মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী

20

জিয়া হাবীব আহ্সান

চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন একদিনে বাস্তবায়ন হয়নি। এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কিছু ক্ষণজন্মা মানুষের স্বপ্ন সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটা ছিল ‘চাওয়া পাওয়া সোনার হরিণ’। ষাট দশকে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বহু পূর্বে ত্রিশ, চল্লিশ দশকে প্রথম একজন কৃতিপুরুষ মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলেছিলেন। আজ তাঁকে আমরা ভুলতে বসেছি, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই তা জানে না। বার আউলিয়ার আবাদ ভূমি ইসলামের প্রবেশদ্বার বন্দর নগরী চট্টগ্রামে মূলত সর্বপ্রথম একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা চট্টল গৌরব মরহুম মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। চট্টগ্রামের দক্ষিণ মহকুমার কর্ণফুলীর তীরবর্তী দেয়াঙ পাহাড়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল তার আজীবন। ১৯১৫ সালে তিনি সেই লক্ষ্যে সরকার থেকে ৬০০ বিঘা জমি ও ওই এলাকার জমিদার আলী খান থেকে ৫০০ কানি ভূমি রেজিস্ট্রিমূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গ্রহণ করেছিলেন। বিখ্যাত নেতা ও শিক্ষাবিদ শেরেহিন্দ মাওলানা শওকত আলী ১৯৩৫ সালে এ আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। জঙ্গে জিহাদ, শাহ বদিউল আলম, শাহ জুলফিকার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবল সমর্থক হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যে ঐ সময় চট্টগ্রামে থাকতে রাজি হন। দেয়াং পাহাড়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ স্থান পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ হন ভারতীয় সেরা রাজনীতিক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা আকরম খাঁ, মুন্সী রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী। তিনি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কিন্তু তবে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার হাজারো আলেমের মনের ঐকান্তিক ইচ্ছার ফল স্বরূপ ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যাদ্বারা হয়তো আলেম সমাজের মনের বাসনা পূরণ লাভ করেছে। মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর শিক্ষক। তিনি কদম মোবারক মুসলিম এতিম খানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পটিয়ার দেয়াঙ পহাড়ে তিনি ইসলামী আরবী বিশ্ব বিদ্যালয়ের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ত্রিশ চল্লিশ দশকের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানাধীন দেয়াং পাহাড়ে একটি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে একটি জায়গাও তিনি দান করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর একটি অদৃশ্য কারণে তা ধামাচাপা পড়লেও ষাট দশকের প্রারম্ভে যখন পুনরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু হয় তখন এটা দেয়াং পাহাড়ের নান্দনিক পরিবেশে স্থাপনের দাবী উঠেছিল।
মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর পর অপর আর এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চট্টগ্রামের তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান (১৯২৭-৫৪) ও পাকিস্তান গণ পরিষদ সদস্য (১৯৪৭-৫৪) নূর আহমদ চেয়ারম্যান অবিভক্ত বাংলার আইন পরিষদের সদস্য (১৯৩৭-৪৬) থাকাকালে আইন পরিষদে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী করেছিলেন। চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সর্বপ্রথম যাঁরা শুরু করেছিলেন আমরা তাদের নাম উচ্চারন করতে ভুলে গেছি। ফলে নতুন প্রজন্ম এর সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিধায় মরহুমের ৭২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজকের আলোচনায় মরহুম মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সেই স্বপ্নের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করলাম। মরহুম মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী আগ্রাসী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের যেমন পুরোধা ছিলেন তেমনি এতদাঞ্চলের অনগ্রসর শিক্ষা ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ৯২ বছর আগে ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে একটি এতিমখানা ও উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মরহুম শুধু এ দেশের স্বাধীনতা – সার্বভৌমত্বের জন্য সংগ্রাম সাধনা করেই ক্ষান্ত হননি একাধারে তিনি ছিলেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ধর্মতত্ববিদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারক বাহক। এমন অসা¤প্রদায়িক বহুমাত্রিক ক্ষণজন্মা প্রতিভার মূল্যায়ন ও জীবনচরিত আলোচনা আমাদের দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টিতে অবদান রাখবে। অনাথ এবং এতিমদের জন্য তাঁর দরদী মন বাস্তবজীবনে দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা ও স্কুল প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি আজও দেশ প্রেমিক মানুষের চেতনার বাতিঘর। চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের ইতিহাস গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ্দীন হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে তিনি ১৮৭৫ সালের ২২ আগস্ট দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার বরমা ইউনিয়নের আড়ালিয়ার চর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুনশী মুহাম্মদ মতিউল্লাহ আরবী-ফারসী ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। মাতার নাম রহিমা বিবি। চট্টগ্রামের অপর নাম ইসলামাবাদ। সেই প্রেক্ষিতে মনিরুজ্জামান নামের শেষে ইসলামাবাদী যোগ করেন। তিনি মাদরাসায় উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনিও ঘরোয়া পরিবেশে ফার্সি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। লেখাপড়ায় তার অদম্য আগ্রহের কারনে তাঁর পিতা তাঁকে কলকাতায় উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য প্রেরন করেন। সেখানে তিনি হুগলী সরকারি মাদ্রাসায় ভার্তি হন। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে হুগলী মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ন হন। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল স্যার ডেলিনন রস ও অধ্যাপক এ এইচ হালী তার প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন। তিনি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলেও নিজ চেষ্টায় বাংলা শিখেন। তাছাড়া আরবী, উর্দুতেও যথেষ্ঠ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কলকাতায় মাওলানা আবুল কালাম আযাদের পিতা মাওলানা খায়ের উদ্দীন এর সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৮৯৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী মাদরাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয় শিক্ষকতার মাধ্যমে। রংপুর হারাগাছি সিনিয়র মাদরাসায় সুপারিনটেন্ডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এখান থেকেই তিনি সাহিত্য, সমাজসেবা ও শিক্ষা প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। অতঃপর তিনি মোলন্ডাগিরিতে না গিয়ে স্বাধীন জীবিকার উদ্দেশ্যে মোক্তারশিপ পরীক্ষা দেয়ার জন্য তৈরি হতে থাকেন। হঠাৎ মন পরিবর্তন করে তিনি রংপুর জেলার হাড়াগাছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পদ গ্রহণ করেন। পরে তিনি সীতাকুন্ড সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামে। তিনি সীতাকুন্ড হাইস্কুলের পাকা ভবন নির্মাণে উলেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ঐ সময় তিনি মিসরের আল-মিনার, আল-বিলাদ পত্রিকায় আরবি ভাষায় প্রবন্ধ লিখতেন এবং ভারতের দিল্লি, ল²ৌ প্রভৃতি স্থানের উর্দু পত্রিকায় নিয়মিতভাবে উর্দু ভাষায় প্রবন্ধ লিখতেন। অতঃপর তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণের উদ্দেশ্যে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে কলকাতা গমন করেন এবং রাজশাহীর জমিদার মির্জা ইউসুফ আলীর পরিচালনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘সুলতান’ এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সমর্থনে, ১৯০৮ সালে ত্রিপলী যুদ্ধ ও ১৯১২ সালে বলকান যুদ্ধে তুরস্কের সমর্থনে সমগ্র বাংলাব্যাপী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি বাঙালি মুসলমানের পুনর্জাগরণ ও প্রাচীন ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে ১৯১৪ সালে কলিকাতা থেকে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা আল এসলাম প্রকাশনা ও সম্পাদনা করে সে যুগের প্রতিষ্ঠাবান মুসলমান লেখকগোষ্ঠী গঠনে সহায়তা করেছিলেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ঐ সময় তিনি ইতিহাস গবেষণায় লিপ্ত হয়ে বহু গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সাংবাদিকতার সূচনা হয় সাপ্তাহিক ‘ছোলতান’-এর মাধ্যমে। সাপ্তাহিক ‘ছোলতান’ পরে ‘দৈনিক ছোলতান’-এ উন্নীত হয়। তিনি ছিলেন এ পত্রিকার সম্পাদক। পরে আঞ্জুমানে ওলামায়ে ইসলাম বাংলা ও আসামের মুখপাত্র আল-ইসলামের সম্পাদক হন। এই পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুসলমানদের মাঝে আত্মজাগরণের প্রেরণা ছড়িয়ে দেন। তিনি শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়েপড়া মুসলমানদের অগ্রসর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাঙালি মুসলমানের জাতিগত ইতিহাসে তিনিই প্রথম বাংলায় প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম মুসলমান সম্পাদক। তৎকালীন দুনিয়াজোড়া খ্যাতির শীর্ষে ছিল ফারসী ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র ‘হাবলুল মতিন’। প্রাচ্যের নেতা আল্লামা জামালুদ্দিন আফগানীর শিষ্য ইরানের নির্যাতীত ত্যাগীনেতা আগা মঈদুল ইসলামের সম্পাদনায় কলকাতায় ইংরেজীতে ‘মিল্লাত’ ও উর্দু-ফারসীতে, দৈনিক ‘হাবলুল মতিন’ প্রকাশিত হতো। মাওলানা ইসলামাবাদী ‘হাবলুল মতিনে’র বাংলা সংস্করণের সম্পাদক ছিলেন। এরজন্য মাওলানা ইসলামাবাদীকে বলা হয় বাংলায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকার প্রথম মুসলমান সম্পাদক। সংবাদপত্র জগত ও মুসলিম সাংবাদিকতায় মাওলানা ইসলামাবাদীর অবদান অপরিসীম। তিনি চট্টগ্রাম থেকে সাপ্তাহিক ইসলামাবাদ নামেও একখানি পত্রিকা পরিচালনা করেছিলেন। তিনি সোলতান (পত্রিকা) (১৯০১), হাবলুল মতিন (১৯১২), মোহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনুর (১৯১১), বাসনা (১৯০৪) এবং আল এছলাম পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ওই শতকের প্রথমে রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস, খেলাফত কমিটি, নিখিল বঙ্গীয় কৃষক প্রজা পার্টির সভাপতি, জমিয়ত-এ ওলামায়ে হিন্দের বাংলা-আসাম শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের তিনি ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৩৭ সালে চট্টগ্রাম সদর দক্ষিণ মহকুমা (বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও কক্সবাজার পর্যন্ত এলাকার) থেকে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রামের কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ সময়ে তিনি কংগ্রেসের অহিংস নীতির প্রতি আস্থা হারান এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি সমর্থন দান করে ফরোওয়ার্ড বøকে যোগদান করেন। তাঁর জীবনের গুরত্বপূর্ণ ঘটনা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যোগদান ও আজাদ হিন্দ ফৌজের কার্যক্রমের প্রতি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন। ১৯৩৭ সালে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির টিকেটে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য হন মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। একজন আলেমের আইনসভায় সদস্য পদ লাভ একটি ইতিহাস। তিনি স্বদেশের জন্য কারাবরণ করেছেন। সে সময় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিপ্লব কেন্দ্র স্থাপন করেন। আজাদ হিন্দু ফৌজের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে তাঁকে ১৯৪৪ সালের ১৩ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। আটক রাখা হয় লাহোরের মিয়ানওয়ারী দুর্গে। ১৯৪৫ সালে মুক্তি পান। ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষপর্বে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী নিজ মাতৃভূমি পূর্ববঙ্গে না এসে কলিকাতায় অবস্থান করেন। সেখানে বছর দু’য়েক মাস অবস্থান করার পর তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে যান। ভক্ত বন্ধুবান্ধবদের পীড়াপীড়িতে তিনি দেশে ফিরতে সম্মত হওয়ার পর মৃত্যুর কয়েকমাস আগে তাঁকে চট্টগ্রামে আনা হয়। মৃত্যুর পূর্বে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী সমাধিলিপি লিখে গেছেন ইসলামাবাদীর সমাধির গায়ে লিখা আছে তাঁর একটি ফার্সি কবিতার বাংলা অনুবাদ যা নি¤œরূপ:
“পথিক: ক্ষণেকের তরে বস মোর শিরে
ফাতেহা পড়িয়া যাও নিজ নিজ ঘরে
যে জন আসিবে মোর সমাধি পাশে।
ফাতেহা পড়িয়া যাবে মম মুক্তির আশে।
অধম মনিরুজ্জামান নাম আমার।
এছলামাবাদী বলে সর্বত্র প্রচার।”
লেখক : আইনবিদ, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী