কেঁওচিয়ার চেয়ারম্যানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা

28

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সাতকানিয়ায় ১৯ ব্যক্তির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নকল বাদী সাজিয়ে প্রতারণা ও কাগজপত্র জালিয়াতি করে বিএস সংশোধনী মামলা প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই ব্যক্তিকে আসামি করে সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের নাজির মো.আবদুল হান্নান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওচমান আলী ও একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডেলিপাড়া এলাকার মৃত কালু মিয়ার ছেলে আজিজুল হক। আসামি আজিজকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নিকট সোপর্দ করেছেন পুলিশ। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রাখার কথা বলা হলেও সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। গত ২৫ এপ্রিল সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের বিচারক শরিফুল হকের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া চেয়ারম্যানপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন নামে এক ব্যক্তিসহ ১৯ ব্যক্তি ২০১৭ সালে তাদের জায়গার ভুল বিএস সংশোধনের জন্য সাতকানিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ২০২১ সালে সাতকানিয়ার সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে বদলি করার পর সাতকানিয়া আইজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এড. সুজন পালিত এ মামলাটি পরিচালনা করে আসছিলেন। পরে মামলাটি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে (এলএসটি) তালিকাভুক্ত হয়। বিষয়টি আদালতে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ৩০ ধারার জন্য তদবিরের দিন ধার্য্য ছিল। ৩১ জানুয়ারি বাদীপক্ষের আইনজীবীর অজান্তে ৫ নম্বর বাদী মো. বেলালসহ অপরাপর বাদীগণের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রতারকচক্র মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। অতপর আদালতের সেরেস্তা হতে ভুয়া ব্যক্তির মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ করে সাতকানিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে কবলা সৃজন করেন। পরে মামলার মূল বাদীগণ বিষয়টি জেনে ১১ মার্চ পূর্বের তারিখের আদেশ রহিত করে পূর্বের মামলার নম্বর বহালের আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে আদালত মূল বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে গত ২৫ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য্য করে। এর প্রেক্ষিতে ওই দিন সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের বিচারক শরিফুল হকের আদালতে আজিজের কাছ থেকে জবানবন্দি গ্রহণ করেন বিচারক। পরে আদালত জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আজিজকে গ্রেপ্তার করে সাতকানিয়া থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করেন।
আজিজ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, আবেদনসহ একটি আপোষনামা অপর আসামি ওচমান আলী ৩১ জানুয়ারির কয়েকদিন পূর্বে আদালতে জমা দেওয়ার জন্য আজিজকে দেন। ওচমান আলীর মধ্যস্থতায় আপোষ-মীমাংসায় বাদীর ভাইগণ টাকা গ্রহণ করে মামলা প্রত্যাহারে রাজি হন। টাকা গ্রহণের একটি ভিডিও ক্লিপ আজিজ আদালতে উপস্থাপন করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। সে অনুযায়ী বাদী মো. বেলাল আদালতে এসে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বলেছিলেন। তখনই একটি আপোষনামা ও মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আজিজকে প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে আসামি ওচমান আলী বলেন, এ বিষয়ে আমি বিন্দুমাত্র জড়িত নই। এসব কাজ নিয়ে জীবনেও আমি সাতকানিয়া আদালতে যাইনি। তবে এটা সত্য ওরা আমার অফিসে এসেছিল। আমার সামনেই টাকা বুঝে নিয়েছে, এতটুকু জানি এবং দেখেছি।
বাদী পক্ষের অপর আইনজীবী ও সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. মেজবাহ উদ্দিন কচির বলেন, একটি জালিয়াত চক্র রহিম বকসু ও মোজাফ্ফর আহমদ নামে দুইজন মৃত ব্যক্তি এবং মো. ইসমাইল নামে একজন প্রবাসীসহ ১৯ জনের স্বাক্ষর জাল করে মো. বেলাল নামে আসল বাদীর স্থলে অপর এক ব্যক্তিকে ভুয়া বাদী সাজিয়ে বিএস সংশোধন মামলা আমার অজান্তে প্রত্যাহার করে নেন। তিনি আরও বলেন, আজিজুল হক যে দলিলের গ্রহীতা তা জালিয়াতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই আদালতের ভাষায়, দলিলের গ্রহীতা ওচমান আলীসহ অন্যান্য বেনিফিসিয়ারীরা এর দায় এড়াতে পারেন না। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় আদালত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার আদালতের নাজির মো. আবদুল হান্নান বাদী হয়ে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজিজ নামে এক আসামিকে গতকাল শুক্রবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।