শোকসভা যখন অঘোষিত ‘শো-ডাউন’

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তোড়জোড় শুরুর পরপরই দলীয় গ্রুপিং-কোন্দল বাড়ার আভাস মিলেছে। গতকাল বিকালে অনুষ্ঠিত আলকরণ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের নাগরিক শোকসভাতেই এমন আভাস মিলেছে। এ সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা উপস্থিত থাকলেও সেখানে দেখা মিলেনি অন্য পক্ষগুলোর। এমনকি আমন্ত্রিত অতিথি থাকার পরেও নাছির বিরোধী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই যাননি।
তবে নগর আওয়ামী লীগের বড় একটি পক্ষকে অনুষ্ঠানে অতিথি করা না হলেও বড় ধরনের শোডাউন দিয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারীরা। আর এ প্রক্রিয়ায় নাছিরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের শোকসভাকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা। দুপুরের পর থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের সভাস্থল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘প্রয়াত কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের শোকসভার আদলে মূলত আওয়ামী লীগের একটি পক্ষকে দূরে রেখে বড় ধরনের শোডাউন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্লোগানে স্লোগানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তাই প্রমাণ করেছে। তবে সম্মেলন হওয়া নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির প্রত্যাশায় অনেকেই সেখানে গেছেন। কারণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু ভাই এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।উনাকে এ সভায় আমন্ত্রণ জানানোর পেছনেও কারণ আছে।’
জানা যায়, তারেক সোলেমান সেলিম নাগরিক শোকসভা কমিটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও জামশেদুল আলম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করা হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহরুল আলম দোভাষ, চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু। কিন্তু সভায় এম এ সালাম, শেখ আতাউর রহমান, আমিনুল ইসলাম, রেজাউল করিম চৌধুরী, জহরুল আলম দোভাষ, খোরশেদ আলম সুজন, আবদুচ ছালাম উপস্থিত ছিলেন না। তবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন।
এদিকে শোকসভার অনুষ্ঠানে নাছিরবিরোধী হিসেবে পরিচিত নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা অনুপস্থিত থাকলেও সভাস্থলে ঘুরপাক করতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশী নাছিরবিরোধী কয়েকজন নেতাকে। কেউ কেউ অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ব্যানার পোস্টার দিলেও সভায় দেখা যায়নি। তবে নাছির অনুসারী পদপ্রত্যাশী নেতাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা গেছে। অনেকেই এ সভাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের ‘মহড়া’ হিসেবেই দেখছেন।
সভাস্থলের বাইরে ও কাজির দেউড়ি সড়কে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতার ব্যানার ফেস্টুন চোখে পড়ে। এরমধ্যে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক পরিচয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন আজিজুর রহমান আজিজ। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছবিও জুড়ে দেয়া হয়েছে। আবার লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলালের লাগানো ব্যানার-ফেস্টুনে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের কোন নেতার ছবি দেননি। একইভাবে আ জ ম নাছিরের ছবি জুড়ে ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন সরকারি কমার্স কলেজের সাবেক এজিএস মো. মাসুদ খান। তাঁর প্রত্যেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুকে স্বাগত জানিয়ে এসব ব্যানার-ফেস্টুন করেছেন।