মহানগর সম্মেলন ডিসেম্বরে ইউনিট সম্মেলন অক্টোবরে

19

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইউনিট সম্মেলন শেষে ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ডিসেম্বরেই মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। গতকাল রবিবার থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি পালনসহ বেশকিছু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা ছাড়াও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৪০ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য রাখেন। সভায় নগর আওয়ামী লীগ নেতারা ছাড়াও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ১৫টি থানার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহব্বায়ক, যুগ্ম আহব্বায়কগণ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যকালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। এরমধ্যে কেউ কেউ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব, সদস্য সংগ্রহ বই বিতরণ ও অনুপ্রবেশকারী দলে ঢুকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ওয়ার্ড নেতাদের বক্তব্য শুনে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
গণমাধ্যমে পাঠানো নগর আওয়ামী লীগের বিবৃতি সূত্রে জানা যায়, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা, সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হবে। ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক মন্ত্রী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এমএ মান্নান ও ২২ সেপ্টেম্বর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানুর মৃত্যুবার্ষিকী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী পালন, ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত চৌধুরী এন জি মাহমুদ কামালের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার পূর্বদেশকে বলেন, ‘অক্টোবরে শুরু হওয়া ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনা করে ডিসেম্বরে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি চলমান থাকবে। এবার আর কথার কথা নয়, অবশ্যই নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। এই সম্মেলনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি হবে।’
এদিকে বর্ধিত সভায় ২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের সভাপতি আলী বক্স বলেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অনেকেই আওয়ামী লীগের সদস্য হতে চায়। এরা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে চাইলে বর্তমান পদ থেকে পদত্যাগ করে আসতে হবে।
শুলকবহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সরোয়ার্দি শুলকবহর ওয়ার্ডকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে তিনটি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
৪০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সদস্য সংগ্রহ বই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখেন। সদস্য সংগ্রহ বইগুলো সাধারণ সম্পাদক নিয়ে গেলেও সভাপতিকে অবহিত না করেই সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে বর্ধিত সভায় অবহিত করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল বারেক পূর্বদেশকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক পাঁচটি বই নিয়ে সদস্য সংগ্রহ করেছেন। অথচ বিষয়টি আমি জানি না। তা বর্ধিত সভায় বলেছি। নাছির ভাই এসব বই বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আরো তিন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সদস্য সংগ্রহ হওয়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের অনিয়ম নিয়ে আপত্তি উঠেছে। সদস্য সংগ্রহকালে অনেকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এমন কথাও উঠেছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ পেয়েছে। এসব শুনে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আগে বা সামনে যেসব সদস্য সংগ্রহ করা হবে কিংবা হয়েছে সবাইকে একটি তথ্য ফরম সরবরাহ করা হবে। এই ফরম পূরণ করেই দলীয় সদস্য পদ নবায়ন করা যাবে। সেখানে সদস্য হতে চাওয়া ব্যক্তিদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। উত্তর নেতাদের সন্তোষজনক হলেই সদস্য পদ নবায়ন করা হবে। যেসব ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব আছে সেখানে সদস্য সংগ্রহকালে নগর আওয়ামী লীগের টিম পাঠিয়ে কার্যক্রম তদারকি করার সিদ্ধান্ত হয়।
চার নেতা যা বললেন : সভায় মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা এবং সংহতি সকলের অস্তিত্বকে বাঁচাবে। তাই বিরোধ-বিভেদ শুধরে আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে। সামনে কঠিন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই দলের মধ্যে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি নিয়ে বড়কিছু ভাবার অবকাশ নেই।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সবার সহযোগে যেটুকু সিদ্ধান্ত হবে তা অবশ্যই মেনে নিতে হবে। তবে এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা বা বিভেদ কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। যারা দলে থেকে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাÐ করবেন তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, যারা দায়িত্বে থেকে সংগঠনের কাজ নিয়ে অবহেলা এবং বিভিন্ন রকম অজুহাত সৃষ্টি করে থাকেন তারা দয়া করে পদ থেকে সরে দাঁড়ান। একই সাথে ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দের কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে ওয়ার্ডেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করা হবে বলে জানান।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, অন্যান্য জেলার চাইতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ স্থানীয় নেতৃত্বকে বেগবান করে এ পর্যায়ে এসেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন আসছে। এক্ষেত্রে তৃণমূলকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগ নব উদ্যমে নতুন সদস্য ফরমের মাধ্যমে যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তাতে তৃণমূলের পরিচ্ছন্ন এবং ত্যাগী কর্মী সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদেরকে চলতে হবে। এর বাইরে প্রথম শর্ত দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা দলীয় পদ পদবী নিয়ে যারা আছি তাদেরকে স্বীয় দায়িত্ব পালনে আরো সচেষ্ট হতে হবে। অনুপ্রবেশকারীরা দলে যেন ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।