শিল্পে গ্যাস রেশনিং, চট্টগ্রামে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া কি ?

20

ফারুক আবদুল্লাহ

চট্টগ্রামের শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট দীর্ঘদিনের। এবার নতুন করে চেপে বসেছে গ্যাস রেশনিং। এর ফলে তৈরি পোশাক শিল্পসহ রপ্তানিমুখী শিল্প খাত চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যার প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে গিয়ে পড়বে।
পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চার ঘণ্টা করে শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ রাখার ফলে সঠিক সময়ে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে করে কারখানা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়বে। যার প্রভাব হবে বহুমাত্রিক। সেই সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদে উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রথমবারের মতো শিল্প-কারখানায় চার ঘণ্টা করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)। গত সোমবার পেট্রোবাংলা থেকে এ সংক্রান্ত বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) থেকে আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এই ১৫ দিন শিল্পে নির্ধারিত সময়ে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখতে শিল্পমালিকদের ‘বিশেষভাবে অনুরোধ’ করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার নির্দেশনা ঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এর আগে সিএনজি স্টেশন, সার কারখানা এবং দোকানপাটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ রেশনিং করা হলেও শিল্প খাতে এই প্রথম এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলো। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, করোনাকালীন স্থগিত কিংবা বাতিলকৃত রপ্তানি আদেশসমূহ সহ নতুন নতুন বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আদেশ বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে চলমান রয়েছে। যা ক্রেতার নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জাহাজীকরণের বাধ্যবাধকতার কারণে ঈদ-উল-ফিতরের পূর্বে দ্রæত উৎপাদন কার্যক্রম সম্পন্নে এ শিল্প সংশ্লিষ্ট সকলেই ব্যস্ত রয়েছেন। এ অবস্থায় পেট্রোবাংলার ১৫ দিনের জন্য দৈনিক ৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পখাতে উৎপাদন কার্যক্রম চরমভাবে বিঘিœত হয়ে রপ্তানি ব্যাহত হবে। এর ফলে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের পূর্বে ও পরবর্তী মাসেও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ সহ এ সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে।
তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত পোশাক শিল্পের বর্তমানে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য চরম আত্মঘাতি হবে। এর ফলে বিদেশি ক্রেতাদের নিকট বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার স্বার্থে শিল্প শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে দাবি জানান তিনি।
এছাড়া উদ্যোক্তারা জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত। এই খাতের কারখানাগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। যেমন স্পিনিং মিলগুলো সুতা তৈরি করে, তা দিয়ে কাপড় তৈরি হয়, সেই কাপড় গার্মেন্টসে সেলাই করে রপ্তানি করা হয়। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ থাকলে তার প্রভাব পড়বে।