বাড়ছে গৃহকর, বাড়ছে টেনশন সেবা বাড়ছে তো?

29

ওয়াসিম আহমেদ

বর্ধিত গৃহকরের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে মন্ত্রণালয়। ফলে আয় বাড়ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। চট্টগ্রাম বন্দরের মোট আয়ের এক শতাংশ রাজস্ব হিসেবে পাবে সংস্থাটি। তা আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সবমিলিয়ে আর্থিক সংকটে প্রকল্প নির্ভর উন্নয়ন কর্মকান্ডের সেবা সংস্থায় রূপ নেওয়া সিটি করপোরেশন কি নাগরিক সেবা জোরদারে ঘুরে দাঁড়াবে? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে নগরজুড়ে। অপরদিকে করের ‘বোঝা’ ভারী হতে পারে এ শঙ্কায় টেনশন বাড়ছে নগরবাসীর।
একই প্রশ্ন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে করলে তিনি পূর্বদেশকে জানান, সিটি করপোরেশনকে নিজস্ব আয়ের উপর চলতে হয়। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে অনেক ব্যয় হয়। আর্থিক সংকটে ভুগছে সংস্থাটি। তাই আইন অনুযায়ী কর আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এটিই আয়ের প্রধান উৎস। আইন অনুযায়ী গৃহকর আদায়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। তবে স্পষ্ট করে বলতে চাই, মানুষের গৃহকর বাড়বে না । যা আছে তাই থাকবে। তবে গৃহকরের আওতা বাড়ানো হবে। এখন এক তলা ভবনের কর দিলে, যতি ভবনটি বহুতল হয়, তাহলে বর্ধিত অংশ গৃহকরের আওতায় আনা হবে। সেখানে কারো কোনো আপত্তি থাকলে আপিল করবে, মানবিক দিক বিবেচনায় সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে নগরবাসীকে। তাই গৃহকর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ হিসেবে ধরা হয় তিনটি: রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সংস্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশকনিধন এবং সড়ক আলোকায়ন। নিজস্ব আয়ের উপর দাঁড়িয়ে নগরসেবায় দেশের আদর্শ সিটি করপোরেশনের গৌরব অর্জন করা প্রতিষ্ঠানটিই নানা সংকটে ধুঁকছে! কেবলমাত্র প্রকল্পভিত্তিক উন্নয়ন, অপরিকল্পিত পরিচ্ছন্নতা কর্মকান্ড, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় সাধনে অভিভাবক হয়েই অভিযোগকারীর ন্যায় আচরণ, কাউন্সিলরদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নগর ও নাগরিক সেবা থেকে দূরে সরছে সিটি করপোরেশন। এমনটা মনে করছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নগরবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদসহ নানা সেবা নিতে মানুষের হয়রানির শেষ নেই। মসৃণ সিরাজউদ্দোলা সড়কের বাইপাস সড়ক দিদার মার্কেট দিয়ে ভেতরে গেলে দেখা মেলে পুরো উল্টো চিত্র। ওয়াসার কাটাকাটি আর ভাঙা সড়কে হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। আশপাশের নিরাপদ হাউজিংসহ বেশ কয়েকটি আবাসিকের সড়কের বেহাল দশা। এই যেন প্রবাদ বচন, ‘বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’ এর সত্যিকারের উদাহরণ। এ শুধু ১৭ নং ওয়ার্ডের চিত্র নয় এটি নগরীর প্রায় সবক’টি ওয়ার্ডের ভেতরের সড়ক, অলিগলির চিত্র। একেতো ওয়াসা কাটছে অন্যদিকে সিটি করপোরেশন প্রকল্প অনুমোদন হলে মেরামত করার চিন্তায় সময় পার করছে। মাঝের সময়টায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের সূত্র বলছে, গত পাঁচ বছরে নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়াও অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা সড়ক উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ পেয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পই শেষের দিকে। তবুও কেন সড়কের বেহাল দশা? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার রাস্তায় কাটাকাটিকে দায়ী করছেন দায়িত্বশীলরা। আবার দীর্ঘদিনের পুরোনো সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিও কম। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় নগরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সামনের বর্ষা মৌসুমেও এ ভোগান্তি থেকে মুক্তির সম্ভাবনা কম।
মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরজীবন। তবুও নিরাপদ কীটনাশকের সন্ধানে ঘুরছে চসিক। ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ মশার প্রজনন স্থান নষ্ট করতে তেমন জোরালো কোনো কর্মসূচি না থাকলেও পরীক্ষামূলক মশার ওষুধ ছিটানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে সান্ত¦না দেওয়ার চেষ্টা মেয়র, কাউন্সিলর ও দায়িত্বশীলদের।
সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন জানান, নগরবাসীর তো বেশি চাহিদা নেই বাসস্থান, শিক্ষা ও নিরাপদে চলাফেরার নিশ্চয়তা আর সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কিন্তু এসব সুবিধা তো পরিপূর্ণভাবে পাচ্ছেন না তাঁরা। তা ছাড়া সড়কে বাতি জ্বলে না ঠিকমতো, ফুটপাতে হাঁটার সুযোগ নেই। আর নগরবাসীর সুষ্ঠুভাবে বসবাসের জন্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের যে সমন্বয় থাকার কথা, সেটিও নেই। ফলে উন্নয়ন কাজ নিয়ে দুর্ভোগে ভুগতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।