মানব প্রজাতির উৎপত্তির নিরিখে মৃত্যুর ইচ্ছা-অনিচ্ছা

62

 

মানুষ যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিবেক-বিবেচনা ও যুক্তিবাদিতার পরিচয় দিয়ে থাকে; বুদ্ধি খাটিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। কর্ম সম্পাদনের পূর্বে চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগায়, তাই মানুষকে বলা হয় জগতের সেরা জীব। প্রাণী বিজ্ঞানীদের ধারণা বানর প্রজাতি থেকে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে প্রাচীন মানবগোষ্ঠী ‘হোমিনিনা’ প্রজাতির উৎপত্তি হয়েছে। ‘হোমিনিনা’ থেকে আরো বিবর্তন হয়ে ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ নরগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে। ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’কে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যারা প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে থেকে আচরণগত আধুনিকতার প্রমাণ দিতে শুরু করেছিল। এক পর্যায়ে প্রজাতিটি সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চ মাত্রার যুক্তি খÐন, ভাষা ব্যবহার, সমস্যার সমাধান, সামাজিক যোগাযোগ ও উন্নত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়ে ওঠে। পরিচিতি পায় আধুনিক মানব হিসেবে। মানব সৃষ্টি সম্পর্কে বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মমতে ভিন্নতা রয়েছে। বেদের ভাষ্য মতে ঈশ্বর হচ্ছে ‘পুরুষ’। সেই ‘পুরুষ’ বিভক্ত হওয়ার পর তাঁর মুখ হতে ব্রাহ্মণ, বাহু হতে ক্ষত্রীয়, উরু হতে বৈশ্য এবং পা হতে শুদ্রের জন্ম হয়। মনুতে বলা হয়েছে যে, জগদ্বীশ্বরের পুত্র বিরাট; বিরাটের পুত্র মনু আর মনুর আপত্য বা সন্তানই হলো মানুষ। বৌদ্ধ ধর্মমতে, জগত চির অস্তিত্বশীল ও অনাদি; মানুষ তাঁর কর্মফলে এই জগতে দুঃখভোগ করতে এসেছে। অপরদিকে ইহুদী, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মে মানব সৃষ্টির বিষয়ে প্রায় একই মতপোষণ করা হয়ে থাকে। এ সকল ধর্মমতে মহান আল্লাহ্ নিজের ইচ্ছায় এক মহৎ উদ্দেশ্যে আদি মানব হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করেন, আর আদমের সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করেন হাওয়াকে। আদম-হাওয়ার ঔরস থেকেই পরবর্তী মানব জাতি এসেছে। ইসলাম ধর্মের মর্মানুযায়ী মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই সে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের গুণে সকল সৃষ্টি জীবের নিয়ন্ত্রণ করবে; মহান ¯্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করবে, প্রতিনিধিত্ব করবে। পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, শস্য উৎপাদন করবে ও সুষম বন্টন করবে। মানুষের প্রণালীবদ্ধ জীবন-যাপন, খাদ্য উৎপাদনে নানা উপকরণের ব্যবহার ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে। আর এ পথ ধরেই বর্তমানে মানুষ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ সকল বিজ্ঞানে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে।
মানুষ জগতে এসেছে কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য হয়ে। পরিবার হলো সন্তান উৎপাদন, লালন-পালন ও বড়দের মনের আশ্রয়স্থল। বিয়ে হলো সমাজ স্বীকৃত একটি বন্ধন ও স্থায়ীভাবে সঙ্গী নির্বাচনের পদ্ধতি। বিয়ের মাধ্যমেই নর-নারী পরিবার গঠন করে এক সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করে। মানব শিশু জন্মের পর বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে প্রয়োজন অন্যের সাহায্য, তারপর সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্য প্রয়োজন মনুষ্যত্ব এবং ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণ বিকাশ। এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে হলে ব্যক্তির একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়Ñ সংঘবদ্ধ জীবনই এক্ষেত্রে প্রয়োজন। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে খাদ্য অন্বেষণ, আত্ম-রক্ষা, আত্ম-বিকাশ ও আত্ম-প্রকাশের মতো কতগুলো মৌলিক তাড়না থেকে মানুষের সামাজিক জীবন শুরু হয়। আদিম মানুষ দল বেঁধে পশু শিকার করতো, এরপর শিকারী মানুষ পশু পালন ও কৃষি প্রণালী রপ্ত করতে শিখে এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাসের ফলে সামাজিক নেতৃত্ব ও আনুগত্যের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব। নেতৃত্ব এবং আনুগত্যের প্রশ্নেই সুনিয়ন্ত্রিত আইনী কাঠানো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আদিম সমাজ ক্রমবিকাশের ধারায় বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সমাজে পরিণতি লাভ করেছে। আর রাষ্ট্রীয় সমাজের পরিচয়ই বর্তমান মানুষের বড় পরিচয়। যেমন: জাপানী, নেপালী, ভারতীয়, ইরাকী ও বাংলাদেশি ইত্যাদি। নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে বসবাসকারী জনসমাজ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আইনী বলয়ে সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্র নামক সংস্থাটি তৈরি করেছিল। মানুষের জীবন-যাপনের প্রেক্ষাপট, উৎপাদনের উপকরণ বা প্রযুক্তির ব্যবহার নীতি ও মনন চেতনার প্রকাশভঙ্গি থেকে সংস্কৃতির উৎপত্তি। সৃষ্টিজীবের মধ্যে কেবল মানুষেরই আছে সমাজ; আছে সংস্কৃতি। জগতে অনেক প্রজাতি দলবদ্ধভাবে বসবাস করলেও মানুষের মতো এদের সমাজ নেই; নেই সংস্কৃতি। এরা মানুষের মতো বুদ্ধি খাটাতে পারে না; যুক্তির ওপর নির্ভর করতে পারে না; পারে না চিন্তা করতে, তাই এরা ইতর প্রাণী বলে গণ্য। এখানেই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকুলের মধ্যে তফাৎ।
জগতকে সহজ করে পাওয়ার ইচ্ছা, আবেগ এবং বেঁচে থাকার স্বপ্নই মানুষকে কর্মে উদ্বুদ্ধ করে। প্রিয়জনের ভালোবাসা, কর্মে সাফল্য লাভ ও নতুন কিছু পাওয়ার আকাক্সক্ষা মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়ে থাকে। তাই সে মস্তিষ্ক খাটিয়ে, বুদ্ধি-কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পদ, যশ, মান, খ্যাতি ও মর্যাদা লাভের প্রচেষ্টা চালায়। ব্যক্তিগত-পারিবারিক উন্নতি, সামাজিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের জন্য মানুষ বহু ত্যাগ-তীতিক্ষা অবলম্বন করে থাকে। সফলতা ও উন্নতির প্রতিটি পর্যায়ে মানবসন্তান আশাবাদী হয়ে পথ চলছে। কখনো কখনো কর্মে-অপকর্মে, সৃষ্টি-নির্মাণে-বংশ বিস্তারে অমর হতে চায় মানুষ, তাই বুদ্ধিদীপ্ত মানবসন্তান ক্ষমতার উচ্চ আসন লাভের প্রক্রিয়াকে সহজ করতে বিভিন্ন কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করছে। একদিকে প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে দিন দিন অগ্রগামী করছে। অপরদিকে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার আইনী ক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও কর্মে সাফল্য লাভ মানুষকে মৃত্যুর কথা ভুলিয়ে দিয়েছে যেন। রোগ-ব্যাধি-জরাগ্রস্ত হয়েও বিজ্ঞানের আশির্বাদে কখনো বেঁচে যায় মানুষ। আর মৃত্যু ভোলা মানুষ এজগতে নিজের উচ্চ আসন ধরে রাখতে অন্যকে পরাজিত করার পন্থা খুঁজে। স্বপ্নে বিভোর মানব মন এই পৃথিবীর চাঁদ-সূর্য, আলো-বাতাস ও প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ থেকে নিজেকে হারাতে চায় না। নিজেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চায়; সবকিছু নিজের মতো করে পেতে চায়। আর প্রতিটি মানুষের চাওয়া-পাওয়া, বিশ্বাস ও লক্ষ্যের ভিন্নতার কারণে ভিন্নতা দেখা যায় ব্যক্তির চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি, আদর্শ ও আচরণে। সবকিছু নিজের মতো করে চাওয়া-পাওয়ার এক পর্যায়ে মানবসন্তানের সামনে উপস্থিত হয় কঠিন সময়। তখন সে উপলব্ধি করে নিজেকে; উপলব্ধি করে তাঁর চারপাশকে, তাঁর সমাজ-সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রকে। ব্যক্তি হতে পারে নারী; হতে পারে পুরুষ; হতে পারে কোনো জাতি-গোষ্ঠী-গোত্রের সদস্য; হতে পারে মালিক-শ্রমিক, কোনো রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী। যে পরিচয়ে ব্যক্তি মানুষ পরিচিত, সেই পরিচয়েই নিজেকে সে উপলব্ধি করতে থাকে; ব্যক্তির উপলব্ধিতে ধরা পড়ে আত্ম-সুখ কিংবা আত্ম-পীড়ন। বৈবাহিক জীবনে সুখ-দুঃখ নির্ভর করে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে একান্তই মেনে নেয়া কিংবা মেনে না নেয়ার ওপর। প্রতিটি নারী বাল্যকালে কল্পনার জগতে কাক্সিক্ষত পুরুষের রূপরেখা অঙ্কন করে থাকে এবং প্রতিটি পুরুষও তদ্রæপ কাক্সিক্ষত নারীর প্রতিরূপ কল্পনা করে থাকে। প্রতিটি মানুষই অন্তত স্বপ্নের মতো করে না হলেও স্বপ্নের খুব কাছাকাছি মতো করে নিজের সাথীকে পেতে চায়। আর যদি মনের মতো সাথী না পাওয়া যায় তখন যুগল জীবনে ক্ষোভ-বিরক্ত-বিতৃষ্ণা নেমে আসে; নেমে আসে অশান্তির কালো ছায়া। আর অশান্তি থেকে পারিবারিক বন্ধনে শিথিলতা দেখা দেয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার বিন্যাস, পারিবারিক নিয়ম-কানুন, আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক নিয়েও পারিবারিক দ্বন্দ্বের উদ্ভব হতে পারে। আদর্শগত মতের পার্থক্য, সম্মান-প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়েও ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দেখা দেয় দ¦›দ্ব। সামাজিক শ্রেণি-গোষ্ঠী, রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণেও দ্বন্দ্ব হতে পারে। দ্ব›দ্ব হয়ে থাকে বস্তুগত, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উপাদান থেকে। একদিকে ব্যক্তিগত জীবনের ব্যস্ততা অপরদিকে নগর জীবনের যাপিত নিয়ম মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক ও কৃত্রিম মানব হিসেবে গড়ে তুলছে। সামাজিকতার বদলে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যক্তিকে যেন বিচ্ছিন্নতায় পরিণত করেছে। ইন্টারনেটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার একদিকে মানুষের শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাত্রাকে ব্যহত করছে, অপরদিকে সমাজের নিষিদ্ধ বিষয়গুলো উন্মুক্ত হওয়ায় বাড়ছে কদর্যতা। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা এসব চাপে মস্তিস্কের ভারসাম্য হারাচ্ছে। অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতাকে মানিয়ে নেওয়ার মনস্তাত্ত্বিক সক্ষমতা ও শক্তি হারিয়ে অসংখ্য মানুষ হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। সমাজজীবনে সহযোগিতার বদলে শ্রেণী বৈষম্য, সহমর্মিতার বদলে অনাচারই যখন বেশি হয় তখনই সামাজিক মানুষ পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে, ভাঙ্গন দেখা দেয় সমাজে। আর ভঙ্গুর সমাজে শুরু হয় নেতৃত্বের অবক্ষয়জনিত সংকট। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির যেকোনো অবক্ষয় সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে ক্রমে ক্রমে গ্রাস করে। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে আজ মানুষের মধ্যে ক্রোধ, লোভ, হিংস্রতা বেড়েই চলেছে। যার প্রভাব সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আচ্ছন্ন করছে। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণের ঐক্য ও সংহতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রের স্থান। তাই ব্যক্তি মানুষ বাকস্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকারসহ সকল প্রকার অধিকার ও নাগরিক সুবিধা রাষ্ট্রের কাছেই পেতে চায়; পেতে চায় জান-মালের নিরাপত্তা। রাষ্ট্রের মাধ্যমেই ব্যক্তি নিজের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন চায়, কিন্তু বাস্তবে অনেক রাষ্ট্রই নাগরিকদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেক রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, এমনকি ব্যক্তি মানুষের নিরাপত্তা ও বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। একটি রাষ্ট্রে নাগরিকের নিরাপত্তাহীনতা ও বাক-স্বাধীনতাহীনতা বেশি দিন চলতে পারে না, ইহা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নাগরিক ঐক্যের মনস্তত্ত¡ জন্ম দেয়। নাগরিকের ঐক্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ফুঁসে ওঠার পরিস্থিতি তৈরি করে, এতে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এছাড়াও দলীয় রাজনৈতিক সংঘাত, প্রতিহিংসা, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিক জীবনে অশান্তি বয়ে আনে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব যদি কারো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার উপায়ে পরিণত হয় তাহলে নাগরিক জীবনে বৈষম্য অনিবার্য। আর বৈষম্য কখনো একটি রাষ্ট্রে ভালো ফল বয়ে আনে না। যদিও সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে অন্যের ওপর প্রভাব না খাটানোর শর্তে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল বলে অনেক রাষ্ট্র দার্শনিক মনে করেন।
ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক। জনসমাজ হলো অসংখ্য ব্যক্তির সহঅবস্থান, আর সমাজ গঠিত হয় ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতার সম্পর্ক থেকে। সমাজ যখন স্বার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করে তখন সংস্থাটি রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত হয়। ব্যক্তিগত জীবনে কেউ অসুখী হলে তার প্রভাব যেমন পারিবারিক জীবনে পড়ে। তেমনি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কেউ অসুখী হলে তার প্রভাবও সমাজের অন্যান্য সদস্যের ওপর পড়ে-পুরো সমাজ ও রাষ্ট্র প্রভাবিত হয়। অপরদিকে সংবেদনশীল ব্যক্তিরা পরিবেশগত মানসিক চাপ বা দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয় বেশি মাত্রায়। পরিবারিক টানাপোড়েন, প্রিয়জনের হৃদয়হীনতা, অপমান-পরাজয়, অর্থ উপার্জনের অসম প্রতিযোগিতা, চারপাশের নিষ্ঠুরতা-স্বার্থপরতা, বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন, মাদক-ইন্টারনেটের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি, সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাস্তায় তীব্র যানজট ও শব্দদূষণ ইত্যাদি কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে মানবসন্তান। বিপর্যস্ত মানুষ বহুত্বের বলয় ভেঙ্গে একাকীত্বের গহীনে এসে আত্মসুখের অভাববোধ করে থাকে, মরে যেতে ইচ্ছেপোষণ করে। আশাহত হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে চায় মানুষ- এমনকি অনেকে আত্মাহুতি দিয়েও থাকে।

লেখক : ব্যবস্থাপক,শিক্ষার গুণগতমান
নিশ্চিতকরণ সেল সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি