মিথ্যা বলার শাস্তি

19

 

এই তো দাঁড়িয়ে আছি, কুয়াশাচ্ছন্ন বাড়ির উঠোনে! চড়ুই পাখির ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ, এক গাছ থেকে অন্য গাছে। জীবনের সমস্ত উচ্ছ্বাসে কী প্রাচুর্যভরা! মনে পড়ছে, বাড়ির পাশের ক্ষেত থেকে ধনেপাতা চুরির কথা! শাস্তিস্বরূপ.. চুলের মুঠি ধরে মায়ের কী ভয়ানক মার!! ইশ, গায়ে এখনও যেনো ব্যথা অনুভূত হচ্ছে! আরো মনে পড়ছে, মায়ের বলা কঠিন কথাগুলো! জীবনে মিথ্যে না বলার, চুরি না করার কী শপথটাই না করাতেন আমাদের!! এখনও চলার পথে হঠাৎ মনে হয়, মা’ যেনো পিছনে পিছনে পাহারা দিচ্ছেন আমাকে!
সময়ের অবিশ্রান্ত ধারায় চলমান কাঁটার মাঝে বিলীন হয়ে যায়, জীবনের মুহূর্তগুলো প্রতিনিয়ত। আমরা হেঁটে যাই জীবনের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের দিকে ক্রমশ, ক্রমাগতভাবে অনন্তের দিকে। চলমান জীবন, অনাদিকাল থেকেই। জীবনকে যাপন করার উপলব্ধি, অনুভব পোক্ত প্রায়। চলার পথে বাঁকে বাঁকে, ক্ষণে ক্ষণে এমন কিছু উপলব্ধি, এমন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের চেতনায় গাঢ় ছাপ রেখে যায়, যা বিস্মৃত হতে চাইলেও হওয়া যায় না! বারবার ফিরে আসে সেই চেনা পথ ধরে, হারিয়ে যাই এক সময়ের সীমানায়! খুঁজে পাই অন্য একামি’কে।
জীবনের নির্মল আনন্দ, বন্ধুবাৎসল্য, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা -ভালোবাসা, স¤প্রীতি, প্রতিবেশী প্রেম, আত্মীয়দের স্নেহ- মমতা/শ্রদ্ধা, গুরুজনদের আশীর্বাদ… সবই এসেছে জীবনের অংশ হয়ে। সত্য-মিথ্যা মাপার থার্মোমিটার পুরোপুরি গলদে ভরা এখন! বার্নাড শ’ বলেছেন, ‘মিথ্যাবাদীর শাস্তি মোটেই এটা নয়, যে তাকে কেউ বিশ্বাস করেনা, বরং এটা যে, সে অন্য কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেনা।’
অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া অমর্ত্য সেনের ‘নীতি ও ন্যায্যতা ’ বইটা বুকশেলফ জুড়ে আছে অনেক আগে থেকে! পড়া হয়নি বা পড়ে মর্মার্থ উদ্ধার করা আমার মতো নিরেট গাধার সাহস ছিলোনা! মুখবন্ধে একটা কথা মনে লেগেছে। তা হলো… “দৈনন্দিন জীবনে যে সব অসাম্য ও আধিপত্য আমাদের ঘিরে থাকে এবং যেগুলো নিয়ে আমাদের অসন্তোষের প্রভূত কারণ থাকতে পারে, সেগুলো থেকেই অন্যায়ের বোধটা জন্মায়”।
মায়ের শেখানো বুলিকে সাংবিধানিকভাবে বুকে আগলে পথ চললেই জীবন মাধুর্যময় হবে! পৃথিবীর সকল মায়েরা সন্তানদের সুবচনে এবং সুশিক্ষায় মানুষ করার ব্রত করুন! আমার এক বড় বোন অনেক আগে বলেছিলেন, জীবনকে এমনভাবে গঠন করো, যেনো ডায়েরির পাতায় লুকিয়ে না রাখতে হয়! আমি বলি, অতীতকে সবার মাঝে প্রকাশ করার শক্তি দাও প্রভু!! শক্তি দাও!!