রুমে ঢুকে প্রকল্প পরিচালককে মারধর

34

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. গোলাম ইয়াজদানীর রুমে ঢুকে তাকে মারধার ও রুমে ভাঙচুর করেছে একদল ঠিকাদার। আক্রান্ত এই প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, কাজ না দেওয়ায় একদল ঠিকাদার তার ওপর এই হামলা চালিয়েছে। গতকাল রবিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নগরের টাইগারপাসস্থ চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রকল্প পরিচালকের ৪১০ নং কক্ষে এই হামলা হয়।
এ ঘটনায় সংস্থাটির নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে নগরীর খুলশি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মো. কামাল উদ্দিন পূর্বদেশকে জানান, ‘থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি ধরার প্রক্রিয়া চলছে।’
অন্যদিকে প্রকৌশলীকে হামলার এ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)।
চসিকের মামলায় অভিযুক্তরা হলেন এস. জে ট্রেডার্সের মালিক সাহাব উদ্দিন, শাহ আমানত ট্রেডার্সের কংকন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ, মেসার্স খান কর্পোরেশনের হাবিব উল্ল্যাহ খান, নাজিম এন্ড বাদার্সের নাজিম, মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের ফিরোজ, অজ্ঞাত ঠিকানার ফরহাদ, ইফতেখার এন্ড ট্রেডার্সের ইউসুফ ও জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিষ বাবু।
জানা গেছে, চসিকের আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রকল্পে গত ডিসেম্বরে ২২০ কোটি টাকার ৩৭টি কাজের দরপত্র দেওয়া হয়। ইজিপি পদ্ধতিতে দেওয়া দরপত্রে চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে তিনজন ঠিকাদার পান ৩৪টি কাজ। এরমধ্যে- ঠিকাদার রোকন উদ্দিনের ইকবাল ব্রাদার্স ২২টি, মো. আলাউদ্দিন মোল্লার দি কনস্ট্রাকশন ট্রেড আটটি এবং কাশেম কনস্ট্রাকশন চারটি কাজ পায়। এর বাইরে তিনটি কাজ পায় কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করেছে অভিযুক্ত ঠিকাদাররা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল নগরের আন্দরকিল্লায় পুরোনো নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভা ছিল। সভা শেষে বিকাল পৌনে ৪টায় টাইগারপাসে অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে নিজের দপ্তরে আসেন প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কার্যালয়ে বসার পরপরই অনুমতি ছাড়া প্রায় ২০-২৫ জন ঠিকাদার তার কক্ষে ঢুকে পড়েন। কথা বলার এক পর্যায়ে অতর্কিতভাবে তার ওপর হামলে পড়েন ঠিকাদাররা। এ সময় তারা উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। অফিস সহকারী তিলক দে তাকে রক্ষা করতে গেলে তিনিও মারধরের শিকার হন। প্রায় ১০ মিনিটের মতো মারধরের পর হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যান। প্রকল্পের কাজ না পাওয়া ঠিকাদাররা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন গোলাম ইয়াজদানী।
ওই প্রকৌশলী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপ‚র্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেওয়া আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পরিচালক হিসেবে গত বছরের ১৪ আগস্ট তাকে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ ঘটনায় চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রকল্প পরিচালককে মারধর করেছে, চিল্লাচিল্লি করেছে। টিভি, গøাস ভেঙেছে। আমরা অবশ্যই অ্যাকশনে যাচ্ছি। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে কারা ছিলেন। ছবি বের করছি। যে ছেলেটার নেতৃত্বে এসেছে তার নাম সাহাব উদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছতার মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। এরা হয়তো মনে করেছে বিভিন্নভাবে কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। আমি আগেও বলেছি স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে কাজ করা হবে। পিডি ভয়ভীতিতে মাথানত করেন না। ওরা হয়তো নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কাজ পাননি। কেউ যদি ক্ষুব্ধ হয়, অভিযোগটা আমার কাছে আনতে পারতো। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যদি কাজ না পান, সেখানে পিডি কাজ দিতে পারেন না। ইজিবিতে লটারির কোনো সিস্টেম নেই। নিয়ম অনুসরণ করে যদি কেউ কাজ পেয়ে থাকেন, তাহলে করার কি আছে। কারচুপি করার কোনো সুযোগও নেই। মামার বাড়ির আবদার না যে, আমাকে কাজ দিতে হবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটছে কি-না সেটাই প্রশ্ন। জড়িতরা চসিকের ঠিকাদার হলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। সব বিভাগে চিঠি দেব যাতে কাজ না পান। একজন অফিসারকে নিজের চেম্বারে এসে মারধর করা হয়েছে। এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’