প্রতিদিন ১০টি মামলা ও একটি জব্দের নির্দেশ

172

মহানগরীর বিভিন্ন পরিবহনের লাইসেন্স, ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশনবিহীন যান চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ। সিএমপি থেকে এখন নতুন আদেশ দেয়া হয়েছে দৈনিক প্রত্যেক সার্জেন্টকে ১০টি মামলা এবং একটি টু বা জব্দ করতে হবে। এ নির্দেশনার পর থেকে সার্জেন্টরা মামলা দিতে ব্যস্ত। সিএমপি কমিশনার বলছেন, সার্জেন্টদের কর্মতৎপরতা বাড়াতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি ইতিবাচক মনে করছেন যাত্রীরা।
গতকাল নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, জিইসি মোড়, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, নিউ মার্কেট মোড়সহ বেশ কিছু এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের বাড়তি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। কোথাও কোন অসংগতি পেলেই মামলা দিচ্ছেন সার্জেন্টরা।
সিএমপি ট্রাফিক সূত্রে জানা যায়, নগরীর ট্রাফিক বিভাগ দুইটি জোনে বিভক্ত। একটি হচ্ছে উত্তর জোন অন্যটা বন্দর। দুই জোন মিলিয়ে সার্জেন্ট রয়েছেন ১১৭ জন। তাহলে প্রতি সার্জেন্ট দৈনিক গাড়ি জব্দ করবেন ১১৭টি আর যদি ১০টি মামলা দেয় তাহলে মামলার সংখ্যা হবে ১ হাজার ১৭০টি। যার ফলে আতঙ্ক কাজ করছে অসংগতিপূর্ণ যানবাহন চালক-মালিকদের।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন মোড় ঘুরে দেখা গেছে, বাস, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, লেগুনা থামিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও চালকের লাইসেন্সসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করছেন সার্জেন্টরা। কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স দেখে ত্রæটি পেলেই মামলা দেয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশের এই সক্রিয় ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. ফেরদৌস। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘নিয়মিত যদি ট্রাফিক সার্জেন্টরা এমন অভিযান পরিচালনা করতেন তাহলে ট্রাফিকের বিরুদ্ধে যে সাধারণ মানুষের একটা নেতিবাচক ধারণা আছে সেটি পাল্টে যেতো। মাঝে মাঝে আমরা তাদের কর্মকান্ডকে বকাবকি করলেও এখন তাদের কর্মকাÐ দেখে সন্তুষ্ট।’ জিইসি মোড়ে কলেজ ছাত্রী আনিকা সৈয়দ সুবাহ বলেন, ‘আমরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম।
কিন্তু সড়ক এখনও নিরাপদ হয়নি। সড়কে এখনো অসচেতন চালকদের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ অসচেতন চালক মালিকদের ধরার দায়িত্ব হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের।’
কর্মজীবী হাসিনা আক্তার দাবি করেন, ট্রাফিক পুলিশ তৎপর হলে বিশৃঙ্খলা হবে না। ট্রাফিকরা অবহেলা করে বলেই সড়কে এত অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলা। আমরা অনুরোধ করবো যাতে ট্রাফিকরা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেন। আর অসংগতিপূর্ণ গাড়িকে মামলা দেয়াতে সাধুবাদ জানাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সার্জেন্ট বলেন, ‘আমরা আমাদের নিয়মিত কাজ করেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু এ অফিস আদেশের কারণে বাড়তি একটু চাপ হচ্ছে। একদিকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় অন্যদিকে অসংগতিপূর্ণ গাড়ি ধরে মামলা দিতে হয়। একজনে কয়দিকে নজর দিতে পারি?’
গাড়ি চেক করার সময় তো যাত্রীদের ভোগান্তি হয় এতে তো তারা আপনাদের উপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে আমরা আমাদের কর্মকাÐ পরিচালনা করছি। উনাদের জীবনের দায়ভার থাকে গাড়ি চালকদের। আর আমরা তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করি আদৌ তারা পরিপক্ষ কিনা। এতে যাত্রীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমানের সাথে। তিনি পূর্বদেশকে জানান, সকাল-বিকেল দুই শিফটে সার্জেন্টরা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান করেন। যানজট নিরসন করাই তাদের মূল কাজ। তবে পাশাপাশি আমরা গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করার জন্য সার্জেন্টদের বাড়তি নির্দেশনা দিয়েছি। এতে বলে দিয়েছি দৈনিক ১০টি মামলা ও একটি গাড়ি জব্দ করতে হবে। এতে তারা কাজের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হবে। কিছু সার্জেন্ট আছে তারা কাজের ফাঁকি দেয়, মূলত তারা যাতে কাজের ফাঁকি দিতে না পারে সেজন্য এ উদ্যোগ। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিনের মামলা থেকে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা পাই যা সরকারকে রাজস্ব প্রদানে সহায়তা করছি।
সরকারকে রাজস্ব প্রদানের জন্য তো রাজস্ব বোর্ড আছে? আপনারা তো চাইলে অর্থ আদায় না করে কোন কঠিন শাস্তি দিতে পারেন এমন বলার পর তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরকারকে রাজস্ব দেয় মাত্র ৩৬ শতাংশ। বাকি অর্থ আমরাসহ অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদান করা হয়। আর গাড়ির অসংগতির ক্ষেত্রে আমরা জরিমানার বাইরে কিছু দিতে পারি না। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী যে রকম নিয়ম রয়েছে আমরাও সেভাবে পালন করছি।