মৃদু শৈত্যপ্রবাহে মাঘের যাত্রা, গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস

19

নগরে নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে। এর মধ্যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহকে সঙ্গী করেই শীতের ভরা যৌবনের মাস মাঘের যাত্রা শুরু হলো বলে কথা! শৈত্যপ্রবাহের ধরন তীব্র না হলেও জনজীবনে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে শীতের অনুভূতি প্রকট হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার দাপট।
মাঘের প্রথম দিনেই গত শুক্রবার সকাল ছ’টায় পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় রাজশাহীর বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ছয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে নেমে আসে। চলতি মৌসুমে অধিদপ্তরের রেকর্ডে এটাই এ পর্যন্ত পারদের সর্বনিম্ন পতন। তাতেই শীতের হাওয়ায় যেন ‘মাঘের’ নাচন লেগেছে। যদিও দিনের ব্যবধানে পারদের ফের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাঘের শুরুতে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহজনিত শীতের দাপট আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী ২১ জানুয়ারির মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সিলেট, বরিশাল, ঢাকার পূর্বভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তরভাগসহ অন্যত্র দুয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে হালকা বৃষ্টির আভাস রয়েছে। সাধারণত বাতাসের গতিপ্রকৃতি ও তাতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি, বায়ুমন্ডলে কুয়াশার প্রকোপ, ভূ-ভাগে সূর্যের কিরণকাল ইত্যাদির ওপর শীতের অনুভূতি নির্ভর করে। কখনও বাতাসের গতি কম থাকলেও শীতের অনুভূতি ও প্রকোপ বেশি মনে হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম পূর্বদেশকে জানান,উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিত অংশের প্রভাবে এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিত অংশটি গত ১৪ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করে। ওইদিনই দেশের বেশ কিছু অঞ্চল এই উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবের আওতায় আসে। উচ্চচাপ বলয়টির কেন্দ্র এখন পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী দুই থেকে তিন দিন দেশে তাপমাত্রার পারদ প্রায় এখনকার মত বা তার আশেপাশেই থাকবে। এরপর বাড়তে পারে।
আগামী তিনদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে উল্লেখ করে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার জন্য অধিদপ্তরের প্রচারিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী-অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় এ সময়ের শেষের দিকে হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সীমান্ত ও উপকূলবর্তী অঞ্চল টেকনাফে দেশের সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক চার এবং সিলেটের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন সাত দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন সবকটি অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ১১ থেকে ১৫ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই উঠানামা করেছে।
এর আগে জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, এ মাসে অন্তত দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এছাড়া একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সময়কালে বিভিন্ন বিভাগের জেলাগুলোতে কনকনে শীত অনুভূত হবে। গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। সারাদেশের মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইছড়ি ও এর আশেপাশের এলাকায় শীতের তীব্রতা থাকবে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের আবহাওয়ার চিরায়ত ধরন ও অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে জানুয়ারিই হচ্ছে বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস। এ মাসেই শীতকাল চেনারূপে নিজেকে শতভাগ মেলে ধরে। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাস।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী অর্ধশতকের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।