বৃষ্টিতে জলমগ্ন হচ্ছে নগরীর উঁচু এলাকাও

60

ভারী বৃষ্টিতে গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সচরাচর নি¤œাঞ্চলে এমন জলাবদ্ধতা হতে দেখা যায়। তবে ব্যতিক্রম হলো এবার উঁচু এলাকায়ও জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এজন্য অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল দুপুরে আগ্রাবাদ, হালিশহর, চান্দগাঁও, চকবাজর, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকা যখন হাঁটু থেকে কোমর পানিতে সয়লাব তখন স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহিত হচ্ছে নগরীর চাক্তাই খালে। এলাকা প্লাবিত হলেও বৃষ্টির পানি দ্রæত কর্ণফুলী নদীতে নেমে যাওয়াতে জলাবদ্ধতা হয়নি। যার কারণে অন্যান্য এলাকার মানুষ যখন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে তখন চাক্তাই এলাকার মানুষ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যান।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, অতীতেও আমরা দেখেছি কর্ণফুলীতে পানির লেভেল স্বাভাবিক হলেও শহরে অনেক সময় পানি জমে থাকে। এটা অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা হচ্ছে জল আবদ্ধ হয়ে যাওয়া বা জমে যাওয়া। এটা আগেও হতো, এখন একটু বেশি হচ্ছে। মুরাদপুর-দুই নম্বর গেটে ফ্লাইওভার হয়েছে। পিলারের কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। তা আর পরিষ্কার করা হয়নি। যার কারণে এখন বেশি পানি জমছে। চাক্তাই খালের ওইদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো। দ্রæত পানি নেমে যাচ্ছে। ফলে সেখানে নিচু হলেও পানি জমে থাকছে না, আবার পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক উঁচু এলাকাতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মো. নাসির উদ্দিন বলেন, চাক্তাই খালসহ প্রধান খালগুলোর আশপাশের এলাকা প্লাবিত হলেও পানি দ্রæত নেমে যাচ্ছে। আমি আজকেও (শনিবার) হালিশহর, বহদ্দারহাট, সিডিএ আবাসিক ও কাতালগঞ্জসহ অনেক এলাকায় গেছি। সেখানে দেখেছি, বাসাবাড়ির লোকাল যে ড্রেন সেগুলোতে পানি আটকে যাচ্ছে। মূল ড্রেনে বা খালে গেলে পানি আটকে থাকছে না। লোকাল ড্রেনগুলোর সংস্কার কাজ সিটি কর্পোরেশনের করার কথা। এগুলোর কাজ করলে পানি আটকে থাকার কথা নয়। তারপরও আমরা ইমারজেন্সি টিম নামিয়েছি। যেখানে প্রতিবদ্ধকতা হচ্ছে সেখানে আমাদের টিম কাজ করছে।
এদিকে গতকালও নগরীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব এলাকার মধ্যে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সিডিএ আবাসিক, শেখ মুজিব সড়ক, দুই নম্বর গেটসহ অপেক্ষাকৃত অন্যান্য উঁচু এলাকা রয়েছে। প্রবর্তক মোড় থেকে দুই নম্বর গেট, একইভাবে বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর এবং মুরাদপুর থেকে দুই নম্বর গেট অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা। স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টির পানি নিচু এলাকায় গিয়ে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু বাধার মুখে পড়ে উঁচু এলাকাতেও আটকা পড়ছে বৃষ্টির পানি। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম বলেন, দুই নম্বর গেট এলাকায় জাকির হোসেন রোড, খুলশী ও ওয়ারলেসের পানি পর্যন্ত নেমে আসে। বিশাল এলাকার পানি সিডিএ’র বক্স কালভার্টের ৬ ফুটের মুখ দিয়ে দ্রæত সরে যেতে পারে না। একইভাবে দুই নম্বর গেট থেকে মুরাদপুরে ড্রেনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে পানি। এখানে অনেক অবৈধ দখলদারও আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ চললেও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না। প্রতিটি ড্রেন ও খাল পরিষ্কার রাখা, খাল ও ড্রেনের মুখ খোলা রাখা গেলে জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলবে।