বাঙালির মানস গঠন

42

 

বিংশ শতাব্দীর দুটো গবেষণা মূলক প্রবন্ধের বই বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার চিন্তকদের ব্যাপক ভাবে আলোড়িত করেছে। বই দুটোর লেখক হলেন আহমদ ছফা ও অশোক রুদ্র। বই দুটোর একটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮১সালে কিন্তু মূল লেখাটি রচিত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। মূল প্রবন্ধটি রচনার একটা ইতিহাস আছে। একদিন সকাল বেলা লেখক রমনা পার্কে প্রাতঃ ভ্রমণে গেলে সেখানে তিনি এক অদ্ভুত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি দেখেন যে বাংলাদেশের এক মুক্তচিন্তক আবুল ফজল সাহেব মাথায় টুপি পড়ে সঙ্গে আর একজন লোক নিয়ে দ্রæত গতিতে হেটে যাচ্ছেন। লেখকের সামনাসামনি হলে তিনি আবুল ফজল সাহেব কে জিজ্ঞেস করলেন স্যার আজ কোন দিকে তসরিফ আনিবেন। তখন আবুল ফজল সাহেব বললেন আমরা তুরাগে সিরাত মাহফিলে যাবো। আমার সাথে আবু তোয়াব সাহেব ও যাবেন। সময়টা হলো ১৯৭৬ সালে। সামরিক শাসক দুজনেই বিচারপতি আবু সাদাত মোঃ সায়েম সাহেবের উপদেষ্টা মÐলির সদস্য। এখানে উল্লেখ্য যে আহমেদ ছফার সাথে আবুল ফজল সাহেবের আগে থেকে সম্পর্কিত। দুজনেই একই থানার বাসিন্দা এবং দুজনেই রমনায় প্রাতঃ ভ্রমন করতেন সে সময়। আবুল ফজল সাহেব বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ড. কুদরত-এ- খুদার নেতৃত্বে এক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। সেই শিক্ষা কমিশনের সময় যখন প্রশ্ন উঠে মাদ্রাসা শিক্ষা কে মুলধারা শিক্ষার সাথে একত্রিত করে একমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার— তখন মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে আবুল ফজল সাহেবের জোরালো ভূমিকার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যে ‘মৃতের আত্মহত্যা ‘নামে এক প্রবন্ধ/গল্প লেখেন যা সেই সময় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সাধারণত সবাই তাকে নাস্তিক পÐিত হিসেবে জানতো।যদিও বা তার শিক্ষা জীবন কেটেছে মাদ্রাসায়।
আবুল ফজল সাহেব এর নতুন রুপ দেখে আহমদ ছফার মনের মধ্যে প্রচÐ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাঙালি মুসলমানের প্রকৃত স্বরূপ অন্বষেন করার। তিনি মনের সেই আলোড়ন নিয়ে এক রাতে লিখে ফেলেন ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ শীর্ষক বিখ্যাত প্রবন্ধ। উক্ত প্রবন্ধে তিনি বাঙালি মুসলমানের হাজার বছরের বিবর্তন,তাদের পশ্চাদগামীতার কারণ গুলো অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন । সংক্ষেপে উক্ত বইয়ের মুল বিষয় বস্তু হলো যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির গ্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মুল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টি সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানেনা, নিজের ভালো মন্দ নিজে নিরুপণ করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ বা শোনা কথায় সমস্ত কাজ কারবার চলে,তাকে খোলা থেকে আগুনে কিংবা আগুন থেকে খোলায় পর্যায় ক্রমে লাফ দিতে হয়।
তিনি বাঙালি মুসলমানের পিছিয়ে থাকার কারণ গুলো গভীর অন্তলোক দিয়ে বর্ণণা করেছেন। এই অঞ্চলের মানুষেরা দীর্ঘ সময় যে বৈষম্যের মধ্যে দিয়ে গেছে। রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে, বাঙালি মুসলমানের মানসিক ধৈন্যতা সহ সব কিছুকেই এর জন্য দায়ী করেছেন। বাংলাদেশ নামক এইবদ্বীপকে বাস যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘ কয়েক হাজার বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছেন অন্তজ শ্রেণীর জনগোষ্ঠী। কিন্তু তারা শুধু শোষণ আর নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। বারবার তারা ধর্ম পরিবর্তন করে ও সুস্থ জীবনের দেখা পায়নি। যে কারণে তারা সুস্থ মানসিকতার মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে পারেনি। তিনি মনে করেন যে এই সব কারণে এই অঞ্চলের মানুষেরা স্বাধীন চিন্তাকে ভয় পায়,মুক্ত চিন্তা কে ভয় পায়। বাঙালি মুসলমানরা অন্যের সংস্কৃতিকে নিজের সংস্কৃতি বলে মনে করে। যে কারণে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তা নির্ধারণ করতে পারে ন। যে কারণে তারা আত্মপরিচয়ের সংকটে নিপতিত। অর্থাৎ তাদের মধ্যে যুক্তিবাদী বিজ্ঞান ভিত্তিক মনন গঠিত হয়নি ।
প্রফেসর ড.আনিসুজ্জামান, ড. সলিমুল্লাহ খান সহ অনেক বুদ্ধিজীবী মনে করেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা বই হলো আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’।
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মীর মশাররফ হোসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন আহমদ ছফা। তার লেখায় বাংলাদেশী জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণের প্রাধান্য। রাজ্জাক সাহেব মনে করেন ছফার রচনাবলি গুপ্তধনের খনি।প্রথাবিরোধী এই লেখকের রচনা কর্ম অনেক লেখক,শিল্পী,বুদ্ধিজীবীকে অনুপ্রাণিত করে-তাদের মাঝে অন্যতম হলেন হুমায়ূন আহমদ, ফরহাদ মজহার, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, তারেক মাসুদ, ড. সলিমুল্লাহ খান।
বাংলাদেশের জন্ম পঞ্চাশ বছর। একটি রাষ্ট্রের জন্মের সাথে একজন চিন্তক অসামান্য ভাবে বেড়ে উঠেছেন। সমাজ রাজনীতি রাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর ভাবনার দুরদর্শিতার উজ্জ্বল আলো ভাবিয়ে তোলে।
এখানে আমি ২০০১সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিদ্যাধর সুর্য প্রসাদ নাইফলের দুটো বই এর বিষয় আলোচনা করতে চাই । তিনি ইরাক,ইরান,পাকিস্তান,ইনেদানেশিয়া ও মালয়েশিয়া ভ্রমণ করে সেখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর জীবনমান নিয়ে দুটো বই লিখেছেন । বইয়ের নাম হলো ১] Among the believers,An Islamic Journy 2] Bllief:Islamic Excursions emong the Converted People’s বই দুটোর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ইসলাম আসলে ঔপনিবেশিকতার চেয়েও খারাপ। ইসলাম ধর্ম মেনে নেওয়ার সাথে সেই জাতিগোষ্ঠী তার অতীতকে অস্বীকার করা। এই যেন বলা, আমার পূর্ব পুরুষের কোন সংস্কৃতি ছিলো না ।
দ্বিতীয় বইটি যিনি লিখেছেন তিনি একজন বিখ্যাত পশ্চিম বাংলার বাঙালি অর্থনীতিবিদ ও প্রগতিশীল চিন্তার ধারক অশোক রুদ্র। তার আর এক বিখ্যাত বইয়ের নাম হলো ‘ভারতের কৃষি অর্থনীতি’। তাঁর ‘ব্রাহ্মণ্য ভাবধারা ও আধুনিক হিন্দু মন’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৩ সালে । প্রকাশক হলেন পিপলস বুক সোসাইটি,১২সি বঙ্কিম চ্যাটার্জি ষ্ট্রীট, কলকাতা। এই বইয়ের মুল বিষয় বস্তু হলো ধর্ম সংক্রান্ত,কিন্তু তার পেছনে লেখকের যে অনুপ্রেরণা কাজ করে তা হলো রাজনৈতিক । লেখকের ধারণা,সমাজ কে পরিবর্তন করার জন্য শুধু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রের কাঠামোর পরিবর্তনের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়, মানুষের মন পরিবর্তনের কাজও গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকের মতে, আধুনিক ভারতবাসীর মনকে বুঝতে তার উপর ব্রাহ্মণ্য ভাবধারার প্রভাবকে ভালো করে বোঝার প্রয়োজন আছে। মাক্সীর্য় সমাজ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে সুপার স্ট্রাকচার-এর যে ধারণা তার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ইডিয়োলাজ যাকে ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে লেখক ব্রাহ্মণ্য ভাবধারা বলে অবহিত করেছেন। সেই ইডিয়োলজির বিশ্লেষণের এক প্রাথমিক প্রয়াস এই গ্রন্থটি।
ভারতীয় সমাজ জীবনে যত দোষত্রুটি সবেরই মুল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদে নিহিত। আজকে বাঙালি মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির সব রোগের বীজ বপন করেছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত—এরকম একটা ধারণা আজকাল খুবই সাধারণ ভাবে গৃহীত। এই মতের সাথে লেখকের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার মতে ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যের প্রভাবের তুলনায় পশ্চিম থেকে আগত যে কোন প্রভাবই আজ অবধি অত্যন্ত নগণ্য রয়ে গেছে ।
তিনি উল্লেখ করেন,তপস্যার দ্বারা জবরদস্তি করে বর আদায় করা যায় এই ধারনাটাও আধুনিক ভারতবর্ষের রাজনীতির ক্ষেত্রে খুবই প্রকট ভাবে বর্তমান। উদাহরণ হিসেবে ভাবা যাক গান্ধীর দ্বারা প্রবর্তিত অনশন ধর্মঘটের পদ্ধতি। দাবিটা কি,তার যৌক্তিকতা বা নৈতিকতা কতটা,দাবির সমর্থনে জনমত কতটা আছে,দাবি মেটালে সমাজের উপকারই বা কতটা হবে আর অপকারই বা কতটা হবে—এ সব কিছুই ধর্তব্যের মধ্যে নয়। উপবাস করে মহাত্মাজীর শরীর ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে,তাঁর ওজন কমছে ,তার নাড়ির গতি শ্লথ হয়ে আসছে। সুতরাং আগে হোক পরে হোক,ব্রিটিশ সরকারের আসনকে টলতে হবেই যেমন টলত ব্রাহ্মার আসন,বিষ্ণুর আসন,অন্য দেব দেবীর আসন। ভারত বর্ষের জনগণও এই পদ্ধতির মধ্যে বেশ এক সুবিধা জনক অস্ত্র আবিষ্কার করেছে। কথায় কথায় অনশন ধর্মঘট করে দাবি আদায় করে নেওয়ার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক যে রেওয়াজ ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে,তারও মধ্যে ঐ একই তপস্যার প্রতি আস্থা ।
ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত ধর্মীয় এক ‘শটকাট’ পথ হলো রক্তের আহুতি দিয়ে। পশুবলি তো উপাচার হিসেবে খুবই সাধারণ ছিলো।কিন্তু বলির শ্রেষ্ঠ ফল পাওয়া যেত নরবলি দিয়ে । এই আদিম ধারার সঙ্গে ও আধুনিক ভারতবর্ষীয় মনের যোগ খুঁজে পাওয়া যায় বৈপ্লবিক রাজনীতির ক্ষেত্রে । এদেশে জাতীয়তাবাদর জন্মই হয়েছিল ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যের ভক্তি ও তৎসংশ্লিষ্ট বলিদানের ধারাকে সুচতুর ভাবে ব্যবহার করে।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমাংশে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীরা বঙ্কিম চন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রকে অনুসরণ করে দেশকে কল্পনা করেছিলেন বাঙালির জনপ্রিয় দেবী মাতৃরুপিনী দুর্গা ও একই কালে হিংগ্রতার প্রতিমূর্তি কালী বা চন্ডীর আকারে । তিনি উল্লেখ করেন ‘শক্তি ও ধ্বংসের দেবী কালী, দুর্গা বা ভবানীর নিকট আত্ম নিবেদন করিয়া বিপ্লবীরা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করিতেন। এই ধ্বংসের দেবতাদের সন্তুষ্টির জন্য বলির প্রয়োজন, অত্যাচারী ইংরেজ কর্মচারীরাই হইবে সেই বলি। এই ধারা সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যেই সীমিত থাকেনি । সুবাস বোস উদাত্ত কন্ঠে জনগনকে সম্বোধন করে বলেছিলেন— এরাব সব blood,I will give you freedom.myevm সুবাস বোস ও ছিলেন কালী ভক্ত। এই সবই নির্ভুল ভাবে প্রমাণ করে যে বিশুদ্ধ রাজনৈতিক চিন্তার উন্মেষ এ দেশে এখনও ঘটে উঠতে পারেনি,ধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তিনি মনে করেন ভারতীয় মানুষের মনে দুইটি নৈতিক প্রবনতাকে দৃঢ় ও গভীর ভাবে প্রোথিত করেছিল। এই প্রবনতা দুটো হলো বৈষম্যকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া এবং বশ্যতা স্বীকারের মনোভাব—যে কোন অবস্থা বিনা প্রতিবাদে মেনে নেওয়া। এর পেছনে ছিল—দৈবের ধারনা। আর একটি দার্শনিক তত্ত্ব—কর্মফল। কৈকেয়ীর বনবাসের নির্দেশ রাম সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে যান এই বলে ‘জীব স্বভাবতই পরাধীন। সে স্বেচ্ছানুসারে কোন কার্য করতে পারে না।’ কিন্তু লক্ষণ তীব্র ভাবে এর প্রতিবাদ করে বলেন,’যাহারা বীর ও সংসারে পুরুষ বলিয়া সম্মানিত তাহারা কখনো দৈবের উপাসনা করেনা। যিনি নিজ পুরুষকারের দ্বারা দৈবকে বাধিত করিতে সমর্থ তিনিই দৈবের জন্য কদাচিৎ হতাশ হইলে ও অবসন্ন হন না। কিন্তু লক্ষণ রামকে দিয়ে তার কথা মানাতে পারেনি। ভারতবাসীর মনকে গঠন করেছে রামের আদর্শ লক্ষণের আদর্শ নয়। দৈবকে মেনে নেওয়া এবং বশ্যতা স্বীকার করাই হিন্দুদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। হিন্দু মনে বিদ্রোহের কোন স্থান কোন দিন ছিল না। ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যে প্রমথিউস এর সমজাতীয় কোন দেবদ্রোহী পৌরানিক চরিত্র নেই ।
সমগ্র ব্রাহ্মণ্য মানসে যা গভীরে প্রোথিত আছে তাহলো একই কালে বিজ্ঞানে আশা রাখা ও কুসংস্কারের দ্বারা চালিত হওয়া। একই কালে আধুনিকতাকে গ্রহণ করা আবার রক্ষণশীলতার সাথে আপোস। লেখক মনে করেন এই অন্ত বিরোধের অন্যতম কারণ সামাজিক অবস্থান ভিত্তিক ধর্ম ও পরম ধর্মের মধ্যে সংঘাত। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রচারক মুনি ঋষিরা ছিলেন ভন্ড,তারা যা প্রচার করতেন তাতে তারা বিশ্বাস করতেন না। এই সব কারণে হিন্দুদের মনস্তত্ত¡ যাকে ঝপযরুড়ঢ়যৎবহরধ বলে তার দ্বারা আক্রান্ত।
কেন বাঙালির মননে বিজ্ঞান, যুক্তিশীলতা স্থান পায়নি ? তিনটি নবজাগরণের পর ও কেন তারা কুসংস্কারে আক্রান্ত রয়েছে ? সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন সমাজ কে প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হলে চারটি দিকে উন্নতির চেষ্টা করতে হবে। ইউরোপের বৈপ্লবিক ইতিহাসে চতুর্বিধ বিপ্লবের পরিচয় পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক বিপ্লব যা ইউরোপে শিল্প বিপ্লব নামে অবহিত। রাজনৈতিক বিপ্লব—যা অষ্টাদশ শতাব্দী ফ্রান্সে ও বিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ায় ঘটেছিল। বৈজ্ঞানিক বিপ্লব—যা পরবর্তী কালে শিল্প বিপ্লবকে সম্ভব করেছিল এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লব—যা রেনেসাঁসের যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত উত্থান পতনের বন্ধুর পথে আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে।
তাই উভয়ই মনে করেন বাঙালির বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তিবাদী মানস গঠনের জন্য দরকার একটা জাগরণ। যা সাংস্কৃতিক বিপ্লব হিসেবে অবহিত হইবে। বাঙালির মনের কুপমুন্ডকতা,পশ্চাদপদতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তিবাদী মানস গঠিত হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক