শাবাশ টাইগার অভিনন্দন টিম টাইগারস

15

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান ইংল্যান্ডকে স্বাগতিক বাংলাদেশ নিজ মাঠে ৪ উইকেটে হারিয়ে এবারের টি টোয়োন্টি ম্যাচকে অবিস্মরণীয় করে রাখল বাংলাদেশ। এটি এমন এক জয় যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস সব সময়ই মনে রাখতে চাইবে। এ ম্যাচটি শুধু মাইলফলক স্পর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। টাইগার ক্রিকেটাররা জয়ের আনন্দে সেটাকে উদযাপন করেছেন। এ আনন্দ উদযাপনে শামিল হয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমগ্র দেশবাসীও। দেশবাসীকে এমন এক আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ গড়ে দেয়ার জন্য আমরা টাইগারদের জানাই ধন্যবাদ। টি টোয়োন্টিটে একক রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে টিম টাইগাররা বৃটিশ আধিপত্যে চিড় ধরাল। এজন্য টিম টাইগারকে উষ্ণ অভিনন্দন। এর আগে চট্টগ্রামের মাঠে প্রথম ওযানডে টেস্ট এর একটিমাত্র ম্যাচে বিজয় লাভ করেছিল টিম টাইগার। আমরা লক্ষ্য করে আসছি, টিম টাইগারদের চরম খারাপ অবস্থার মধ্যেও ক্রিকেটের সব পরাশক্তির বিরুদ্ধে কোনো না কোনো সংস্করণে সিরিজ জয়ের সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ দল। বাকি ছিল শুধু ইংল্যান্ড। এবার দেশের মাটিতেই ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ ঘটল, পরাস্ত হলো বিশ^সেরা দলটি। টি-টোয়েন্টির তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটিতে দারুণ জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। বিশ্বসেরাদের হারানোর গৌরবই আলাদা। এতে থাকে আনন্দের মিশেলে প্রবল আত্মবিশ্বাস। শাবাশ বাংলাদেশ। এ সিরিজটি ছিল এক কথায় দুর্দান্ত , চমৎকার নৈপুণ্য। পরপর দুটি ম্যাচে মূলত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বোলাররা শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছেন। এক্ষেত্রে তরুণ প্রতিভার সঙ্গে মিলেছে অভিজ্ঞতার মেধা। গত এক বছরের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সফররত আফগানদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে-তে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। গত বছর শবেবরাতের দিনের কথা আমাদের মনে আছে। সেদিন প্রথমবারের মতো আফ্রিকায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিজয়ী গর্জন শোনা গিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে তাদের বিপক্ষে যেকোনো সংস্করণের ক্রিকেটেই সেটি ছিল প্রথম জয়। বাংলাদেশ যে ধারাবাহিকভাবে ক্রিকেটে সমৃদ্ধ হচ্ছে তার প্রমাণ তো এসব ম্যাচই। আরেকটি সিরিজ জয়। বিশ্বসেরা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় টাইগারদের দেবে সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস। ওয়ানডে ও টেস্টের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে মেহেদি হাসান মিরাজের ওপর ভরসা রাখা যে বিফলে যায়নি এর প্রমাণ এই সিরিজ। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার পেয়েছেন মিরাজ দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমবারের মতো সিরিজে খেলতে নেমে। ৪ ওভার বল করে ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট প্রাপ্তি। ফলে তাকে ম্যাচসেরা নির্বাচিত করতে বিশেষ ভাবতে হয়নি নির্বাচকদের। সাকিব, তাসকিন ও মুস্তাফিজÑ তারাই প্রধানত টিমের শক্তিশালী স্তম্ভ। নাজমুল হোসেন শান্ত আর হাসান মাহমুদের কথাও আলাদা করে বলতে হবে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে ইংল্যান্ডের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিলেন হাসান। আবার প্রথমার্ধ্বে (প্রথম ১০ ওভারে) বোলিং করে বাটলারকে বোল্ড করার ঘটনা ছিল ম্যাচের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। নাজমুলের ৩০ বলে ৫০ করাটা টি-টোয়েন্টির ঝড়ো মেজাজের সঙ্গে খুব মানানসই। প্রথম ম্যাচে তার পারফর্মেন্সে আগেভাগে লক্ষ্য পূরণ হয়েছিল। মানে দুই ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে এক প্রান্ত আগলে রাখার কাজ ভালোভাবে করে প্রত্যাশিত রানও তুলেছেন নাজমুল, ৪৭ বলে ৪৬ রান তুলে ছিলেন অপরাজিত। এই সিরিজের ভেতর দিয়ে নাজমুল উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। তারকা হয়ে উঠলেন তিনি। তবে ক্রিকেটশক্তিকে আরও সুসংহত করা চাই। সারাদেশেই ক্রিকেট খেলার চর্চা বাড়াতে হলে নতুন মাঠও তৈরি করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দক্ষ সেরা খেলোয়াড়দের শনাক্ত করার কাজটি এগিয়ে নেওয়া চাই। তবেই আগামী দিনগুলোতে টাইগাররা দেশবাসীকে আরও বড় আনন্দের উপলক্ষ উপহার দেবে।
বাংলাদেশের এ জয়কে আমরা মহান বলতে চাই একাধিক কারণে। টি-টোয়েন্টির তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটিতে দারুণ জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। অতীত দুঃস্বপ্নকে অতিক্রম করে এবার যে জয় তারা পেয়েছে তার পেছনে কাজ করেছে টিমওয়ার্ক। সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারার পর এই ম্যাচে বাংলাদেশ একটি দলীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বোলাররা দুই ইনিংসেই ভালো বল করেছেন। ব্যাটসম্যানরা দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন। সাকিব-তামিম, মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পাশাপাশি মোস্তাফিজ, মোসাদ্দেক, মিরাজ, সাব্বির, সৌম্যর মতো তরুণরাও মাঠে নিজেদের দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করেছেন। মাঠে পারফরম করার পাশাপাশি তারা মানসিক সামর্থ্যও দেখিয়েছেন। মানসিক সামর্থ্য না থাকলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হতো, ১৯১ রানের টার্গেটও পাহাড়সম হয়ে উঠতে পারত। অতীতে ভারত ও পাকিস্তান এর চেয়ে কম রান তাড়া করেও শ্রীলংকার বিপক্ষে জয় পায়নি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং দুর্বলতাও ভাবনার কারণ ছিল। তবে এবার টিম টাইগারস সব দুর্ভাবনাকে জয় করেছে। টাইগাররা আগামীতেও দলবদ্ধ হয়ে খেলবে এটা আমাদের চাওয়া। কারণ ক্রিকেট শেষ পর্যন্ত টিম-গেম। একক পারফরমেন্স দিয়ে জয় পাওয়া কঠিন। ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্য পেতে হলে দলগতভাবে ভালো খেলতে হবে। বিষয়টি নিশ্চয়ই টাইগার ক্রিকেটাররা জানেন।