বাস মালিককে কারাদন্ড দেয়ায় গণপরিবহন বন্ধ!

30

বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ফিটনেসবিহীন একটি বাসের চালক, হেলপার এবং মালিককে কারাদন্ড দেয়ার প্রতিবাদে নগরীতে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিকরা। গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ৮টা থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জনসাধারণকে জিম্মি করে এহেন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রশাসনকে কোণঠাসা করতে চান গণপরিবহন মালিকরা। এর আগে গত ঈদুল ফিতরের সময়ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অপরাধে কিছু গাড়িকে জরিমানা করার পর পরিবহন ধর্মঘট করে আন্দোলন করেন তারা। পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। অথচ সচেতনতার অভাব এবং রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন নিরীহ মানুষ।
এদিকে বাস মালিককে না ছাড়লে কোনো ধরনের গণপরিবহন চলাচল করবে না বলে হুমকি দিয়েছেন মালিকরা।
বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, গাড়ির অসঙ্গতি থাকার কারণে একটি বাসের চালক, হেলপার এবং মালিককে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে গণপরিবহন মালিক-চালকদের অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও কোন কথা তারা শোনেননি।
গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে গাড়ি ১০ নং রুটের চট্টমেট্রো জ ১১-০৪১১ নম্বরের বাসটিতে নানা অসঙ্গতি পাওয়ায় বাস চালক, হেলপার এবং মালিককে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পরিবহন মালিক ও নেতারা বৈঠকে বসে রাত ৮টা থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে পরিচালিত বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক। আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে ১০ নং রুটের চট্টমেট্রো জ ১১-০৪১১ নম্বরের বাসটি কালুরঘাট না গিয়ে চান্দগাঁও থানার সামনে থেকে ঘুরিয়ে দেয়। পরে বহদ্দারহাট মোড় থেকে গাড়িটি আটক করা হয়।
আটকের পর দেখা যায়, বাসটির পিছনের গ্লাসটি প্রায় পুরোটাই ভাঙা। যাত্রীদেরকে বাসের পিছনের অবস্থা দেখানো হলে তারাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং চালক-মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
পরে বাসটির মালিককেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। তখন এরকম ঝুঁকিপূর্ণ বাস রাস্তায় কেন নামানো হয়েছে, প্রশ্ন করেন ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু মালিক ও চালক কেউই এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। এ অবস্থায় ফিটনেসবিহীন বাস রাস্তায় চালাতে দিয়ে যাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলার অপরাধে মোটরযান আইনের অধীনে উক্ত বাসের চালক মো. শামীম উদ্দিন (২৫) ও হেলপার মো. আলমগীরকে (৪০) এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। একই সাথে বাসের মালিক মো. মনির হোসেনকে (৩৫) ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে গণপরিবহন চলাচল না করায় নগরীর বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত মানুষ। রবিবার রাত ৯টার দিকে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত চাকরিজীবী আব্দুল আজিজ সুমন বলেন, আগ্রাবাদ থেকে মুরাদপুর যাবো। এখন কোন গাড়ির দেখা নেই। পূর্বঘোষণা ছাড়া গণপরিবহন বন্ধ রাখা মানে আমাদের বিপদে ফেলা। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সিএনজি ট্যাক্সিও ভাড়া বেশি দাবি করছে। এখন নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় দেখছি না।
কারাদন্ড দেওয়াকে ইস্যু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল পূর্বদেশকে বলেন, গাড়ির মালিককে কেন আটক করেছে? মালিকরা আছে বলেই নগরে গণপরিবহনগুলো চলাচল করছে। আটক মালিককে না ছাড়া পর্যন্ত মহানগরে গণপরিবহন চলাচল করবে না।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক পূর্বদেশকে জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ’র এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতিপূর্বে চালক-মালিক সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা কর্ণপাত করেননি।
তিনি আরও বলেন, ফিটনেসবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামালে এখন থেকে চালক ও হেলপারের পাশাপাশি গাড়ির মালিককেও আইনের আওতায় আনা হবে।