যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে ‘ইরানোফোবিয়া’

23

যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইরানোফোবিয়া’ (ইরান ভীতি) বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে সেখানকার ইরানি-মার্কিনিরা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে পরিচালিত হামলায় তেহরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে দুই দেশের উত্তেজনা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক তথা ইরানি বংশোদ্ভূত মার্কিনিদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। তাদের আশঙ্কা ইরানিদের প্রতি বৈষম্য আরও বেড়ে যাবে। ৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের প্রভাবশালী কুদস ফোর্সের প্রধান কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে। এরপর মারাত্মক প্রতিশোধের হুমকি দেয় তেহরান। কয়েকদিন পর ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চালায় ইরান। এরপর তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। এতে তাদের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পৌঁছায়। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইরানিদের মধ্যে ‘ইরান সংশ্লিষ্টতার ভীতি’ সৃষ্টি হয়েছে।
ইরানে বসবাসরত মার্কিনি, তাদের পরিবার ও মিত্রদের বিষয়ে তেহরানের অবস্থান পর্যবেক্ষণে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইরানিদের মধ্যে বিরাজমান আতঙ্ক বাড়ছে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক মুন্না সাবুরি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোতে ইরানোফোবিয়ার বিস্তার আমাদের অমানবিকীকরণের দিকে ধাবিত করছে। ইরানি-মার্কিনিরা ও আমাদের সম্প্রদায় সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর সম্ভাব্য প্রতিশোধের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বলেছে, মার্কিন ভূখন্ডের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও হুমকি নেই। তারপরও কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরান থেকে আসা যে কোনও হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নিরাপত্তা সূত্র স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলসের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে তারা স্বীকার করেছে, সেখানে নির্দিষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য কোনও হুমকি নেই। ওয়াশিংটনে বসবাসরত ইরানি-মার্কিনি লিলি তাজাদ্দিন বলেছেন, ‘এমন কিছু মন্তব্য ইঙ্গিত করে যে ইরান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আর ইরানিরা সন্ত্রাসী। এটা মানুষকে আতঙ্কিত করছে। সব সংবাদ আপনাদের বলছে, ইরানিরা সন্ত্রাসী আর এতে আপনার ভয় পাওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, এই ধরনের চিন্তাধারার বিস্তারের ফলে ইরানোফোবিয়া বাড়ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খরব, গত সপ্তাহে ভিসাসহ যাবতীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বে ১২ জন ইরানি শিক্ষার্থীকে দেশে পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ। কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক ডজন ইরানি-মার্কিনদের বন্দি করা হয়। ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ও ইরানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মেহেরজাদ বরৌজারদি বলেছেন, ‘এমন পদক্ষেপ এই সম্প্রদায়কে উদ্বিগ্ন করছে।’