বাসা-বাড়ির পয়:বর্জ্যে হাত দিচ্ছে ওয়াসা

35

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন সুয়্যারেজ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলমান আছে। চলতি মাস থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ। পাইপলাইন স্থাপনের সাথে সাথে এলাকার বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্যরে সাথেও সংযোগ স্থাপন করবে সংস্থাটি। ফলে প্রকল্প এলাকার প্রতিটি বাসা-বাড়ির সাথে সুয়্যারেজ প্রকল্পের সংযোগ স্থাপন হবে। এতে সেফটিক ট্যাংকবিহীন সরাসরি পয়ঃবর্জ্য চলে যাবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে।
সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি ছাড়া বাসা-বাড়ির বাকি সবধরনের পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে সুয়্যারেজ লাইনে চলে যাবে। মূলত প্রতিটি ঘরে তিন উৎসের পানি আসে। বৃষ্টির পানি, ঘরের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ও গোসলখানার পানি এবং টয়লেটের লাইনের পানি ও বর্জ্য। সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় সর্বোচ্চ ২০ ইঞ্চি ও সর্বনি¤œ ৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ছাড়া বাকি সব পানি ও বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে যাবে। সেখান থেকে পরিশোধন হয়ে একটি অংশ পরিশোধতি পানি হয়ে সাগরে এবং আরেকটি অংশের বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি হবে। এজন্য প্রকল্প এলাকার প্রতিটি বাসা-বাড়ির সাথে ক্রমান্বয়ে পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। সেই পাইপলাইনের মাধ্যমে বর্জ্যগুলো ট্রিটমেন্ট প্লান্টে চলে যাবে। চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও সুয়্যারেজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। চলতি মাস (মার্চ) থেকে আমরা পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করবো। পাইপলাইন স্থাপনের সাথে সাথে বাসা-বাড়ির সংযোগ দেওয়া হবে। যে রাস্তা দিয়ে যাবে, তার আশপাশের এলাকার সবগুলো বাসা-বাড়িতে সংযোগ যাবে। পাইপলাইন এবং সংযোগ একসাথে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুয়্যারেজ প্রকল্প একদম নতুন। এখনো মানুষ এ বিষয়ে অনেক কিছু জানে না। আমরা জনসচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারণা শুরু করছি। স্থানীয় কাউন্সিলর, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করছি। যার মাধ্যমে মানুষ বিষয়গুলো জানবে। আমরা যে মানুষের বাসা-বাড়িতে যাবো, কিজন্য যাবো ? কি সুবিধা তারা পাবেন? কেন এটা দরকার? এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
সুয়্যারেজ মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে নগরীর প্রথম সুয়্যারেজ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের প্রথম সুয়্যারেজ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির নগরীর একটি অংশের (উত্তর-পশ্চিম অংশ) জন্য নেয়া হয়েছে। হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় ওয়াসার ১৬৫ একর জায়গার উপর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হবে। নগরীর ৬ ভাগের এক ভাগ লোকের জন্য নেয়া এই প্রকল্পে পয়ঃবর্জ্য অপসারণ করা হবে পাইপলাইন ও খালের মাধ্যমে। এসব বর্জ্য থেকে উৎপাদন করা হবে কম্পোস্ট সার। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসে প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে কাজ শেষ করে তিনটি প্যাকেজে প্রকল্পের কাজের দরপত্র আহবান করে। তিনটি প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে, টিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পাইপলাইন স্থাপন ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় প্যাকেজ হিসাবে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলতি মাসে শুরু করতে যাচ্ছে ওয়াসা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, চট্টগ্রামের প্রথম সুয়্যারেজ প্রকল্পের পাইপলাইনের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রতিটি বাড়িতে সংযোগ স্থাপন করা হবে। এজন্য জনসচেতনতা জরুরি। এজন্য স্টেক হোল্ডারদের সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সুয়্যারেজ নিয়ে মানুষের মধ্যে যেন কোনোধরনের ভীতি তৈরি না হয় সেজন্য এসব কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
সুয়্যারেজ মাস্টারপ্ল্যানে পুরো নগরীকে ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জোনকে আলাদা আলাদাভাবে সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে একনেকে পাস হওয়া ডিপিপিতে সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আছে নগরীর হালিশহর, সাগরিকা, সল্টগোলা ক্রসিং, শেখ মুজিব রোড, কদমতলী, সদরঘাট, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী, জামালখান, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা। পুরো এলাকার সুয়্যারেজ বর্জ্য পাইপলাইন ও খাল-নালার মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা হালিশহর কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধনের কথা বলা হয়েছে। হালিশহর এলাকায় ১৬৫ একর জায়গায় প্রকল্পটি স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিসলাইন ও ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার পয়ঃশোধনাগার স্থাপন করা হবে। বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ধাপে ধাপে পুরো নগরীতে সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু করা হবে। ছয়টি জোনের প্রতিটির জন্য পৃথক পৃথক সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকবে। আবার এ ছয়টি জোনের সেফটিক ট্যাংকের শক্ত বর্জ্য পরিশোধনের জন্য থাকবে দুইটি শোধনাগার। সুয়্যারেজ লাইনে বৃষ্টি, গৃহস্থালি ও টয়লেটের পানি আসে। প্রকল্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ছাড়া বাকি সব পানি পাইপের মাধ্যমে প্রতি ঘর থেকে সংগ্রহ করা হবে। এসব বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে চলে যাবে। সেখানে পরিশোধন হয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা হবে।
উল্লেখ্য, সচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভা করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আগামী মঙ্গলবার জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের সাথে প্রথম মতবিনিময় সভায় মিলিত হবে সংস্থাটি। মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রধান অতিথি এবং গেস্ট অব অনার হিসাবে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম।