পতেঙ্গায় ওয়াসার পরিবেশবান্ধব স্যানিটেশন প্রকল্প অনুমোদন

24

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর দক্ষিণাঞ্চল পতেঙ্গা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় পরিবেশবান্ধব স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সুয়ারেজ প্রজেক্ট ফর পতেঙ্গা ক্যাচমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে চট্টগ্রাম ওয়াসা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রাহাত আনোয়ার।
প্রকল্পটির মাধ্যমে সুয়্যারেজ বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যম হয়ে শোধনাগারে পরিশোধন করা হবে। সুয়্যারেজ লাইনে বৃষ্টি, গৃহস্থালি ও টয়লেটের পানি আসে। প্রকল্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ছাড়া বাকি সব পানি ঘর থেকে সংগ্রহ করা হবে। এসব বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে চলে যাবে। সেখানে পরিশোধন হয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, সুয়্যারেজ প্রকল্পের পতেঙ্গা ক্যাচমেন্ট পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে। একবছর আগে আমরা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করেছিলাম। এখন পিপিপি কর্তৃপক্ষ ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করবে। যাচাই-বাচাই করে দেখবো সব কিছু ঠিক আছে কিনা। পিপিপি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে তারপর ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে যাবে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে পিপিপিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার দ্বিতীয় প্রকল্প। এর আগে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্প পিপিপিতে বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। পুরো চট্টগ্রাম নগরী সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য ৬টি ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। এতে প্রত্যেকটি জোনকে আলাদা আলাদাভাবে সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। এটি হবে চট্টগ্রাম ওয়াসার দ্বিতীয় সুয়্যারেজ প্রকল্প।
বর্তমানে ওয়াসার ‘হালিশহর ক্যাচমেন্ট’ সুয়্যারেজ প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের প্রথম এ সুয়্যারেজ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির নগরীর একটি অংশের (উত্তর-পশ্চিম অংশ) জন্য নেয়া হয়েছে। হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় ওয়াসার ১৬৫ একর জায়গার উপর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হবে। বর্তমানে একনেকে পাস হওয়া ডিপিপিতে সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আছে নগরীর হালিশহর, সাগরিকা, সল্টগোলা ক্রসিং, শেখ মুজিব রোড, কদমতলী, সদরঘাট, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, নিউমার্কেট, কোতোয়ালী, জামালখান, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা। পুরো এলাকার সুয়্যারেজ বর্জ্য পাইপলাইন ও খাল নালার মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা হালিশহর কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধনের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিসলাইন ও ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার পয়ঃশোধনাগার স্থাপন করা হবে। বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ধাপে ধাপে পুরো নগরীতে সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদী দূষণের হাত থেকে রক্ষায় সুয়্যারেজ প্রকল্পের ওপর জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি অনুষ্ঠানে জরুরি ভিত্তিতে সুয়্যারেজ প্রকল্প গ্রহণের জন্য ওয়াসাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।