শহরমুখি জনস্রোত

24

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের ছুটি শেষে কর্মব্যস্ত শহরে ফিরতে শুরু করেছেন লোকজন। শহরমুখী মানুষের ভিড়ে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে অনেক জায়গায়। মানুষের চাপ থাকায় গণপরিবহনে ভাড়াও নেয়া হচ্ছে বাড়তি। এমনকি শহরের রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায়ও বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অনেকে বাস, ট্রেনের টিকিট না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন ট্রাকে করে। গতকাল নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে গ্রাম থেকে ফেরা মানুষের ভিড় দেখা যায়।
করোনায় দুই বছর স্বাভাবিকভাবে ঈদ উদযাপন করতে না পারলেও এ বছর ভালোভাবেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন মানুষ। এছাড়াও এবার ছুটিও মিলেছে ছয় দিনের। ছুটি শেষে গত বৃহস্পতিবার খুলেছে সরকারি সব অফিস। একদিনের অফিসের পর আবার দুই দিনের বন্ধ থাকায় প্রায় অফিসের কর্তারা ঐদিন ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে নেন। যার কারণে মূলত আজ রবিবার থেকে পুরোদমে সবগুলো সরকারি অফিসে কার্যক্রম শুরু হবে। অফিসের কাজে যোগ দিতে গতকাল সকাল থেকে শহরে ফেরা মানুষের ভিড় দেখা যায়। নগরের নতুন ব্রিজ, বহদ্দারহাট, অলংকার, হাটহাজারী বাস স্টেশন, জিইসি মোড়, দামপাড়া, সিনেমা প্যালেস, অক্সিজেন মোড়, বিআরটিসিসহ প্রায় সবক’টি বাস কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। সকালে এসব বাস স্টেশনে আসা যাত্রীরা অনেকটা নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর কথা জানালেও বিকাল থেকে আসা যাত্রীরা জানিয়েছেন দুর্ভোগের কথা। বাড়তি ভাড়া আদায় ছাড়াও কয়েকটি পয়েন্টে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়েছে শহরে ফেরা মানুষজনকে।
কক্সবাজার থেকে ফেরা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিন ঘণ্টার পথ আসতে ৭ ঘণ্টা সময় লেগেছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটে পড়তে হয়েছে। দোহাজারী, বাগিছারহাট এলাকায় দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। এবার ঈদে গ্রামে ফিরতে তেমন দুর্ভোগ পোহাতে না হলেও ফেরার সময় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।
এবার ঈদের যাত্রায় তেমন ভোগান্তি না থাকলেও ফেরার সময় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষদের পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে পিএবি সড়কের ছয় লেনের কাজ চলমান থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। বাড়তি ভাড়া দিয়েও মিলছে না বাস। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকে উঠছেন ট্রাকে। মিনি ট্রাকে করে অনেককে শহরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এমনকি শহরে ফিরে বাসায় যেতেও গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া।
চন্দনাইশ থেকে শহরে ফেরা নাজিম উদ্দিন বলেন, ৮০ টাকার ভাড়া ১৮০ টাকা দিয়ে আসতে হয়েছে। বাস সংকট সৃষ্টি করে তারা গলাকাটা ভাড়া আদায় করেছে। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি আমরা। এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাসে করে এসে আবার বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে বাসায় আসতে হয়েছে। রিকশা, সিএনজি সবখানেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অনেকে তো বাড়তি ভাড়া দিয়েও গাড়ি পাচ্ছেন না। পুরোটা অব্যবস্থাপনায় ভরপুর। প্রশাসন যদি আগে থেকে ব্যবস্থা নিতো, তাহলে যাত্রীদের এমন দুর্ভোগে পড়তে হতো না।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন, গ্রাম থেকে মানুষ শহরে ফিরছে। সবাই একসাথে ফিরার কারণে গণপরিবহনে চাপ পড়েছে। রাস্তা ভালো থাকায় তেমন ভোগান্তি হয়নি। তবে বাড়তি গাড়ির চাপে কয়েকটি পয়েন্টে যানজটে পড়তে হয়েছে।
ঈদ-পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষের তদারকি কার্যক্রম না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের তদারকি না থাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে।
পথে পথে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন চৌদ্দগ্রাম থেকে সড়কপথে ফেরা যাত্রী আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, সাধারণত চৌদ্দগ্রাম থেকে চট্টগ্রামের বাস ভাড়া ১৬০ টাকা। এখন বাস সংকটের কথা বলে তারা ২৫০ টাকা আদায় করছে। কোনো তদারকি না থাকায় এমনটা হচ্ছে।
শুধু বাস কাউন্টার নয়, রেলস্টেশনেও ছিল মানুষের ভিড়। প্রচুর মানুষ যেমন চট্টগ্রামে ফিরছেন তেমনি আবার প্রচুর মানুষ চট্টগ্রাম ছেড়েও যাচ্ছেন। ফলে গতকাল সকাল থেকে যাত্রীদের প্রচÐ ভিড় ছিল চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে।