উহানে এ ভাইরাসের উৎপত্তির সাথে সাথেই চীনা নাগরিকদের নতুন করে এদেশে প্রবেশ নিয়ন্ত্রনে বিমান বন্দর গুলোতে রেট এলার্ট জারি করা হয়। এরাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্রমে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও করোনা সংক্রমন ধরা পরার পর প্রবাসীসহ সকল বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের ১৪ দিন সঙ্গ নিরোধ বা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু করা হয়। চালু করা হয় আইসোলেশন সেন্টার, তৎপরতা শুরু করা হয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম, টেস্টিং কীট সংগ্রহের। বিশেষায়িত করোনা টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হয়। জনসাধারকে ভীর এড়িয়ে চলতে ও সাবান পানিকে বারবার ধুয়ে নিয়ে দুদহাত জীবানুমুক্ত রাখতে বিজ্ঞাপন, প্রচারপত্র ইত্যাদি মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়ে এসেছে সরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের অনেকেই তা অনুসরণ করিনি, তাই শুরুতেই করোনার ভয়াল সংক্রমনকে নিঃশেষিত করার সুযোগকে হেলায় নষ্ট করেছি বলা যায়। সরকারীভাবে ব্যাপক সতর্কতামূলক প্রচানার পরও আমাদের অজ্ঞতা, অসচেতনতা পরিলক্ষিত হওয়ায় সম্ভাব্য সস্পর্শ ও সংক্রমন ঠেকাতে সরকার পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্রসমূহ বন্ধ করে দেয়।
সরকারের নির্দেশনাকে উপেক্ষা কিংবা নিজেদের অজান্তে অথবা অজ্ঞতায় বিদেশ কিংবা বিমান হতে সংক্রমিত হয়ে আমাদের কেউ কেউ পরিবার, প্রতিবেশী ও গনসমাগমে গিয়ে সমাজে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছি। সমাজে এর সংক্রমনের ন্যুনতম সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হওয়ার আগেই গণজমায়েত হয় এমন সব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মকাÐ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর অফিস, আদালত, গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ সীমিত করে দিয়ে সবাইকে যথাসম্ভব ঘরে থাকার অনুরোধ জানানো হয়। যাতায়াত ও দৈনন্দিন কর্মকান্ড সীমিত করার ফলে উপার্জনহীন হয়ে পরা তুলনামূলক কম স্বচ্ছল মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহন করে সরকার। আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি সতর্কতামূলক প্রচারনা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে সংকট মোচনে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবেও অনেকে এ কার্যক্রমে অংশ নেয়, যা অত্যন্ত প্রসংশনীয়। স্বতঃপ্রনাদিত হয়ে রাস্তাঘাট, পাড়া মহল্লাকে জীবানুমুক্ত রাখতে জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি ছিটিয়ে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালিয়ে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করেছি।
আমরা দেখছি কিভাবে পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার দিনরাত পরিশ্রম করে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পারস্পরিক দুরত্ব নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগে কাজ করছেন। আমরা হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। বলা বাহুল্য, এমন দুর্দিনে অনেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে নিজেদের সর্বনাশও ডেকেছেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গুজবের আশ্রয় নিয়েছেন, আতঙ্ক ছড়িয়েছেন। কিন্তু ভাবেনি, রোগ বালাই নির্দিষ্ট দল গোষ্ঠী দেখে আক্রমন করেনা। এর ক্ষতি সকলকেই বইতে হয়। ফলে অনেক সাধারন রোগীও বিভিন্নভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হাসপাতালে রোগী ভর্তিতে অনীহা, ল্যাব সমূহে রোগ নির্ণয় কাজে অনীহা, অনেক ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ করে দেয়ার মত গুজবের নেতিবাচক প্রভাব আমরা দেখেছি। আমাদেরকে অবশ্যই কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করতেই হবে হৃদয়বান অনেক ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ঝুঁকির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে বীরোচিৎ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। কোন সীমাবদ্ধতাই তাদেরকে সেবাকর্ম থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ঝুঁকি মাথায় নিয়েও তারা করালগ্রাসী করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও কোথাও একটা ঘাটতি আমাদের ছিলই, যার ফলে দেশে করোনা আক্রান্তের প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, প্রশাসনসহ করোনা প্রতিরোধে কাজ করা সংশ্লিষ্ট সকল মহলের ঐকান্তিকতায় ঘাটতি নেই স্বীকার করেই বলতে হয়, মানুষ পুরোপুরিভাবে সরকারি নির্দেশনা মানেনি, সচেতন হননি, সতর্ক থাকেননি। নগরীর সকল সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী তথা জন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দফায় দফায় আরো কাউন্সেলিং প্রয়োজন। এতটুকুও সময় নষ্ট না করেই আমাদেরকে আরো অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের কাছে আরো কিছু বিষয় সবিশেষ লক্ষ্যনীয়, প্রাকৃতিকভাবেই এ সময়টাতে মশার প্রজনন ও উৎপাত বেড়ে যায়। সামনে কাল বৈশাখীসহ বৃষ্টির সময় আসন্ন। জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিশ মশার প্রজনন ও ডেঙ্গু সংক্রমনের আশংকাকে মাথায় রেখে এখনি কর্মকান্ড শুরু করা প্রয়োজন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই দেশের সিটি মেয়রদের সতর্ক করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। মশকের প্রজনন ক্ষেত্র সমূহ ধ্বংস করতে হবে এখনই। সমস্ত পাড়া মহল্লকে আবর্জনামুক্ত করতে হবে। নালা, নর্দমা ও খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না করলে জমে থাকা পানিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাপক মশকের বংশ বিস্তার হবে। এ জায়গাতেই আমরা খুব বেশী চিন্তিত। নগরীর প্রধানতম সকল খাল ও নালা এখন বাঁধ দেওয়া অবস্থায়। নগরীর মানুষের ব্যবহৃত পানি এখানে জমে রয়েছে, তার উপর সচেতনতার অভাবে উৎক্ষিপ্ত বর্জ্য তো রয়েছেই। যে কোন মূল্যেই এসব আবর্জনা অপসারন করতে হবে। নালা নর্দমা খালের পানি জমে থাকতে দেয়া যাবেনা।
আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করছি, লক্ষ কোটি মশার জন্ম ও উৎপাত নগরীর মানুষের ঘরে থাকাও কঠিন করে তুলেছে। ঘরে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু আর বাইরে করোনার সতর্কতা এখন জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা হয়ে দাড়িয়েছে। এর থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ দিতে এ মুহুর্তে কার্যকর পিরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সাফল্য মোটামোটি সন্তোষজনই বলা যায়। কোন একটু সুযোগে অসাধুরা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে সেদিকে সদা সজাগ দৃষ্টি কাম্য। তাই আবারো বলব, এতটুকুও সময় নষ্ট না করে এখনি সমম্বিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজে নামতে হবে। সময়োচিৎ পরিকল্পনা, নাগরিক সচেতনতা, যথাযথ সতর্কতায় সমূহ সংকট সহসাই কেটে যাবে এ প্রত্যাশা রাখি। আরো সতর্ক হোন, সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন। সাময়িক কষ্ট ও ধর্য্য স্বীকার করে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করুন। যথাসম্ভব যার যার ঘরে থাকুন, মুক্ত পরিবেশে নিঃশ্বাস গ্রহনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। বিজ্ঞপ্তি