প্রতিবেদন দিতে সময় চাইবে পিবিআই

30

হেফাজতের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচিত আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে আল্লামা মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল একমাস আগে। এ বিষয়ে তদন্ত করে একমাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য যে আদেশ ছিল তা প্রতিপালন করা সম্ভব হচ্ছে না পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। তদন্তে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাপকতার কারণে যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব না হওয়ায় মামলার ধার্য তারিখে আরো সময় চাইবেন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই এর পরিদর্শক এনায়েত।
এদিকে স্পর্র্শকাতর এ মামলার তদন্তে পিবিআই এর চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো এবং হেডকোয়ার্টার থেকে চৌকস অফিসারদের যুক্ত করা হয়েছে। যার সংখ্যা ১২ জনের মতো হবে বলে উল্লেখ করে পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত জানান, মামলাটি বেশ স্পর্শকাতর বলে আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। তদন্তের অধিকাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আরো কিছু বিষয়ে তদন্ত বাকী রয়েছে। তবে আদালত নির্ধারিত একমাসের সময়সীমার মধ্যে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারছে না। এ কারণে পিবিআই এর পক্ষ থেকে আরো সময় চাওয়া হবে ধার্য তারিখে। এদিকে জুনাইদ বাবুনগরীর নাম মামলার আরজিতে নেই। গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন বাদি হয়ে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বাদির আইনজীবী আবু হানিফ জানান, মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে আহমদ শফীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া এবং হত্যার অভিযোগে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্তের আদেশ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য একমাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আইনজীবী আবু হানিফ আরো বলেন, আসামিরা মানসিক নির্যাতন করে আল্লামা শফীকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস এবং হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজওয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমদ, মীর জিয়াউদ্দিন, আহমদ, মাহমুদ, আসাদউল্লাহ, জোবায়ের মাহমুদ, এইচ এম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ, আহমদ কামাল, নাছির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাসেমী, মোহাম্মদ হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জুবায়ের, মোহাম্মদ আমিনুল হক, রফিক সোহেল, মোবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েমউল্লাহ ও হাসান জামিলকে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮০/৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে ছয়জনকে। তারা হলেন মাওলানা কাউছার, মাওলানা মোহাম্মদ আরসাদ, বাদী মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন, মোহাম্মদ হোজাইফা, শাহেদ হাসান ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শতবর্ষী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফীর জীবনাবসান হয়। হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। তিনদিন ধরে ওই মাদ্রাসায় আহমদ শফীকে অবরুদ্ধ করে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ শফীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং ঢাকায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর থেকে শফীর অনুসারীরা তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছিলেন।
মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছিল, আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে ১১ সেপ্টেম্বর ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর এলাকায় মামুনুল হকসহ আসামিরা বৈঠক করেন। সেই বৈঠক থেকে শফীপুত্র আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। তাকে বহিষ্কার করা না হলে আহমদ শফীকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে একদল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রকে মাঠে নামানো হয়। তারা আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে উগ্র ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে শ্লোগান ও গালিগালাজ করতে থাকে। আহমদ শফীর কার্যালয়ে অনধিকার প্রবেশ করে আসামি নাছির উদ্দিন মুনির ধমকের সুরে বলেন, ‘তুই হচ্ছিস বুড়ো শয়তান, তুই মরবি না, তুই সরকারের দালাল।’ ৪০-৫০ জন শফীর কক্ষে গিয়ে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করে ওই পদে হেফাজতের বর্তমান আমীর জুনাইদ বাবুনগরীকে বসানোর দাবি করতে থাকেন। শফী রাজি না হওয়ায় মামুনুল হকের মোবাইলে নির্দেশ মতে নাছির উদ্দিন মুনির তার দিকে তেড়ে যান, শফী বসা অবস্থায় চেয়ারে লাথি মারেন। নাকের অক্সিজেন টান দিয়ে খুলে ফেললে শফী অজ্ঞান হয়ে যান। এ সময় মাইকে ঘোষণা করা হয়, আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং শফী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আসামিদের কয়েকজনের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা আনাস মাদানীর কক্ষে ঢুকে সেখান থেকে নগদ ২৮ লাখ টাকা, স্ত্রী ও মেয়ের ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেন। মাওলানা ওমরের কক্ষ থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা, মুফতি ওসমানের কক্ষ থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও মাওলানা দিদারের কক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা লুট করে নেয়। দন্ডবিধির ১০টি ধারায় মামলা করা হয়। ধারাগুলো হচ্ছে, ১৪৩/৪৪৮/৪২৭/১১৭/৩২৩/৩৪১/৩৮০/৩০৪/৫০৬/৩৪। তদন্তের বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আমাদের রাহবার আল্লামা আহমদ শফির স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে উঠে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।