ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল বহদ্দারহাট ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি চাই না

23

 

চট্টগ্রাম নগরীতে সর্বপ্রথম নির্মিত বহদ্দারহাট এম.এ.মান্নান ফ্লাইওভারের একটি পিলারে আবারও ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ খবর পেয়ে ফ্লাইওভারটি পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে ফাটল অংশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সূত্র জানায়, ফ্লাইওভারটির ওয়াই জংশনে কালুরঘাটের দিকে নামার র‌্যাম্পের বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের সামনের ফ্লাইওভারের একটি পিলারের ওপরের অংশের পুরোটা ফাটল দেখা দেয়। তবে কোন তদারকি কর্তৃপক্ষের নজরে এ ফাটল ধরা পড়েনি। সাধারণ মানুষ মারাত্মক এ ফাটল দেখে তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি তোলে তা ছড়িয়ে দিলে সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ ও পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। এদিকে ফাটল শনাক্ত করার পর দুর্ঘটনা এড়াতে ফ্লাইওভারের মোহরা অংশে যানবাহন ও মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি আসলেও আরো একটি বহদ্দারহাট ট্র্যাজেডি থেকে পুরোপুরি রক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত মার্চ মাসে দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদকীয় কলামে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের দৈন্যদশা নিয়ে একটি কলাম প্রকাশিত হয়। তাতে, আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল এ ফ্লাইওভারের স্থায়িত্ব নিয়ে। কিন্তু ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো বোধে আসেনি সম্ভবত, তাই ফ্লাইওভার নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও ছিল না। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সিটি মেয়র বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে ফ্লাইওভারটি মেরামতসহ ফাটলের কারণ উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি করার কথা জনাবেন। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন সিডিএকে যেকোন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন। ফাটলের রহস্য কী- এনিয়ে নানাজনের মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও চসিক ও সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলীদ্বয় ধারণা করেন, অতিরিক্ত মালবোঝায় ট্রাক, কভারবেন ও কন্টেইনারবাহী বড় ট্রাকের ভারে পিলারে ফাটল ধরতে পারে। চসিক প্রধান প্রকৌশলী অবশ্যই নির্মাণ ত্রুটি ও নাশকতার বিষয়টিও সামনে এনেছেন। তদন্ত করা হলে আলোচ্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করতে সহজ হবে বলে আমাদের ধারণা। তবে সিটি মেয়র এম. রেজাউল করিম যে কথাটি বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি মনে করেন, ঠিকাদারের নির্মাণ ত্রুটির কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মতামতের পর করণীয় নির্ধারণ করা যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে, ফ্লাইওভারের পিলারের ফাটল হঠাৎ একদিনে দেখা দেয়নি, নানা কারণে অনেকদিন ধরে এখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে, পরে বড় ফাটলটি সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে এ ফ্লাইওভারটি যে কর্তৃপক্ষ তদারকি করে থাকে তাদের যেমন দায় রয়েছে, একইভাবে যে কর্তৃপক্ষ এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করেছে এবং যারা নির্মাণকাজের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেককে-এর দায় নিতে হবে। এ ছাড়া ফ্লাইওভারটির যে অংশে ফাটল ধরেছে তা কিন্তু মূল ফ্লাইওভারের আরো দুই বছর পর নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি অনুযায়ী এটির স্থায়িত্বের একটি সুদীর্ঘ সময় নির্ধারণ আছে নিঃসন্দেহে। মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে পিলারে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত, জানমালের ব্যাপক ক্ষতিও হতে পারত। সুতরাং নির্মাতা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি বা দুর্নীতি বা কাজের ত্রুটির করণেই যদি এ ফাটল! তবে সিডিএ’র উচিৎ হবে, কারণ চিহ্নিত করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া। আমরা আরো একটি বহদ্দারহাট ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি চাই না। খবরে প্রকাশ, ফ্লাইওভার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহদ্দারহাট এলাকায় ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করি, এ মুহূর্তে অতি দ্রুত প্রয়োজন ফাটল পিলারের মেরামতের উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য যে, গত ২০১২ সালে যখন বহদ্দারহাট মূল ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ চলছিল, তখন (২৪ নভেম্বর) বহদ্দারপুকুর এলাকায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের স্টিলের গার্ডার ধসে পড়ে ১৭ জন নিহত হয়। হঠাৎ করে তিনটি গার্ডার ফ্লাইওভার (ওভারপাস) থেকে পড়ে যাওয়ার ওই ঘটনায় আহত হন অন্তত ৫০ জন। অনেক মানুষ পঙ্গু হয়ে যায়। এর আগে ওই বছরের ২৯ জুন বহদ্দারহাটের এই নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার থেকে ১৩০ ফুট দীর্ঘ কংক্রিটের গার্ডার ভেঙে পড়েছিল। ২০১৩ সালে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১২ অক্টোবর এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে এক দশমিক চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ মিটার প্রস্থ এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়। চারলেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটির নাম রাখা হয় এম এ মান্নান ফ্লাইওভার। এরপর ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০ মিটারের কালুরঘাটমুখী একটি র‌্যাম্প যুক্ত হয় ফ্লাইওভারে।