বহিরাগতের খোঁজে র‌্যাব পুলিশ

23

করোনা-বিঘ্নিত সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে নগরীতে আসা বহিরাগত লোকজনের খোঁজে বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি ও আবাসিক হোটেলসহ সন্দ্বিগ্ধ স্থানগুলোতে হানা দিচ্ছে র‌্যাব-পুলিশ। এছাড়া, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে অন্তরায় হতে পারে- এমন পেশাদার অপরাধী ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাচনী মাঠে র‌্যাব-পুলিশের দৃশ্যমান তৎপরতার পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে গুজব বা উস্কানি ঠেকাতে মনিটর করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও। অভ্যন্তরীণ তল্লাশির সাথে এবার নগরীর পাঁচ প্রবেশ পথেও বসানো হচ্ছে বিশেষ তল্লাশি চৌকি।
র‌্যাব-পুলিশের এসব তৎপরতাকে ভোটের মাঠে প্রতিদ্ব›দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজস্ব অবস্থান থেকে অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর পক্ষেই দলের শীর্ষ নেতারা নির্বাচনী প্রচারণার শেষ পর্যায়ে এসে পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটের দিন ‘গোলযোগ করতে’ বহিরাগত লোকজনকে শহরে এনে জড়ো করার অভিযোগ তুলেছেন। কোনও কোনও ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীও একই ধরনের অভিযোগের আঙুল তুলেছেন প্রতিদ্ব›দ্বীর বিরুদ্ধে। আবার বিএনপি মনোনীত মেয়র ও দলের সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ এমন তৎপরতার আড়ালে কেবলমাত্র তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতেই হানা দিয়ে গ্রেপ্তার-হয়রানিরও অভিযোগ করেছে। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এমন অভিযোগকে ‘ঢালাও এবং প্রার্থীর নির্বাচনী কৌশলের অংশ হতে পারে’ জানিয়ে নাকচ করে দিয়েছেন।
র‌্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের জানান, বাহিনীর সদর দপ্তর থেকেই চসিক নির্বাচনের নিরাপত্তায় নানা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে গুজব ছড়ানো ও উস্কানি প্রতিরোধে র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা সেখানে নজর রাখছেন। ভোটের দিন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক র‌্যাবের পৃথক টিম দায়িত্ব করবে। ইতিমধ্যে র‌্যাব সদস্যরা বাহিনীর নির্দিষ্ট পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। ভোটগ্রহণের আগে র‌্যাবের টহল ও নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।
নগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। অবৈধ অস্ত্রধারী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বহিরাগতদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ খুঁজছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু অবৈধ অস্ত্র জব্দ এবং অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সহিংসতায় লিপ্তদের পাশাপাশি সংঘাতের চেষ্টা যারা করছেন, তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে নগরীর কোতোয়ালী, ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, আকবর শাহ থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা শাখার অভিযানে অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি ছয়জন বহিরাগতকে আটক করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরীতে জড়ো হয়েছিল বলে পুলিশের অভিযোগ। আটককৃতদের মধ্যে জেলার চন্দনাইশ, রাউজান, পটিয়া এবং কক্সবাজারের মহেশখালী ও উখিয়ার বাসিন্দা রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা থাকার কথাও জানিয়েছে পুলিশ। বহিরাগতদের ঠেকাতে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে নগরীর হোটেল- মোটেল, আবাসিক এলাকা এবং প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও তাদের স্বজনদের বাসা-বাড়িও। এছাড়া নগরীর পাঁচ প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে বিশেষ তল্লাশি চৌকি। আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে বহিরাগতরা যাতে আশ্রয় নিতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কমিশনের ঘোষিত তফসিলে গত বছরের মার্চে নির্বাচনী প্রচারণার মাঝপথে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর পুনর্নির্ধারিত দিনক্ষণ অনুযায়ী আগামীকাল বুধবার এবারের সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা সম্পন্ন হয়েছে।