বিয়ের আগেই শুরু হোক প্যারেন্টিং ভাবনা

21

আবু ওবাইদা আরাফাত

আমাদের পাঠ্যপুস্তকে প্যারেন্টিং নিয়ে খুব বেশি আলোচনা নেই। ধর্ম কিংবা নৈতিক শিক্ষা বইয়ে প্যারেন্টিংয়ের সামান্য বিষয় আলোচিত হয়েছে। যার কারণে এই টার্মটা অনেকের কাছেই অপরিচিত কিংবা একেবারেই নতুন। অথচ চোখ বন্ধ করলেই অনুধাবন করা যায় প্যারেন্টিংয়ের গুরুত্ব কতোটা জরুরি। একজন মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া; সবক্ষেত্রেই প্যারেন্টিং সম্পৃক্ত। একজন আদর্শ শিশু ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহে ভালো কিছু বয়ে আনবে। সঠিক গাইডলাইনের মধ্য দিয়ে শিশুটি যখন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে, সে হবে পরিবার ও দেশের জন্য সম্পদ। প্যারেন্টিং হচ্ছে সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট ও ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্টের কলাকৌশল। এটিকে আমরা মানুষের আচরণগত বিজ্ঞানও বলতে পারি।
প্যারেন্টিং ভাবনাটা শুরু হওয়া উচিৎ বিয়ের আগে থেকেই। কারণ বিয়ের পর দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনে স্ত্রী অর্থাৎ সন্তানের মা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাত্রী নির্বাচনে দক্ষতা কিংবা সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে পারলে প্যারেন্টিং নিঃসন্দেহে সহজতর হবে। পারিবারিক ঐতিহ্য, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সদাচার এসব গুণ যার মধ্যে থাকবে একটি পরিবারকে সুখী সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে নিশ্চয়ই বেগ পেতে হবে না।
জীবনের অমোঘ নিয়মের চক্রে একসময়ের শিশু সময়ের ব্যবধানে যুবকে পরিণত হয়, এক পর্যায়ে বিয়ে করে সেও শিশুর পিতা হয়। চারপাশে দেখবেন অসংখ্য প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। সমাজের বিচারে কেউ সফল কেউ ব্যর্থ কিংবা হতাশায় নিমজ্জিত। এ মানুষগুলোর আজকের এই অবস্থানের পেছনে প্যারেন্টিং অনেকটা দায়ী। অভিভাবক হিসেবে যার প্যারেন্টিং দক্ষতা যত ভাল, তার শিশুর ভবিষ্যৎ তত উজ্জ্বল। পরিবারকে যদি আমরা গাড়ি মনে করি তবে সে গাড়ির চালকের আসনে আছেন মা-বাবা। চালক দক্ষতার সাথে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেই পরিবারে সুখের নহর বয়ে যায়। অন্যদিকে একটু অসাবধানতা কিংবা সামান্য অবহেলার কারণে ভুল হয়ে গেলে সময়ের ব্যবধানে বড় মাশুল গুণতে হবে। জীবনে কিছু ভুলের মাশুল পুরো জীবন দিয়েও শোধ করা যায় না। সময় তথা জীবনের অধ্যায়গুলো শেষ হয়ে গেলে তা আর ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই।
শিশু বেড়ে উঠার সাথে সাথে তাকে নিয়ে আপনাদের স্বপ্নগুলো সাজান। তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে বড় বড় স্বপ্নের পাশাপাশি সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। একজন আদর্শ মানুষ; মা বাবার গর্ব, দেশের সম্পদ, পরকালে আল্লাহর প্রিয়পাত্র। নিজেকে একজন আদর্শবান ও নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন সন্তানের মা-বাবা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করুন।
প্যারেন্টিংয়ে নৈতিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ- আপনার সন্তান দৃষ্টান্তমূলক ক্যারিয়ার গড়লো, বাড়ি-গাড়ির মালিক হলো অথচ মা বাবার প্রতি তার কোন ভালোবাসা নেই, দায়িত্ব-কর্তব্য নেই! বলুন, তার সফলতার কোন মূল্য আছে? সন্তানকে জীবনবোধ, মূল্যবোধ ও জীবনের লক্ষ্য এবং পরকালের জবাবদিহিতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। শিশুকাল থেকেই এসব বিষয়গুলো চর্চা করতে হবে।
নির্ধারিত হায়াত পূর্ণ করে আপনি মৃত্যুবরণ করলে আপনার সন্তানেরাই আপনার ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। এই সন্তানেরা অপকর্মে জড়িত হয়ে পত্রিকার শিরোনাম হলে আপনি মরেও শান্তিতে নেই! আর আদর্শবান সন্তানের সৎকর্মগুলো আপনাকেও বাঁচিয়ে রাখবে সমানতালে, স্মরণ কালে।
মানুষের জীবন মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। আপনি পিতা হিসেবে আপনার সন্তানের প্রতি যে ত্যাগ স্বীকার করবেন, আন্তরিক ও যতœবান হবেন ঠিক আপনার সন্তানও আপনার বৃদ্ধ সময়ে একইভাবে যতœবান হবেন, একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। সন্তান নৈতিক শিক্ষায় লালিত হলে পূর্ণ বয়সে চমৎকার ফল দিবে যা প্রতিটি মা-বাবার জন্য গর্বের ও আনন্দের।
লেখক: প্রাবন্ধিক, সম্পাদক- বাঁশখালী টাইমস