বিনা অনুমতিতে ক্লাসে ছাত্রলীগ নেতা প্রতিবাদ করায় শ্রেণি শিক্ষকের সাথে মারমুখি আচরণ

29

নিজস্ব প্রতিবেদক
ওমরগণি এমইএস কলেজে ক্লাস চলাকালে রুমে ঢুকে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হয়ে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করেছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। ওই ছাত্রলীগ নেতা একাদশ শ্রেণির কক্ষে ঢুকে পাঠদানরত শিক্ষিকা ববি বড়–য়াকে মারতে কয়েকদফা তেড়ে যান বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্র রাকিব হায়দার ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। ঘটনার পরপরই শিক্ষকরা ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হন এবং ক্ষোভ জানাতে থাকেন। কলেজ অধ্যক্ষ তাৎক্ষণিক ছাত্রলীগের নেতাদের মাধ্যমে রাকিবকে ডেকে আনেন। পরে শিক্ষিকা ববি বড়–য়ার পা ধরে ‘মা ডেকে’ ক্ষমা চান।
এমইএস কলেজের অধ্যক্ষ আনম সরোয়ার আলম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের এক ম্যাডাম ক্লাস নেয়ার সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ বাড়াবাড়ি করেছে। তারা প্রথমবর্ষের শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে চাইলে এক ছাত্রকে ম্যাডাম দাঁড় করান। এ নিয়ে একজন বাড়াবাড়ি করে। এরা সবাই কলেজের সাবেক ছাত্র। পরে আমি সবাইকে ডাকালে তারা এসে ম্যাডামের কাছে মাফ চেয়েছে।’
এমইএস কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা ববি বড়–য়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি ক্লাস করার সময় ছেলেটি আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। বহিরাগত ছেলেটি আমাদের কলেজের ছাত্র কিনা তাও জানি না। ক্লাস চলাকালে হঠাৎ কক্ষে ঢুকতে চায়। আমি বাধা দিলে কথা কাটাকাটি হয়। আমার শিক্ষকতা জীবনের ১৩ বছরে কোনো ছাত্র এভাবে অনুমতি ছাড়া ক্লাসরুমে ঢুকে অসদাচরণ করেনি। একজন শিক্ষক হিসেবে যেটি আমার জন্য বিব্রতকর। আমাদের অধ্যক্ষ স্যার তাৎক্ষণিক ছেলেটিকে ডেকে এনেছেন। পরে আমার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে। আমি ভাবছি, আমাদের প্রজন্ম কোনদিকে যাচ্ছে। আমর মনে হয় ভালো প্রজন্ম তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছি।’
ছাত্ররা জানান, ঘটনার পরপরই কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক ও ইলিয়াছ উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা অভিযুক্ত রাকিব হায়দারকে ওই শিক্ষিকার সামনে নিয়ে যান এবং পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।
এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক বলেন, ‘সামান্য ঘটনা থেকে তর্কাতর্কি হয়েছে। পরে আমরা মীমাংসা করে দিয়েছি।’
এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের দুইজন নেতা বলেন, রাকিব হায়দারের বিরুদ্ধে অতীতে অস্ত্র উঁচিয়ে ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ আছে। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের বোনকে জয়ী করতে গোসাইডাঙ্গা ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে রাকিব অস্ত্র প্রদর্শন করেছিল। সে ঘটনায় আস্কারা পেয়ে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। সেসময় ঘটনার পর তাকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এমন পুরস্কার দেয়ার কারণেই এবার রাকিব একজন শিক্ষিকাকে মারতে গেল। এবার চাইলে নগর ছাত্রলীগ তাকে ডবলমুরিং ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করতে পারে। কিন্তু সেটি করবে না। কারণ, এই রাকিবদেরকে ব্যবহার করেই অনেকে নেতা বনে গেছেন।