প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব জনগণ ঘরে থাকুন, নিজে বাঁচুন এবং দেশকে বাঁচান

74

সাঈদুল আরেফীন

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস জ্বরের কারণে কাহিল হয়ে পড়েছে মানব সভ্যতা। প্রতিদিন মৃত্যু যেনো একটা স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়ে পড়েছে। সারাবিশ্ব এখন মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১৮০টিরও বেশি দেশ এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো করোনা মহামারি আকারে দেখা দেয়। এরপর বিশ্বব্যাপী ক্রমান্বয়ে এ রোগ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও এখন আর করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত নয়। সরকারও বাধ্য হয়ে মানুষকে সারাদেশে সাধারণ ছুটির মধ্য দিয়ে ঘরমুখী করতে চাইছে। যার কারণে সরকার ঘরের বের না হবার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বড়ো বড়ো শহর, গ্রাম উপজেলা সবখানে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক বাহিনি নানাভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করছে মানুষকে ঘরমুখী করে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত করার জন্যে। তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটা দেশ কীভাবে একে সামাল দেবে এই প্রশ্নটা এখন বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকে যথেষ্ট আন্তরিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়কে কাজে লাগিয়ে নিজে থেকে তদারকি করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের কারণে মানুষ আশাবাদী হচ্ছে। তবে মানুষকে অনেকবেশি সহযোগিতা পরায়ণ হতে হবে। না হলে আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনা ভাইরাস এমন একটি মহামারি যার কোন প্রতিষেধক আজ’বধি আবিস্কৃত হয়নি। বিশ্বের বাঘা বাঘা রাষ্ট্র প্রধান থেকে আরম্ভ করে হিমশিম খাচ্ছে করোনা ভাইরাসের মহামারিতে। বিশ্বের নানাপ্রান্তে দেশে বিদেশে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে বসেছে। মানুষ ঘর বসে প্রার্থনা করছে। সুদূর চীনের সীমা পেরিয়ে করোনা ভাইরাস ইউরোপ আমেরিকার বড়ো বড়ো রাষ্ট্রে প্রবল আকারে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর হার দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছে বিশ্বের মানুষ। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীরা বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘর থেকে বের না হতে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে। কেঁদে কেঁদে বলছে করোনা প্রবাসে ভাইরাসের ভয়াবহতা। এই লিখাটি যখন লিখছি (৬ এপ্রল) তখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণে পড়েছে ১৩,৫০,৬০০জন। যার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২,৮৭,৪৮১ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৪,৮৬৬জন। ঐদিনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪১জনসহ এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৬৪ জন। যার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন। ওইসময় ৫জন সহ এ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেছে ১৭জন। শুধু মৃত্যুবরণই নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও নানা সেক্টরে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। গার্মেন্টস খাত,ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসায়ী থেকে ছোট বড়ো সকল স্তরের পেশায় নিয়োজিত সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ মারাত্মকভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিতে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, এ মহামারিতে বিশ্বের সিভিল এভিয়েশন খাতে রিবাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ কর্তৃৃপক্ষের দাবি অনুসারে, প্রায় ২৫০ বিলিয়ন বা ২হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবার ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের বিমান খাতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির ক্ষেত্রে এ ধরণের পরিস্থিতি আর হয়নি বলে দাবি করা হচ্ছে। কারণ সকল দেশের বিমান কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ বিমান চলাচল ইতোমধ্যেই স্থগিত করেছে। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। দেশে বিদেশে যেখানে লক ডাউন চলছে। সেখানে গত ২৬ মার্চ থেকে এখনো সরকারি ছুটির মাধ্যমে সারাদেশের মানুষকে ঘরমুখী করা হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক নিজে নজরদারির পাশাপাশি যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে বিষয়গুলো মনিটরিং করছেন। দেখভাল করছেন প্রতিটি দপ্তরের কার্যক্রম। সরাসরি কথা বলছেন তিনি স্বাস্থবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘরবন্দি মানুষকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে উদ্যোগের কমতি নেই। পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে সরকার বাধ্য হয়েছে সাধারণ ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে। সেই বিবেচনায় মানুষ যাতে খাদ্যে কষ্ট না পায় তার জন্য নানাভাবে চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। এমন একজন জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী তিনি, জনগণের উদ্দেশে ভাষণে দেশ বিদেশের উদাহরণ টেনে জনগণকে ৩১টি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তো হতে পারে। তিনি প্রতিটি বিষয়ে সারাক্ষন চোখ কান খোলা রাখছেন। তাঁরই প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় প্রতিদিন আইইডিসিআর থেকে জনগণের সামনে করোনা ভাইরাস আপডেট তুলে ধরছেন। প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে জনগণকে আশাবাদী করে তুলছেন। যাতে মৃত্যু আতংকে কেউ মনোবল হারিয়ে না ফেলে। বিশে^র বড়ো বড়ো দেশগুরো যেখানে ইতোমধ্যে মরণব্যাধিতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন সেখানে আমাদের জননেত্রী আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে প্রতিদিন জনকল্যাণমূলক নানা কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। সেখানে দুঃখ পীড়াদায়ক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে মাঝে মধ্যে গুজব দেখা দেয়। অনাকাক্সিক্ষতভাবে কিছু মানুষ দুঃসময়ে দেশের ক্ষতি করতে চায়। করেনা ভইিরাসের দুর্যোগময় মুহূর্তে চিকিৎসাসেবা পেতে নাগরিকরা যাতে অবহেলার শিকার নাহয় সে বিষয়টি তিনি নজরদারি করছেন। বলাবাহুল্য তিনি এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যার মানবপ্রেম অসাধারণ। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তিনি আজকেও এক ভিডিও কনফারেন্সে চিকিৎসকদের মানবতাবাদী হতে বলেছেন। চিকিৎসায় যাতে কোন অবহেলা না হয় সে ব্যাপারে সাবধান হতে বলেছেন। সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট সোচ্চার। তিনি তাঁর ৩১ নির্দেশনার মাধ্যমে জনগণের কল্যানমূলক বিষয়গুলোই তুলে ধরেছেন। আমার ভাবতে অবাক লাগে, রাতদিন পরিশ্রম করে তিনি বসে থাকেন না। প্রতিদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জনগণের সামনে হাজির হচ্ছেন। এই দুঃসময়ে নিত্য নতুন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছেন। প্রত্যেকটি সেক্টরকে একটি কাতারে নিয়ে আসছেন। তিনি দেশের সামনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় পরিস্থিতি অনুধাবন করে ৫ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে সংবাদ সম্মেলনে ৫টি প্যাকেজের আওতায় আগাম আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন। আমাদের জনগণকে ভাবতে হবে। একজন দূরদর্শী নেত্রী হিসেবে এই প্রণোদনার বিষয়টি তিনি ভেবেছেন। আমরা একাত্তরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ জয় করেছি। ইনশাল্লাহ জননেত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকেও আমরা করোনামুক্ত করতে সক্ষম হবো। লিখাটি শেষ করার আগে বলতে চাই- জনগণ সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের সাথে একমত হয়ে ঘরে থাকুন। নিজে বাঁচুন, পরিবারকে বাঁচান। পাশের প্রতিবেশীকে বাঁচান। গ্রাম শহরকে করোনা মুক্ত করতে সহায়তা দিন। শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা বাণী দিয়ে শেষ করছি আজকের লিখাটি- ‘বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত- প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে-সে জাতিকে কোনো কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’

লেখক : কবিও শিশুসাহিত্যিক