রাত পোহালেই ভোট

45

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা গতরাতে শেষ হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী ও ভোটার সবাই ভোটের অপেক্ষায়। আগামীকাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাঙ্খিত নির্বাচন। নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী, ৫৭জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১৭২জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মিলিয়ে ২৩৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রচারণা শেষ করেই ভোটের কৌশল নির্ধারণেই এখন দিন পার করছেন প্রার্থীরা।
এদিকে আজকেই ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। ভোট কেন্দ্রে গতকালই শেষ হয়েছে ইভিএম সচেতনতায় মক ভোটিং। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা থাকলেও ভোটের পরিবেশ ভালোই আছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ভোটের পরিবেশ এখনো স্বাভাবিক আছে। প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন ভোটগ্রহণের দিকেই আমরা যাচ্ছি। ভোটকেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হবে। ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদেরকেও নির্ধারিত কেন্দ্রের দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ম্যাজিস্ট্রেট, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সও ভোটের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করবে।’
জানা যায়, চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম.এ মতিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র খোকন চৌধুরী (হাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা)। এছাড়া ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭জন ও ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল শেষ প্রচারণায় প্রার্থীরা চষে বেড়িয়েছেন নির্বাচনী এলাকা। ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সকাল থেকেই প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। এরমধ্যে মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে প্রচারণার চেয়ে আনুষাঙ্গিক কর্মকান্ডেই সময় ব্যয় করেছেন বেশি।
অন্যদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীরা গতকালও প্রচারণায় জনগণের কাতারে গেছেন। নতুন করে অলিগলিতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রকে ঘিরে পোস্টার লাগানোর হিড়িক ছিল। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় ভোটারদের মধ্যেও আগ্রহ বেড়েছে। কে জিতবেন এ আলোচনাতেই সামিল আছেন ভোটাররা। পাড়ার অলিগলিতে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু নির্বাচন। বিশেষ করে দুই মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে কে জিতবেন তা নিয়েই ভোটাররা মশগুল। প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব কিংবা নিরপেক্ষতাও আছে আলোচনার বিষয়বস্তু।
এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন ১৪ হাজার ৩৭০ জন। এছাড়া ২০জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে ৩০৬টি সাধারণ ও ৪২৯টি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রে কোথায় কি পরিমাণ পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
মক ভোটিং সম্পন্ন : গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ৭৩৫টি কেন্দ্রে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কীভাবে ভোট দেয়া হয়, তা ইভিএম মেশিনে দেখানো হয়েছে। সকল ভোটকেন্দ্রেই পরীক্ষামূলকভাবে মক ভোটিং কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন ভোটাররা। এসময় ইভিএম নিয়ে সবার মাঝে আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।
কেন্দ্রে যাবে নির্বাচনী সরঞ্জাম : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে আজ। সকাল ১০টা থেকে নির্বাচনী সরঞ্জামগুলো কেন্দ্রভিত্তিক প্রিজাইডিং অফিসারদের হাতে তুলে দেয়ার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নগরীর এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম থেকেই ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের হাতে এসব সরঞ্জাম তুলে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, চসিক নির্বাচনের ৭৩৫টি কেন্দ্রে চার হাজার ৮৮৬ কক্ষে ভোটগ্রহণ দায়িত্ব পালন করবেন ১৫ হাজার ৩৯৩জন। এরমধ্যে ৭৩৫জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, চার হাজার ৮৮৬জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ৯৭৭২জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৯ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭০৬জন। এরমধ্যে পুরুষ নয় লক্ষ ৯২ হাজার ৩৩জন ও মহিলা ভোটার নয় লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৭৩জন।