যৌথ কম্বিং অপারেশনে ইউপিডিএফ-জেএসএস

85

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন প্রসীত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ ও সন্তলারমার জেএসএস বেশ মারমুখী হয়ে উঠেছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা ভিন্ন প্রতীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে যৌথ কম্বিং অপারেশনের ঘোষনা দিয়েছে ইউপিডিএফ ও জেএসএস। সাপে নিউড়ে থাকা দল দুটির ঐক্যবদ্ধ ঘোষনা এবং নির্বাচন পরবর্তী লাগাতার হামলার ঘটনায় পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে বেশর আতংক সৃষ্টি হয়েছে। গেল নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর ভরাডুবির পর বেশ মারমূখী হয়ে উঠে। নির্বাচনে হারের কারণ অনুসন্ধান করতে এবং দল দু’টির নির্দেশনা অমান্য করে যেসব ব্যক্তি ভিন্ন প্রতীকে ভোট প্রদান করতে উদ্বোদ্ধ করেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচনের পর পরই ইউপিডিএফ ও জেএসএস’র কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বেশ কয়েদফা বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। সব এলাকায় কম্বিং অপারেশন জোরদার করতে গত ১০ জানুয়ারী বিকাল ৩টায় রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার দূর্গম শুকনাছড়ি পাড়ায় বৈঠক করে প্রসীত বিকাশ খীসার ইউনাইটেড পিপলস ডেমক্রটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও সন্তুলারমার জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। বৈঠকে জেএসএস’র রাঙামাটি জেলার সামরিক কমান্ডার আশাপূর্ণ চাকমা, কেন্দ্রীয় সদস্য উথোয়াইচিং মারমা, কাউখালী উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুদিপ্ত চাকমা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইউপিডিএফ’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব সজীব চাকমা, কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক রবি চন্দ্র চাকমা, কাউখালী ইউনিটের পরিচালক কার্তিক চাকমাসহ আরো অনেকে। সমন্বিত বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে সমর্থনকারী সংস্কারপন্থী জেএসএস (এমএন লারমা) ও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামীলীগকে সমর্থনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সমূহের বিরুদ্ধে যৌথ কম্বিং অপারেশনের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য অঞ্চলে চলছে ধারাবাহিক হামলার ঘটনা। নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষের ঘটনায় জেএসএস (সন্তু) কর্তৃ হত্যা করা হয় বাঘাইছড়ির জেএসএস সংস্কারপন্থী নেতা বসু চাকমাকে। ইউপিডিএফ কর্তৃক ব্রাশফায়ারের শিক্ষার হয়েও প্রাণে বেঁচে যান খাগড়াছড়ির দীঘিনালা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নাজির উদ্দিন। সবশেষ ১৩ জানুয়ারী দিঘীনালার মেরুং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত হন অন্তত তিন বাঙ্গালী। এছাড়াও কাউখালী উপজেলার দূর্গম হারাঙ্গী এলাকায় ফেরীতে মাল বিক্রি করতে যাওয়া এক বাঙ্গালীর কাছে ১০ হাজার চাঁদা দাবী করে সন্ত্রাসীরা। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে মারধর করে পাহাড়ে প্রবেশ করতে নিষেধ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা বানিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। আতংকিত লোকজন লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা বানিজ্যের জন্য ভিতরে প্রবেশ করতে পারছেনা। একইভাবে ভেতর থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লোক ব্যবসায়িক কাজে বের হতে পারছেনা। শত নির্যাতনের পরও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ মুখ খোলতে সাহস পাচ্ছেনা। প্রাণের ভয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তাও নিতে পারছেনা। এসব বিষয়ে ইউপিডিএফ ও জেএসএস’র বেশ কয়েকজন নেতার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। সূত্র মতে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত নিরসনে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অঘোষিত শান্তি চুক্তি শুরু করে ইউপিডিএফ ও জেএসএস। যার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতিয় সংসদ নির্বাচনে পাহাড়ের আসনগুলোতে ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেয় দল দুটি। কিন্তু ভয়ভীতি ও শত বাাঁধা বিপত্তির মূখেও নির্বাচনে কাংখিত ফলফল আদায় করতে ব্যর্থ হয় আঞ্চলিক দুটি সংগঠন। ফলে নির্বাচনের পর থেকে যৌথ কম্বিং অপারেশনের ঘোষনা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে পাহাড়জুলে সাধারণ পাহাড়ী বাঙ্গালীর মাঝে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। সৃষ্ঠ পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করা না গেলে পাহাড়ের আইনশৃংখলার মারাত্মক অবনতির আশংকা করছে অনেকে।