পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগে সৌদি আগ্রহ

34

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণে আগ্রহ প্রকাশ করে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) কোম্পানি।
গতকাল বুধবার সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপির সঙ্গে বৈঠকে আরএসজিটি পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমের এ আলি রেজা এ প্রস্তাব করেন। এ সময় তারা এই টার্মিনালকে আধুনিকীকরণে তাদের পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আরএসজিটি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেন্স ও ফ্লোসহ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তারা পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালকে আধুনিকীকরণে তাদের পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। বৈঠকের পর নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী জেদ্দা ইসলামিক পোর্টে আরএসজিটি কোম্পানির কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এর আগে নবনির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনায় আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি সঙ্গে আলোচনায় সম্প্রতি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ) ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরশেনের (আইএফসি) সাথে একটি লেনদেন উপদেষ্টা সেবা চুক্তি করেছে। যাতে পদ্ধতিগত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।
বন্দর সূত্র জানায়, পিসিটিতে বিনিয়োগ ও পরিচালনায় এই পর্যন্ত যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে এগিয়ে আছে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারী রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)। সবকিছু ঠিক থাকলে এই প্রতিষ্ঠানটি পিসিটি পরিচালনার জন্য মনোনীত হতে পারে।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে যারা রয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মার্স্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড (ডিপি ওয়ার্ল্ড), সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল, আদানি পোর্টস এবং ভারতের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
এ টার্মিনালে অপারেশন শুরু হলে বছরে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ৫ লাখ একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। একই সাথে বন্দরের মূল জেটির চেয়ে পিসিটিতে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালের সংখ্যা হবে মোট চারটি। আর বন্দরের মূল জেটির সংখ্যা দাঁড়াবে ২১টি।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ প্রায় ১২ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সেই ভাবে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না। তাই বন্দরে আরও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজন। কিন্তু গত প্রায় ১২ বছরে নতুন কোনো টার্মিনাল নির্মিত হয়নি। সর্বশেষ ২০০৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল। দীর্ঘদিন নতুন টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণ না হওয়ায় পণ্যের প্রবৃদ্ধি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে এই বন্দর। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সক্ষমতা বাড়াতে তিনটি বড় প্রকল্প বন্দর কর্তৃপক্ষ হাতে নিলেও বে-টার্মিনালের আংশিক ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। আর এখনও লালদিয়া টার্মিনাল ফাইলপত্রেই সীমাবদ্ধ। এ প্রকল্প দুটির ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। নবনির্মিত পিসিটি উদ্বোধনের অপক্ষোয় রয়েছে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত সোমবার নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী সৌদি আরবের লজিস্টিকস মন্ত্রীর আমন্ত্রণে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।