যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান দিবস ‘ইস্টার সানডে’

28

জেসন প্রমোদ দাশ

যিশু বলেন- আমিই পুনরুত্থান ও জীবন- ‘যোহন ১১:২৫ পদ’’
পুনরুত্থান অর্থ ‘পুনরায় উত্থান, পুনঃজীবিত হওয়া’’
হা প্রভু যিশু মরে ছিলেন ক্রুশের উপর। তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল তিনদিন পর। আবার জীবিত হয়ে তাঁর শিষ্যদের এবং পাঁচশ’র অধিক লোককে চল্লিশ দিন পর্যন্ত দেখা দিয়েছিলেন। যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশে মৃত্যুবরণ এবং তিনদিন পর জীবিত হয়ে ওঠা; এসকল স্মরণার্থে যে অনুষ্ঠান খ্রিষ্টভক্তগণ পালন করে থাকেন- পুনরুত্থান দিবস বা ইস্টার সানডে। এ অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে অতীব গুরুত্বের সাথে। যিশু খ্রিষ্টকে যেদিন শত্রæরা ক্রুশে দিয়েছিল, সেদিন দুপুর বারটা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সূর্য অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। ভূমিকম্প হয়েছিল- আর পুরনো কবর খুলে গিয়ে মৃত ব্যক্তিরা জীবিত হয়ে উঠেছিল।
যীশু খ্রীষ্টকে কবর দেয়া হয়েছিল! এবং তিনি তিনদিনের দিন সমাধি থেকে জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। এরপর তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রমান দিয়েছিলেন যে, তিনি ক্রুশে প্রাণ দিয়েছিলেন। তিনি থোমা নামে এক শিষ্যকে বলেছিলেন- ‘থোমা তোমার আঙ্গুল আমার হাতের তালুতে দিয়ে দেখো এই যে আমি আমাকে শত্রæরা হাতে পায়ে পেরেক মেরে ক্রুশে হত্যা করেছিল; তখন থোমা তাঁর হাতে পায়ে ধরে দেখলেন যে সত্যি প্রভু যিশু ক্রুশে মরেছিলেন। থোমা বলেছিলেন- ‘ঈশ্বর আমার প্রভু আমার বলে প্রভু যিশুকে প্রণাম করেছিলেন। প্রভু যিশু তোমাকে বলেছিলেন- তুমি আমাকে দেখেছ বলে বিশ্বাস করেছ’। ধন্য সেই ব্যক্তি যে আমাকে না দেখে বিশ্বাস করে। যিশু বলেন যে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে সে মরিলেও জীবিত হবে।
যোহন ৩:১৬ পদে লেখা আছে- ঈশ্বর মানুষকে এতো ভালোবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে দান করলেন; যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপর বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। যিশু নামের অর্থ হল ‘উদ্ধার কর্তা, মুক্তিদাতা’। তাঁর জন্মের শত শত বৎসর পূর্বে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল পবিত্র বাইবেলে যিশাইয় পুস্তকে লেখা আছে একটি শিশু আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁর নাম হবে শান্তিরাজ, সনাতন পিতা, রাজাদের রাজা, প্রভুদের প্রভু! তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না…।
মানব জাতিকে পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রুশে নিজের জীবন উৎসর্গ (কোরবানি) করেছিলেন। তিনি মানুষকে ভালবাসতেন, তাঁর তেত্রিশ বৎসর জীবনে বহু মানুষকে রোগ থেকে সুস্থ করেছিলেন। মৃতকে জীবন দিয়েছিলেন। বার বছর বয়সী এক মেয়েকে মৃত্যু থেকে জীবন দিয়েছিলেন, বিধবার একমাত্র সম্বল তার যুবক ছেলেকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে বিধবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কুষ্ঠকে সুস্থ করেছিলেন। অন্ধকে সুস্থ করে দেখবার শক্তি দিয়েছিলেন। আরো বহু অলৌকিক কাজ করে মানব জাতির কল্যাণ সাধন করেছিলেন। শেষে নিজের জীবন ক্রুশে উৎসর্গ করে তিনদিন পর কবর থেকে জীবিত হয়ে উঠে তিনি দেখিয়ে ছিলেন সত্যিই তিনি মানব জাতির মুক্তি দাতা। তার উদাহরণ স্বরূপ আমরা দেখি/ক্রুশের উপর যিশু খ্রিষ্টের সাথে আরো দুজন দস্যুকে ক্রুশে দেয়া হয়েছিল, তাদের একজন প্রভু যিশুকে টিটকারি দিলো, অন্যজন প্রভুকে বিনয়ের সহিত বলেছিল, ‘প্রভু আপনি যখন স্বমহিমায় এ পৃথিবীতে ফিরে আসবেন তখন আমাকে একটু স্মরণ করবেনÑ। উত্তরে প্রভু যিশু সেই দস্যুকে বলেছিলেনÑ ‘আজই তুমি আমার সঙ্গে পরম দেশে উপস্থিত হবে’ ‘অর্থাৎ স্বর্গে উপস্থিত হবে। এখানেই প্রভু যিশু পাপী মানুষকে অকৃত্রিম ভালবাসার প্রমাণ দেখিয়েছিলেন। মানব জাতিকে কতখানি ভালোবাসেন তার প্রমাণ তিনি ক্রুশের উপর যে শত্রুরা তাঁকে তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে যাতনা করেছিল তাদের জন্যে পিতা ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেনÑ ‘পিত এরা কি করছে তা এরা জানেনা! এদের তুমি ক্ষমা কর’ শুধু তাই নয় ক্রুশে নিজের জীবন বলী দিয়ে তিনদিন পর কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেনÑ এবং চল্লিশদিন পর্যন্ত পাঁচশ’র বেশি লোককে দেখা দিয়ে ‘জৈতুন’ পর্বতে তার শিষ্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে স্বর্গে চলে গেলেন।
প্রিয় পাঠক, যিশু আপনাকে ভালবাসেন, তাই প্রভু যিশু ক্রুশের উপর তার জীবন উৎসর্গ করে পবিত্র রক্ত ঢেলে দিয়ে আপনার জীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে দিয়েছেন। পৃথিবী থেকে স্বর্গে চলে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর শিষ্যদের আদেশ দিয়ে বলেছিলেন তোমরা যাও সারা পৃথিবীতে সমস্ত জাতির কাছে এ সুখবর পৌঁছে দাও, যে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে অন্তরে স্থান দেয় তবে অনন্ত জীবন লাভ করবে। শুধু আপনার অন্তরে যিশুকে বিশ্বাস ও গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আপনি অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা লাভ করতে পারেন। এতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আপনার জীবনে থাকতে আসবেন। পাপের ক্ষমা পাবেন, ঈশ্বরের সন্তানের অধিকার লাভ করবেন। কারণ যিশু মানব জাতির পাপের প্রায়শ্চিত্ত সাধন করেছেন।
লেখক : ধর্মযাজক