শীতের বিদায় শীতল হাওয়ায়

104

মধ্য মাঘে হাঁড়কাপানো শীতের বদলে উষ্ণ হাওয়া অনুভূত হলেও শেষদিকে শীতল হাওয়ার আয়োজন থাকার খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ওই শীতল হাওয়াই হবে চলতি শীত মৌসুমের শেষ শৈত্যপ্রবাহ। তবে মাত্রায় মৃদু হওয়ার কারণে দেশজুড়ে তা অনভূত নাও হতে পারে। এবার শীতের আগমন থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে তার চরিত্র বদল ও দৈর্ঘ্য নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠতেই পারে। কিন্তু বিদায়বেলা নিয়ে কোনও ছলচাতুরির আশ্রয় না নেয়ার আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, স্বল্পমেয়াদী এই শৈত্যপ্রবাহের শীতল হাওয়ায় ভেসে মাঘ শেষ হওয়ার আগেই এ বছরের শীতকাল বিদায় নেবে। তারপর পারদ চড়তে থাকবে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন গতকাল সোমবার পূর্বদেশকে বলেন, ‘দুয়েক দিনের মধ্যেই তাপমাত্রা কমে গিয়ে একটা শৈত্যপ্রবাহের আলামত দেখা যাচ্ছে। যা তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাত্রাগত দিক থেকে এটি মৃদু হলেও দেশের কিছু এলাকায় তা মাঝারি মাত্রারও রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে, রাজশাহী ও সিলেট অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি কমতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ শেষে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা অতটা অসহনীয় পর্যায়ে না গেলেও মার্চে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। এটি মৃদু মাত্রা থেকে কোথাও মাঝারি এবং উত্তরাঞ্চলে তীব্র আকার ধারণ করে। দেশের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে এটি কমবেশি মাসব্যাপী অব্যাহত থাকার পর গত সপ্তাহে বিদায় নেয়। এর মাঝেই গত ২ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় চলতি শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে দশের নিচে নামেনি তাপমাত্রা। গতকাল সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে রংপুরের রাজারহাটে। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩১ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের অর্থাৎ গত রবিবার দেশে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুন্ডে১৩ ডিগ্রি ও ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, গতকাল সোমবার অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সন্ধ্যা ছয়টায় প্রকাশিত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশের রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। তার পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা বা দু’দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে।
বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় পৌষ-মাঘ মাসকে শীতকাল ধরা হয়। আর পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট মেনে এবার পৌষ সংক্রান্তির দিন থেকেই উত্তরাঞ্চলসহ দেশজুড়ে তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে নেমে শীতের আমেজ হাজির করেছিল। তবে, চলতি শীত মৌসুমের শুরু থেকেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে চট্টগ্রামেই। ফলে, এ অঞ্চলের বাসিন্দারা গোটা পৌষজুড়ে তো বটেই, মাঘের বিদায়ী পক্ষকালেও হাঁড়কাপানো শীতের কামড় অনুভব করেননি। বিশেষ করে, শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে শীত এখন পর্যন্ত চেনারূপেই ধরা দেয়নি। গতকাল সোমবার ছিল মাঘের প্রথম পক্ষের শেষদিন। সন্ধ্যার পর বাইরে বাতাসে হালকা শীতলতার অনুভূতি থাকলেও ঘরের ভেতর অনেকে বৈদ্যুতিক পাখা চালাতে রীতিমত বাধ্য হয়েছে। মধ্য মাঘে বাঘ পালানো শীতের বদলে সর্বশেষ গত দুদিনে অনেকের উষ্ণতায় ঘাম ঝরার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা নেমে এসেছিল। ৫০ বছরের মধ্যে এটিই ছিল দেশের সবচেয়ে কম তাপমাত্রার রেকর্ড। এবারও ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে জানুয়ারি মাসে শীতের ধরন একইরকম হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিলেও ঠিক ততটা মিলেনি। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, ভারত ও বাংলাদেশের তাপমাত্রা থাকে কাছাকাছি। ভারত উপমহাদেশে দেখা গেছে, বিগত ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় ১৩ বছরেই তাপমাত্রা ছিল রেকর্ড পরিমাণ। ২০১৫ সালে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে তাপমাত্রা বেশি ছিল। দেশে শীতকালে সূর্য থাকে দক্ষিণ গোলার্ধে। ২২ ডিসেম্বর হচ্ছে সবচেয়ে ছোট দিন। এই সময় সূর্য সবচেয়ে দূরে থাকে। এ কারণে ডিসেম্বরে তাপমাত্রা কম থাকে। ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে। এভাবে জানুয়ারি পেরিয়ে ফেব্রæয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মার্চে গিয়ে তা অনেক বেড়ে যায়। এটাকে বলা হয়, জেট উইন। ইউরোপে সূর্য অনেক দূরে থাকে। রাতের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। এ সময় একধরনের বাতাস আসে, ওই বাতাস কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই চ্যানেল দিয়ে শীতের হিমেল হাওয়া উত্তরাঞ্চল চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, রংপুর হয়ে ধীরে ধীরে দেশজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে।