পশ্চিমবঙ্গের পর এবার ত্রিপুরায় নজর তৃণমূলের

6

 

পশ্চিমবঙ্গের পর এবার ভারতের আরেক রাজ্য ত্রিপুরায় আঁটঘাঁট বেঁধে ‘খেলতে’ নামছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। আইপ্যাক বিতর্ক কাটতে না কাটতেই সোমবার আগরতলায় পা রাখছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী, তৃণমূল দলীয় এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন, যুব তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্যরা একেবারে মাঠে নেমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বিজেপি অবশ্য শুরু থেকেই তৃণমূলকে কটাক্ষ করছে। দলটি বলছে, ত্রিপুরায় তাদের সংগঠনের সিকিভাগও তৃণমূলের নেই। কিন্তু উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের রাজনৈতিক মহল বলতে শুরু করেছে, ‘খেলা’ ঘোরাচ্ছে তৃণমূল। ক্রমেই বিরোধী পরিসর বাম বা কংগ্রেসের কাছ থেকে নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছে তারা। আর তা করতে গিয়ে কংগ্রেস ও বামদের ঘর ভাঙাচ্ছে তারা। তাতে সাফল্যও মিলছে। এমনকী কংগ্রেসের বহু হেভিওয়েট নেতাই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে খবর বেরিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে কংগ্রেসের ভিত্তি ধরে রাখতে ত্রিপুরার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষ বিশ্বাসকে ফোন করে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ নেতা বেনুগোপাল।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তৃণমূলের নির্বাচনি উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক-এর ২৩ জন কর্মকর্তাকে হাউস অ্যারেস্ট করে রাখার পর তাদের ছাড়াতে আদালতে সওয়াল করেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পীযূষ বিশ্বাস। মহামারি আইন ভাঙতে পারে এই যুক্তিতে তাদের জামিনের বিরোধিতা করেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। যদিও সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। আইপ্যাক সদস্যদের আইনজীবীর দায়িত্ব নেওয়া কংগ্রেস নেতা পীযূষ বিশ্বাস স্পষ্ট জানান, ‘গৃহবন্দি করে অনর্থক হয়রানি করা হচ্ছিল এই প্রতিনিধি দলটিকে।’ পরে তাদের জামিন দেন আদালত।
তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের জন্য সওয়াল করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গেছে ত্রিপুরায়। তবে কি কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের ‘হিসেবনিকেশ’ হয়ে যাচ্ছে তলে তলে? বেনুগোপালের জিজ্ঞাসায় অবশ্য পীযূষ বিশ্বাস কংগ্রেস হাইকমান্ডের দিকেই আঙুল তুলেছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
কেন ত্রিপুরায় এখন তৃণমূলকে নিয়ে আলোড়ন চলছে, তার জবাবে পীযূষ জানিয়েছেন, যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে মমতার তৃণমূল ত্রিপুরায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার সিকিভাগ চেষ্টাও কংগ্রেস করছে না। নারী, যুব ভোটের জন্য তৃণমূলের সুনির্দিষ্ট কৌশল, আইপ্যাকের মতো সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী আইটি সেল তৈরির মতো নানা পদক্ষেপ তৃণমূলকে আলাদা মাত্রা দিচ্ছে ত্রিপুরায়। সেই তুলনায় বিরোধী শিবিরের বাম বা কংগ্রেস কারও তরফেই উল্লেখযোগ্য কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ তৃণমূল ত্রিপুরার হাওয়া যতটা গরম করতে পারছে, বাকি বিরোধীদের সেই তুলনায় দেখা মিলছে না।
স্বাভাবিক কারণেই বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল। বেনুগোপালের কাছে পীযূষ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই বিজেপিকেও ভাঙাতে শুরু করেছে তৃণমূল। কিন্তু কংগ্রেস বা বামরা সেই পরিসর দখল করতে পারছে না সামগ্রিক পরিকল্পনার অভাবে।
একটা বিষয় স্পষ্ট, বিজেপি যতই তৃণমূলকে কটাক্ষ করুক না কেন, বিপ্লব দেবের রাজ্যে ক্রমেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পর সেই ত‍ৎপরতা যে আরও কয়েক গুণ বাড়তে চলেছে, তা নিয়ে এখন প্রায় নিশ্চিত ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহল।