ফোটানোয় জৌলুস নেই হালদাপাড়ে দুএকদিনেই রেণু বিকিকিনি শুরু

28

হাটহাজারী প্রতিনিধি

পূর্ণিমার তিথিতে, নদীতে পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তীব্র প্রবাহ ছাড়াই বিরূপ প্রকৃতিতে আশা-নিরাশার দোলাচলে দুই দফায় নমুনা ডিম দেয়ার পর হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছিল কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা-মাছ। এরপর ডিমসংগ্রকারীদের জালে ধরা পড়া ডিমের পরিমাণ কম হওয়ায় তাদের মুখে মলিনতার ছাপ পড়ে। তবে এখনও তারা আশাবাদি, মা-মাছ আবারও ডিম ছাড়তে পারে।
গতকাল বুধবার দুপুরে হালদার পাড় ঘুরে দেখা গেছে, সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটন কাজে এখন বেশি জৌলুস নেই হালদা পল্লীতে। তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে নদী থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংগ্রহকারীরা। তাছাড়া কাল-পরশু থেকে এসব রেণু বিক্রি শুরু হবে- এমনটা আশা করছেন তারা। পাশাপাশি ফের হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এ সময়টাতে দুর্বল হয়ে পড়া কার্প জাতীয় মা-মাছ যাতে কেউ শিকার করতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্তক রয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও নৌ-পুলিশ।
হাটহাজারীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) পীযুষ প্রভাকর জানান, হালদা পাড়ে হাটহাজারী ও রাউজান অংশের ৪টি হ্যাচারীতে ১৩০টি ট্যাঙ্কে ডিম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। পাশাপাশি কোন কোন ডিম সংগ্রহকারী তাদের ব্যক্তিগত খরচে তৈরিকৃত মাটির কুয়ায় (সনাতন পদ্ধতি) রেণু পরিস্ফুটনের কাজ করছেন।
তবে হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ কম হওয়ায় রেণু পরিস্ফুটন কাজে হালদা পল্লীতে এতটা বেশি জৌলুস নেই বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। তারা জানান, দুই দফায় নমুনা ডিম দেয়ার পর হালদা নদীতে একেবারে স্বল্প ডিম ছেড়েছিল কার্প জাতীয় মা-মাছ, যা নমুনার চাইতে একটু বেশি ছিল মাত্র। তাই, আমরা হতাশ। তবুও আমরা জীবন-জীবিকার তাগিদে রেণু পরিস্ফুটন কাজ করে যাচ্ছি এবং তা বিক্রি করে আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হওয়ার আশা করছি।
এদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ (ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন) এর নিজস্ব হ্যাচারিতেও (চারকোনা ট্যাঙ্ক ১০টি, গোলাকার ট্যাঙ্ক ৫টি ও মাটির কুয়া ৮টি) একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারিতে যাতে সঠিকভাবে রেনু উৎপাদন ও বিক্রয় করতে পারেন এবং গ্রাহকরা যাতে হালদার বিশুদ্ধ রেনু ক্রয় করতে পারেন।
আইডিএফ’র প্রকল্প ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান জানান, হ্যাচারিতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, পানি, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও ডিম সংগ্রহকারীদের পরিচর্যায় উৎপাদিত হচ্ছে হালদার শতভাগ বিশুদ্ধ রেনু।
হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার ডিমসংগ্রহকারী কামাল সওদাগর (৬০) বলেন, গত শনিবার মধ্যরাতে হালদা নদীতে মা-মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছিল। এরমধ্যে সোমবার ভোরে ভাটায়ও মা-মাছ ডিম ছেড়েছিল। তবে এবার ডিমসংগ্রহের পরিমাণ একেবারেই কম। আমি আটটি নৌকায় ১০ বালতি (প্রায় ৮০ কেজির মতো) ডিমসংগ্রহ করতে পেরেছি। আইডিএফ’র নিজস্ব হ্যাচারীতে এসব নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটনের কাজ চলছে। আশা করছি আগামীকাল অথবা পরশু থেকে এসব রেনু বিক্রি শুরু করব।
হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরীর সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে আমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়তে পারে মা-মাছ। মা-মাছের পেটে থাকা ডিম বহু আগেই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। তাই পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তোড় সৃষ্টি হলেই আমাবস্যার জো ছাড়াও মা-মাছ ডিম ছেড়ে দিতে পারে। যদি মা-মাছ ডিম না ছাড়ে, তাহলে এমনটা কেন হচ্ছে, তা পরে পর্যালোচনা করে জানানো হবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম জানান, কৃত্রিম রেণু পোনা তৈরি করার কোন সুযোগ নেই। কারণ উপজেলা প্রশাসন ও হালদা পাড়ে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গ্রাম পুলিশের সমন্বয়ে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হালদা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সিসি টিভি’র মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে নৌ পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সুপার মোহাম্মদ মোমিনুন ইসলাম ভূইয়া বলেন, ডিম দেওয়ার পরে কার্প জাতীয় মা-মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় শিকারীরা মা-মাছ ধরতে ফাঁদ পাতে। তাই, মৎস্য শিকারীরা যাতে মা-মাছ শিকার করতে না পারে, সেজন্য নৌ-পুলিশ সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে।