লেবু চাষ করে স্বাাবলম্বী সরফভাটা ইউনিয়নের মো. আজিম উদ্দীন

112

পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয়, পরিবারে আনে স্বচ্ছলতা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের কাছে মাথানত করে সফলতা। এসবের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সরফভাটা ইউনিয়নের মো. আজিম উদ্দীন (২১)। পড়াশোনা করে চন্দ্রঘোনা মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসার ফাজিল (স্নাতক) ১ম বর্ষে। মা-বাবা, ৪ ভাই, ৩ বোন নিয়ে অভাব-অনটনের সংসার আজিমের। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারের চাহিদা মেটানো কোনো রকমের সম্ভব হচ্ছিলনা অসুস্থ পিতা ফজল আহমদের। পরিবারের মেজ ছেলে আজিম যৎসামান্য সংসারে সহযোগিতা করেন। অন্য ভাই ও বোনরা পড়াশোনা করেন। অভাব যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। অভাব-অনটনের সংসার আর স্ট্রোক করে প্যারালাইজ্ড হয়ে শয্যাসঙ্গী বাবার জন্য আজিমের মনে দাগ কাটে। সংসারে কিভাবে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা যায় এ চিন্তা নিয়ে সব সময় চলেন শিক্ষার্থী আজিম। চাষাবাদ করে সংসার চালানো বাবার কথা মতো ক্ষুদ্র পাহাড়ী ভূমিতে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন লেবু বাগান। পাশাপাশি পেঁপে বাগান ও মাছ চাষ শুরু করে। ৩ বছর আগে আজিমের পরিবারে অভাব অনটন এখন আর নেই। স্বচ্ছলতা ফিরে আসার আজিমের আয়ের রহস্য জানতে সম্প্রতি ছুটে যায় উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দূর্গম এলাকা সরফভাটা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড, জঙ্গল সরফভাটা বানিয়াখোলা এলাকায়। পাহাড়ী এলাকায় ঢুকতেই চোখে পড়ে সারি সারি লেবু গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে লেবু। বাগানে ঘুরার সময় কথা হয় আজিমের সাথে। তিনি বলেন, ৩ বছর আগে ১ একর জমিতে ৫০ টি চারা রোপণ করে জীবন সংগ্রামে নেমে পড়ি। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তার। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সব গাছে লেবু ধরা শুরু করে। প্রথম ধাপেই লেবু বিক্রি করেন তিন হাজার টাকার। এতে আজিমের উৎসাহ বেড়ে যায়। বাড়তি জমি নেওয়ার পরিকল্পনা নেন। এখন আজিম তিন একর জমিতে লেবু চাষ করে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করছেন। আজিমের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে এখন গ্রামের যুবক আবদুল আলিম, আবদুর কাদের লেবু চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। তার বাগানে কৃষি কর্মকর্তা ছাড়াও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তা দেখতে আসেন। কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়াও বই পড়ে লেবু বাগানে পরিচর্যা করেন তিনি। আজিম আরো বলেন, সপ্তাহের কয়েকবার বাগান থেকে লেবু তুলি। বাগানের উৎপাদিত লেবু বাজারেও নিতে হয় না। এলাকা এবং শহর থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা বাগান থেকেই লেবু কিনে নিয়ে যান। যার ফলে লেবু বিক্রির জন্য চিন্তা করতে হয় না, বাজারে নেওয়ার পরিশ্রমও হয় না। এতে করে আমার পরিবহন খরচ বেঁচে যায়। এ ছাড়া ১২ মাস লেবু বিক্রির পাশাপাশি লেবুর চারা বিক্রি করেও আলাদা টাকা পাচ্ছি। লেবু বাগানে বার বার পানি সেচ দিলে ফলন ভাল হয়। বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকলে সেচ সুবিধা ও বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা যেত। জানতে চাইলে উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদ জানান, এলাকার মাটি লেবু চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে লেবু চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে লেবু চাষের জন্য উৎসাহ প্রদান করে আসছি। এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য সাকের সিকদার জানান, আজিম আমাদের এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য আইডল। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের পায়ে দাঁড়াতে মাছ চাষ, লেবু বাগান আর সবজি চাষ করেছে। পরিবারের দারিদ্রতা ঘুচাতে তার এ উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে জানান, আজিমের পুকুরের মাছ সহজে বড় হয়।
আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় তিনি আগের তুলনায় আরও ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। আমি প্রায় সময় তার পুকুরে গিয়ে তাকে মাছ চাষাবাদে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছি। মাছ চাষ ও লেবু বাগানে তার এ সফলতা অন্যদের জন্য অনূকরণীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি লেবু বাগান আর মাছ চাষ করে যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় আজিমই তার উদাহারণ। তার মতো করে সবাই যদি নিজের অলস সময়কে কাজে লাগায় তবে এলাকায় বেকারত্ব কমে আসবে। তার এ কাজে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।