শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে ছুটি স্বাস্থ্য রক্ষায় শিক্ষার বিসর্জন আর নয় দুটিকে গুরুত্ব দিতে হবে

33

চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে শিক্ষাখাত। আর্থিকখাতের ক্ষতি পোষাতে গত সেপ্টেম্বরে দেশের কলকারখানা ও ব্যবসাবাণিজ্য খুলে দেয়া হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা এখনও খোলা হয়নি, বরং দীর্ঘ হচ্ছে বন্ধের সময়। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এমনকি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছর দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার কয়েকদিন পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই যে, করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ বাসস্থানে অবস্থান করা জরুরি। তারা যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এ বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। সম্প্রতি অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন ইত্যাদি উদ্যোগ সাময়িকই বলা যায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে টেকসই প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা। এ বাইরে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে-এতে কোন সন্দেহ নেই। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, আগামী কিছুদিনের মধ্যে দেশে করোনার টিকাপ্রদান শুরু হবে, তবে তা হবে ১৮ বছরের উপরে যাদের বয়স তাদের জন্য। কিন্তু শিশুদের কতদিন পর টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হবে কিংবা আদৌ আনা হবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত। কাজেই শিশু শিক্ষার্থীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, শিশুরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা, এ নিয়ে অনেক অভিভাবকই উদাসীন। এছাড়া অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শিশুদের উপদেশ দিলে তারা তা কতটা মেনে চলবে, এটাও এক প্রশ্ন। কোনো কোনো শিক্ষক স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন। কিন্তু এমন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের সংখ্যা যে খুব কম, তা বলাই বাহুল্য। স¤প্রতি বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে নতুন বই প্রদান করা হয়েছে। এসব বই পড়া শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তা তাদের জানাতে হবে। করোনা প্রতিরোধে যেসব স্বাস্থ্যবিধির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হয় সে সম্পর্কিত তথ্য যেসব শিক্ষক কম জানেন; তারা যাতে সহজে সে ঘাটতি পূরণ করে শিক্ষার্থীদের জানাতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব। করোনা পরিস্থিতির কারণে ইতোমধ্যে অনেক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। কিছুদিন পর যদি সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হয়ও, তারপরও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হতে কিছুটা দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও দীর্ঘ সময় এ ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত রাখা হলে তা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলবে কিনা, এটাও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শিশুদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে আসছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে এমন কোনো কার্যক্রম যেন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় চলমান না থাকে, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের পরামর্শে একটি কার্যকর উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। উচ্চশিক্ষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা আর কিছুদিন পরই শিক্ষা শেষে কর্মজীবনে প্রবেশের প্রত্যাশায় রয়েছেন। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্পন্ন করে পরীক্ষা নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সেক্ষেত্রেও একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আশার কথা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েকদিন আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রেব্রæয়ারিতে সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, সেইসাথে মে-জুন ও জুলাই-আগস্টে দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন। এ খবর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কিছুটা হলেও আশ্বস্থ করেছে। আমরা আশা করি, স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হবে।