পবিত্র মহিমান্বিত রজনী শব-ই-বরাত আসুন, অশ্রুসজলে আল্লাহর করুণা ভিক্ষা করি

140

মাওলানা বদিউল আলম রিজভী

আল্লাহ তা’য়ালা কতেক মাসকে অপর মাসের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। শাবান মাসকে সম্মানিত করেছেন। এটা এমন বরকতময় মাস যে মাসে বান্দার আমলসমূহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে পেশ করা হয়। শাবান আরবি শব্দ। আরবি বর্ণমালার পাঁচটি বর্ণের সমষ্টি হলো শাবান। শীন, আঈন, বা-আলিফ, নূন, ‘শীন’ বর্ণ শরফুন তথা মর্যাদার দিকে ইঙ্গিতবহ। ‘আঈন’ বর্ণ উলুব্বুন তথা উচ্চ, উন্নত অর্থের ইঙ্গিত সূচক, ‘বা’ বর্ণ বিররুন তথা পুণ্য অর্থ প্রকাশক। ‘আলিফ’ বর্ণ উলফাতুন তথা ভালবাসা অর্থ জ্ঞাপক। ‘নূন’ বর্ণ নুরুন তথা জ্যোতি, আলো অর্থ প্রকাশক। এ বরকতময় মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেক বান্দাদের জন্য উপরোক্ত দয়া, অনুগ্রহ, দান, করুণা, রহমতের সওগাত অবারিত ও উন্মুক্ত। কল্যাণের মাস শাবান, বরকত নাযিলের মাস শাবান, পাপরাশি মোচনের মাস শাবান, গুণাহসমূহ বিলুপ্তির মাস শাবান, নবীজির উপর অধিক হারে দরুদ-সালাম পরিবেশনের মাস শাবান।
আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, অর্থ : হা-মীম সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, আমি সেটাকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী, তাকে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজ বিভাজন করে দেয়া হয়। আমার তরফ থেকে নির্দেশক্রমে নিশ্চয় আমি প্রেরণকারী। আপনার পালন কর্তার পক্ষ হতে রহমত। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরা দুখান আয়াত: ১-৬)
হাদীস শরীফের আলোকে শবে বরাত :
মোল্লাআলীক্বারী প্রণীত হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে উল্লেখ হয়েছে এক জামাত সালফে সালেহীনদের মত বর্ণিত আয়াতে লায়লাতুল মোবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য শাবানের ১৫ তারিখ রজনী। (তুহফাতুল আহওয়াজী : ৩/৩৬৭ পৃ:)
প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা.)’র মতে লায়লাতুল মোবারকা সেটি হলো শাবানের ১৫ তারিখের রজনী । (শাওকানী : ফতহুলকদীর ৪/৬৫৩ পৃ:)
শাবান ও শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে নিম্নে কতিপয় হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি পেশ করা হলো :
হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন শাবানের মধ্যরাত হতে তখন তোমরা রাত্রি জাগরণ করো ও দিনের বেলায় রোজা রাখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা সে রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে তাঁর তাজল্লী, প্রভা প্রকাশ করেন এবং বলতে থাকেন ক্ষমা প্রার্থী আছি কি ? আমি তাকে ক্ষমা করবো। জীবিকা প্রার্থী কেউ আছে কি ? আমি তাকে জীবিকা দান করবো, বিপদগ্রস্ত কেউ আছে কী ? আমি তাকে মুক্ত করে দিব। কেউ আছিন কি, কেউ আছ কি ? এভাবে বরাতের ভোর তথা সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ঘোষণা আসতে থাকে। (ইবনে মায়াহ শরীফ : ১/৪৪৪)
হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান মাস ছাড়া আর অন্য কোন মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতে দেখিনি যে মাসে সর্বাধিক নফল রোজা রাখতেন সে মাসটি হলো শাবান মাস। (আবুদাউদ শরীফ, হাদীস নং : ২৪৩৪)
লায়লাতুল বরাতে নবীজী জান্নাতুল বাকীতে গমন :
লায়লাতুল মিন নিছফে শাবান বা শবে বরাতের আমল নবীজির অসংখ্য হাদীস শরীফ ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও বুজুর্গানেদ্বীনের আমল ও এতদসংক্রান্ত মন্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। এ পুণ্যময় রজনীতে নফল ইবাদত দিনে রোজা পালন, কুরআন মজীদ তিলাওয়াত, দরুদ শরীফ ও মিলাদ শরীফ পাঠ, ওয়াজ-নসীহত, কবর যিয়ারত, দান-সদকা ইত্যাদি পুণ্যময় আমল কুরআন সুন্নাহ ও আউলিয়ায়ে কেরামের আমল দ্বারা স্বীকৃত ও অনুমোদিত।
হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে :
অর্থ : উম্মুল মুমোনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হারিয়ে ফেললাম। (অর্থাৎ রাত্রে বিছানায় পেলাম না) ঘর হতে বের হয়ে জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন ওহে আয়েশা ! তুমি কি ভয় করছ যে, আল্লাহ ও তদীয় রাসূল তোমার প্রতি যুলুম করছেন, হযরত আয়েশা উত্তরে বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ধারণা করছি যে, আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গিয়েছেন, অতঃপর নবীজি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রজনীতে প্রথম আসমানে তাঁর তাজল্লী, প্রভা প্রকাশ করেন এবং বনী কালবের ছাগলের লোমের সংখ্যার চাইতে অধিক সংখ্যক বান্দাকে আল্লাহ তা’য়ালা ক্ষমা করে দেন। (সুনানে তিরমিযী, বাব লাইলাতুল মিন নিসফিশ শাবান, খÐ ১, পৃ: ১৫৬)
লায়লাতুল বরাতে নফল ইবাদতের ফজিলত:
শবে বরাতে নফল ইবাদতে অধিক ছাওয়াব রয়েছে ‘নুজহাতুল মাজালীস’ কিতাবে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, অর্থ : প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বরাতের রজনীতে বার রাকাত নফল নামাজ পড়বে প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর এগার বার সূরা ইখলাস পড়বে, তার জীবনের সমস্ত গুনাহ বিলুপ্ত করা হবে এবং তার হায়াতে বরকত দেয়া হবে। হে আল্লাহ আমাদেরকে আপনার সু-পথ প্রাপ্ত মকবুল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আপনার বিতাড়িত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। আল্লাহ আমাদের আপনাদের সকলকে কুরআনের বরকত দান করুন। পবিত্র কুরআনের আয়াত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ দ্বারা আমাদের নাজাত দান করুন। আমি বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্টতা হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, অর্থ হা-মীম সু-স্পষ্ট কিতাবের শপথ আমি সেটাকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী, তাকে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজ বিভাজন করে দেয়া হয়। (সূরা : দুখান, আয়াত : ১-৪) আল্লাহ লায়লাতুল বরাতের ফজীলত ও বরকত আমাদের সকলকে নসীব করুন, আমিন।

লেখক : অধ্যক্ষ, মাদ্রাসা-এ-তৈয়বিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) ও খতিব কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম