‘রেড জোন’ ঘোষণা নগরীর ৮ এলাকা

118

করোনা ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের কারণে নগরীর তিন থানার অন্তত আটটি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন ধরনের কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ রেড জোনভুক্ত এলাকাগুলোতে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি তদারকি করছে। চকবাজার থানার জয়নগর, হালিশহর থানার রামপুর ওয়ার্ডের অন্তত পাঁচটি আবাসিক এলাকা এবং পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া ওয়ার্ডের দুইটি এলাকা রেড জোনের আওতায় পড়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে এসব এলাকায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। এলাকার মূল গেটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে রেড জোন লেখা সম্বলিত ব্যানার। গেটে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশের একেকটি দল। এছাড়া স্থানীয় কাউন্সিলররা পুলিশকে সহযোগিতা করছেন।
এ বিষয়ে নগর পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের সবুজবাগ, নয়াবাজার, বৌবাজার, ঈদগাহ এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এসব এলাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে মূল ফটক বন্ধ করে দিয়েছি। তবে সীমিত আকারে বিকল্পভাবে চলাচলে ব্যবস্থা করেছি, যাতে জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারে। এছাড়া স্থানীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে আমরা এলাকায় এলাকায় মাইকিং করছি। সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন এবং কেউ যাতে বাসা থেকে বের না হন, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক করছি।’
এ বিষয়ে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান ইমাম জানান, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে যদিও রেড জোন বলা হচ্ছে, কিন্তু আমরা বলছি মানুষের চলাচল সীমিত করা এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সরাইপাড়া ওয়ার্ডের মৌসুমি আবাসিক এলাকা এবং চালবাজারের একটি গলিকে করোনা উচ্চ সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে রেড জোন ঘোষণার সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। সেটা আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছি না। আপাতত মানুষের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যাতে এলাকার লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হয়। এছাড়াও এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা আলাদা গেট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার জানিয়েছেন, জয়নগর আবাসিক এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে এর দুটি ফটকের মধ্যে একটিতে স্থায়ীভাবে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি গেট দিয়েও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র যারা জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হচ্ছেন তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ওই এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক জানান, বাসিন্দাদের প্রতি এক লাখে ৬০ জনের বেশি আক্রান্ত হিসেবে জয়নগরকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা পুলিশি কর্মকাÐের পাশাপাশি ওই এলাকার মহল্লা কমিটিগুলোতে আমাদের সঙ্গে নিয়েছি। বিধিনিষেধ মানার জন্য মহল্লা কমিটিগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে কারা ঘর থেকে বের হবে সেটা মহল্লা কমিটিকে জানাবে। মহল্লা কমিটি সেটা পুলিশকে জানিয়ে তাদের বের করার ব্যবস্থা করবে।
এ ব্যাপারে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে বাকি সব জায়গা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাস্তবায়নের বিষয়টি পুলিশ দেখছে।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান জানান, রেড জোন এটা নতুন বিষয় নয়। এটি কখন ঘোষণা করা হবে, হবে না- তা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের বিষয়। রেড জোন হওয়ার সুযোগ নেই তা বলবো না। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা অফিসিয়াল নির্দেশনা পাইনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৪৫৯ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ৩৩৮ জন এবং উপজেলায় মারা গেছেন ১২১ জন। এ পর্যন্ত নগরের কোতোয়ালীতে ৩৪ জন, চান্দগাঁওয়ে ২৫ জন, পাঁচলাইশে ২৪ জন, চকবাজারে ১৮ জন, খুলশীতে ১৭ জন, বন্দর এলাকায় ১০ জন, ডবলমুরিংয়ে ৬ জন, বাকলিয়ায় ৭ জন, বায়েজিদে ৯ জন, আকবর শাহ এলাকায় ১১ জন, পতেঙ্গায় ৬ জন, সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় ২ জন, মোহরায় ৩ জন, লালখান বাজারে ২ জন, মাদারবাড়িতে ৪ জন, কদমতলীতে একজন, আগ্রাবাদ এলাকায় ১২ জন, পাহাড়তলীতে ১৪ জন, ইপিজেড এলাকায় একজন, সদরঘাটে ৬ জন মারা গেছেন। এছাড়া এনায়েত বাজারে ২ জন, দামপাড়ায় ১২ জন, ঈদগাঁয়ে ৩ জন, বউবাজার এলাকায় একজন, মোগলটুলীতে একজন, মুরাদপুরে একজন, রাহাত্তারপুল এলাকায় ৪ জন, ফিরোজশাহ কলোনিতে ৩ জন, আসকারদিঘি পাড় এলাকায় ২ জন, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে ৩ জন, কাট্টলীত ৩ জন, ষোলশহর ২ নং গেট এলাকায় ২ জন, বিশ্ব কলোনিতে একজন, দেওয়ানবাজারে একজন, বড়পোলে একজন, মনসুরাবাদে একজন, রেয়াজউদ্দিন বাজারে ২ জন, হিলভিউতে একজন, চন্দনপুরায় একজন, দেওয়ানহাটে ২ জন, ব্যাটারি গলিতে একজন, কালুরঘাটে একজন এবং কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় একজন মারা গেছেন। প্রতিবেদনে নগরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের এলাকা হিসেবে ৫৫টি স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে হালিশহরে সর্বোচ্চ ৩৫ জন রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২ জুন নগরের ১২ থানাকে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট বা রেড জোন হিসেবে শনাক্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ এর উপরে শনাক্ত হওয়ায় এসব থানাকে ওইসময় রেড জোন হিসেবে শনাক্ত করা হয়। প্রথম দিকে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলীতে রেড জোনে কড়াকড়ি আরোপ করলেও অন্যগুলোতে তা করতে হয়নি। এবারের লকডাউনে তেমন কড়াকড়ি না থাকায় মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি রয়েছে। এক লাখের বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ৬০ জনের বেশি হওয়ায় নগরীর উল্লেখিত এলাকাকে উচ্চ সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে সিএমপি।