পে-পার্কিং ফিরিয়ে আনতে চায় চসিক

30

নিজস্ব প্রতিবেদক

কখনও যানজট নিরসনের দাবি, কখনও ফ্লাইওভার ব্যবস্থাপনার খরচ মেটাতে সড়ক ও ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে পে-পার্কিং তথা ফি এর বিনিময়ে পার্কিং চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সচেতন মহল, নগর পরিকল্পনাবিদ ও অংশীজনদের বিরোধীতা ঠেকে যায় দুটো উদ্যোগই। একইভাবে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরও চেয়েছিলেন পে পার্কিং করতে। উদ্বোধন করলেও বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এমন উদ্যোগে উল্টো যানজট বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও যোগাযোগ বিশ্লেষকরা।
আগের ঠেকে যাওয়া সড়কে পে-পার্কিং ব্যবসা ফিরিয়ে আনতে চাইছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। সংস্থাটির গত দুই সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে গতকাল চসিকের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ২৪তম সাধারণ সভায় মেয়র বলেন, ‘যানজট নিরসনে ফ্লাইওভারের নিচে ও সড়কের উপযুক্ত স্থানে পে-পার্কিং তথা নির্দিষ্ট স্থানে ফি এর বিনিময়ে পার্কিং চালু করা হবে। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা বন্ধে যাত্রী ছাউনিগুলোতে দোকান বন্ধ এবং ফুটপাথ দখল বন্ধ করব। ফ্রাইডে মার্কেট তথা হকারদের নির্দিষ্ট স্থানে সাপ্তাহে দুদিন শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া যেতে পারে।’
জানা গেছে, যানজট নিরসনের দাবি তুলে ২০১৬ সালে সড়কে বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করে পে-পার্কিং তথা নির্দিষ্ট স্থানে ফি এর বিনিময়ে পার্কিং চালু করার উদ্যোগ নেয় নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তখন বিরোধীতা করে সিটি করপোরেশন। ২০১৯ সালে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে পে পার্কিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেবারে সিটি করপোরেশন, নগর পরিকল্পনাবিদ ও ট্রাফিক পুলিশের আপত্তির মুখে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ফ্লাইওভারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হস্তান্তরের পর টাকার বিনিময়ে সড়কের মাঝখানে পার্কিং স্থান নির্ধারণ করে চসিক।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধনও করেন তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সড়কে পার্কিং করা হলে যানজট ও জনদুর্ভোগ বাড়বে উল্লেখ করে পরদিনই আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। নগর পরিকল্পনাবিদরাও তাদের আপত্তির কথা জানান। তাদের আপত্তির মুখে পার্কিং বন্ধ করা হয়। এবারে সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়ে নগর পুলিশের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
অন্যদিতে গতকালে সাধারণ সভায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চট্টগ্রামবাসী কৃতজ্ঞ বলে মন্তব্য করে চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুর বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য লড়ছেন, তা বাস্তবায়নে চসিককে সম্মুখসারিতে নিয়ে যেতে চাই আমি। সম্মানিত কাউন্সিলর এবং সেবা সংস্থাসমূহকে সাথে নিয়ে চসিকের সেবা ও সেবার মান বাড়িয়ে চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতা ও যানজটমুক্ত একটি স্বাস্থ্যকর পরিচ্ছন্ন মডেল শহরে পরিণত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
বর্ষার আগে প্রস্তুতি নেওয়া প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা হ্রাসে বারইপাড়া খাল থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খননসহ গ্রীষ্মকালের মধ্যেই খাল-নালা ইত্যাদিতে জমা মাটি ও ময়লা পরিষ্কার করার হচ্ছে। তবে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা হ্রাসে যে প্রকল্প পরিচালনা করছে, সেখানে রিটেনিং ওয়ালসহ নালা-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের অনেকগুলো এলাকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমি সিডিএ চেয়ারম্যান মহোদয়সহ সিডিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি, যাতে এ প্রকল্পে বর্ষার পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। কাউন্সিলরবৃন্দ আগামী ১০ দিনের মধ্যে খাল-নালার পরিস্থিতি কী তা রিপোর্ট আকারে জানাবেন আমাকে।’
চট্টগ্রামের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে কাজ চলছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম শহরকে নান্দনিক নগরে পরিণত করতে সড়ক ও ফ্লাইওভার ডিজাইনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকে প্রাধান্য দিচ্ছি। চট্টগ্রাম শহরের যত্রতত্র বিলবোর্ড স্থাপন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পোস্টারের কারণে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পোস্টারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। কোথাও অননুমোদিত বিলবোর্ড থাকলে তাও উচ্ছেদ করা হবে। শহরের আলোকায়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে বেগবান করতে এবারের একুশে বইমেলাকে আরো প্রাঞ্জল ও বৃহত্তর আকারে সাজানো হচ্ছে।
সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন।
সভায় চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চসিক শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেমসহ চসিকের বিভাগীয় প্রধান ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।