ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি

24

 

দীর্ঘদিন হতে দেশের পণ্যবাজারে অস্থিরতা চলছে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা যাচ্ছেনা কোন মতেই। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় দেশটা গুদামজাতকারি, অসাধু ব্যবসায়ি, প্রতারকচক্র এবং ভেজাল কারবারিদের দখলে। দেশে পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ভোক্তারা দিশেহারা, তার উপর ভেজালের দৌরাত্ম্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। মানুষ অতিমূল্যে দ্রব্যসামগ্রী কিনছে কিন্তু মানসম্পন্ন পণ্যের মোড়কে মানহীন ভেজাল পণ্য গলদকরণ ও ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে অবৈধ ব্যবসায়ী প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্যে। তেলে ভেজাল, দুধে ভেজাল, হলুদ-মরিচ-মশলাগুঁরায় ভেজাল ছাড়াও জীবনরক্ষাকারি ওষধেও ভেজাল। পত্রিকার পাতায় ‘নাপা’ সিরাপ খেয়ে শিশুর মৃত্যুর খবর চাউর হতে দেখা যাচ্ছে। প্রসাধনী সামগ্রী হতে শুরু করে বহু ভেজাল সামগ্রী তৈরি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তাদের নিয়মিত প্রতারিত করে চলেছে। মাঝেমধ্যে ভেজাল প্রতিরোধে বিএসটিআই, ক্যাব ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করলেও বাজারে ভেজাল প্রতিরোধ হচ্ছে না। অভিযানে কোন কোন স্থানে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করা হলেও নৈমিত্তিকভাবে অভিযান পরিচালিত না হওয়ার কারণে বাজারে ভেজার কর্মকান্ডের অবস্থা যথাপূর্বং তথা পরং।
আমাদের দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করতে, মিল-ফ্যাক্টরি করতে সরকার কিংবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের আইন রয়েছে। ব্যবসা ও মিল কারখানা করতে ট্রেড লাইসেন্স, কিংবা সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু কার্যত দেখা যায় দেশে বহু অসাধু মোনাফাখোরী ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ভেজাল কলকারখানা সৃষ্টি করে খাদ্য ও ঔষধের ভেজালকান্ডে লিপ্ত। রীতিমত দেশের বাজারে বিপন্ন ভোক্তা অধিকার। ভেজালের কারণে গণস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভেজাল ভোগ্যপণ্য খেয়ে দেশের মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ভেজাল ঔষধের কারণে অনেকের অকাল মৃত্যুও ঘটছে।
এমতাবস্থায় সরকার ও প্রশাসনের উচিত সবধরনের ভেজাল প্রতিরোধে দেশের বাজারজাত ব্যবস্থা , ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উপর সত্যিকারের নজরদারী করা জরুরি। সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব বাজার মনিটরিং এবং উৎপাদন মনিটরিংকে তালিকা ভুক্তির আওতায় আনা। দেশের সব ব্যবসায়ীকে তালিকাভুক্ত করে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন খরচ এবং পরিবহন খরচ হিসাব করে বিক্রিতে কতটাকা মোনাফা করা যাবে তা নির্ধারণ করে দেয়া। দেশে কোন ধরনের পণ্য কত পরিমাণ মজুদ আছে, কি পরিমাণ উৎপাদন হয়, তার চাহিদা পরিমাণ কত ইত্যাদির সঠিক পরিসংখ্যান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের হাতে থাকতে হবে। খাদ্য ও ওষুধ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান মানরক্ষা করে পণ্য বাজারজাত করছে কিনা তার খবর অবশ্যই সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রাখতে হবে। প্রত্যেক উৎপাদন ও বাজারজাতকারি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক হিসাবের বাইরে কাউকে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া যাবে না। ক্যাব ও বিএসটিআইকে নিয়মিত যথার্থ তদারকির স্বার্থে লোকবল বাড়িয়ে নিবিড় তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সরকার ব্যবসায়ীদের পণ্যের ভ্যাট প্রত্যাহার কিংবা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে কোন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে না। ব্যবসায়ীদের কারসাজি সত্যিকার অর্থে বন্ধের কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া কোন পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখা সম্ভবনয়। দেশের জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিং করে থাকেন মাঝেমধ্যে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে দেশের ব্যাপক ও বিস্তারিত বাজারব্যবস্থা, উৎপাদনব্যবস্থা এবং পণ্যের মান পর্যালোচনা সঠিকভাবে করার সময় মূলত নেই। প্রশাসনিক নৈমিত্তিক কাজের ফাঁকে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিং কিংবা ভেজাল মেশানো প্রতারক ব্যবসায়ীচক্রের লাগাম টানতে পারবে না। দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা সরকারি সংস্থাকে নিয়মিত মনিটরিং করার উপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রয়োজনে এ সকল কাজ সুচারুরূপে আঞ্জাম দেয়ার জন্য বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ প্রদান করতে হবে। শুধু নিয়োগ প্রদান করলে হবে না, সংশ্লিষ্ট সংস্থার জনবল ও ম্যাজিস্ট্রেট বৃদ্ধি করে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে। সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতা ছাড়া কোন সংস্থার পক্ষে ভেজালমুক্ত বাজার প্রতিষ্ঠা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে সরকার ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একটি পরিপূর্ণ মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ জাতীয় কোন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা গেলে যে সকল অবৈধ ব্যবসায়ী রয়েছে, গুদামজাতকারী আছে, ভেজাল কারখানার মালিক নিম্নমানের পণ্য বাজারজাত করছে, তারা কাবু হয়ে যাবে। তা ছাড়া সরকারের আয়করসহ রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। সুতরাং দেশের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকান্ডে দেশের মানুষের কল্যাণে, গণস্বাস্থ্য সঠিক রাখার স্বার্থে ভেজাল প্রতিরোধ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনে একটি পরিপূর্ণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি বলে মনে করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ।