প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণ গুণগত শিক্ষার জন্য চাই দক্ষ শিক্ষক

52

 

শিক্ষকগণ জাতি গড়ার কারিগর। তাঁদের কোয়ালিটি হওয়া উচিত সবচেয়ে উচ্চতর ও উদারচিন্তার প্রয়োগিক মননশীল। শিক্ষকতা পেশার সেক্টরটাকে সমৃদ্ধ করতে হলে তা অবশ্যই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একটা প্রমত্ত নদীর উপর ব্রিজ করতে পিলার বসানোর কাজটা যেমন উন্নত এবং অগ্রসর দেশে গিয়ে হাতে কলমে দেখে শিখে আসতে হয় তেমনি শিক্ষার পিলার শৈশবের বেইজ ঢালাই মজবুত করতেও পুরো বিশ্বের শিক্ষার প্রক্রিয়া একীভূতকরণে পর্যবেক্ষণলব্ধ অভিজ্ঞতা প্রকৃত শিক্ষার উন্নতির পথ সুগম করে। প্রতি বছর জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব বিচারে কিছু শিক্ষক উচ্চতর প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। নিঃসন্দেহে এটি তাঁদের পরিশ্রম, মেধা ও সাধনার ফসল।তবে আমাদের সামগ্রিকভাবে শিক্ষকদের পেশাগত, মননের উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। একটি শিশু চারাগাছের যত্ম করার পদ্ধতি হরেকরকম। একেক দেশে একেক পন্থা। যদি একজন শিক্ষক সেই পন্থাগুলো উচ্চতর প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ভ্রমণের মাধ্যমে রপ্ত করতে সক্ষম হন প্রকৃত জ্ঞানার্জন শিশুবান্ধব আনন্দঘন শিক্ষার পরিবেশ খুবই দ্রæত সৃষ্টি হবে বলে মনে করি। ক্লাস চলাকালীন সময়ে অপেক্ষাকৃত অপারক শিশুদের সামনের বেঞ্চে বসিয়ে চোখে চোখে রেখে আমাদের পড়াতে লেখাতে বলা হয়। পারক অপারক সূচকে সূ²দৃষ্টির শিক্ষক সবাই আমরা হতে পারি নাই আজো।কারণ মানুষভেদে আমাদের মেধা, মননও ভিন্নতর।ট্রেনিং করেও অনেকের মাথায় প্রকৃত কৌশলগুলো ঠিক সেটিংসে আসে না। এজন্যই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা শিক্ষকতা পেশায় অনেক অনগ্রসর, পিছিয়ে। যদি আমরা এ থেকে বেরিয়ে আসতে চাই তবে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের মানদÐে নয়; শিক্ষকতা পেশায় জড়িত একটি নিরাট অংশের উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। যা ভাল ও কার্যকর শিক্ষণ শিখন পরিকল্পনার সফলতার সোপানের উর্ধ্বগতি নির্দেশ করে।
উপজেলা/থানা ভিত্তিক লটারীর মাধ্যমে শিক্ষক বাছাই প্রক্রিয়া করে উনাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ভ্রমণের আয়োজন করতে হবে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে (পড়াশোনার চাপ কম বিধায়)। এতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে। লটারী করলে ভাগ্যে যাঁর নাম থাকবে তিনিই যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এতে কোন সার্টিফিকেট পড়াশোনার গ্রেডিং চলবে না। যেহেতু এসএসসি সার্টিফিকেট ইস্যুতে অনেকেরই চাকরি হয়েছে। শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নই প্রকৃত লক্ষ্য হতে হবে বরং যাঁরা চাকরিতে এসে পড়াশোনায় বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি তাঁদেরই সবার আগে এ ধরনের সুযোগ দেয়া উচিত। এতে উনাদের মনের বিগাড়রতা,অক্ষম ভাবা মাস্টার্সদের সাথে চাকরি করার কী যে বিড়ম্বনা তা অনেকটা দূর হবে আশা করি। সমতা,সাম্যতা মনোভাব কেবল মুখে,কাগজে কলমে থাকলে হবে না। বাস্তবিক প্রয়োগ থাকতে হবে।আমাদের গুচ্ছ ভাবনা ছেড়ে ঢালাও উন্নতির কথা ভাবতে হবে।সময়কে আমাদের হাতের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।তখন বিশ্বের সাথে সমানতালে আমরাও শিক্ষা খাতে অত্যন্ত মসৃণ সুদূর উন্নত যুগে প্রবেশ করব। কথায় কথায় জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থার উদাহরণ নয় বরং স্বনির্ভর উন্নত বাংলাদেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা অনুকরণীয় হবে একসময়। আর এজন্য দরকার টেকসই অভিজ্ঞতার ফলপ্রসূ অর্জন। মেধা,মনন আর পরিশ্রমে কৌশল রপ্ত করার মানসিকতা সৃষ্টি। এসব দেখে বুঝে হয়,ভ্রমণে মনস্থিরে প্রত্যাশার বীজ বুনন হয়। নতুন নতুন উদ্ভাবনী জাগরণ সমৃদ্ধ হয়।এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণে বৃহৎ কর্মযজ্ঞের পুরোধা হওয়া সম্ভব নয়।
অনেকেই আবার শিক্ষকদের দোষেন, বলেন তাঁরা নিজ উপজেলা/থানা ছাড়া দেশের আর এককোণাও দেখেননি বলেই স্থানীয় শিক্ষকদের মন মানসিকতা চরম অনগ্রসর। তাঁরা অন্যের সমালোচনা করেন, মূল্যায়ন করতে জানেন না। একথায় আমিও একমত পোষণ করি।না ঘুরলে মানুষ জানবে কী করে? বইয়ের পড়াইতো সব নয়। ইউনির্ভাসিটিতে না পড়লেও সময় করে একদিন ঘুরে আসতো মানা নেই। প্রয়োজনে অথরিটিই সেই ব্যবস্থা করে দিন। আমাদের শিক্ষকচেইন তৈরি করতে হবে। ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাইমারি, মাদ্রাসার শিক্ষকদের একসূত্রে বাঁধতে হবে। অভিজ্ঞতার শেয়ার ও কেয়ারের কর্মশালা করতে হবে। উঁচু নিচু মন মানসিকতা পরিহার করতে হবে। মনের কালিমা দূর হয়ে প্রকৃত জ্ঞানের আলো সবার মাঝে উদ্ভাসিত হোক এই কামনা করি। শিক্ষক মানেই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে আসীন। সেটা ধরে রাখা, গড়ে দেয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য শিক্ষকের ও রাষ্ট্রের।
‘শিক্ষক মোরা শ্রেষ্ঠ সবার,
জ্ঞান গুণে অনন্য অপার।’
লেখক: শিক্ষক