পণ্যমূল্যের চাপে মধ্য-নিম্নবিত্তরা

22

মনিরুল ইসলাম মুন্না

ষোলশহর রহমান নগর এলাকায় বস্তিতে থাকেন গোলাপজান। স্বামীর মৃত্যুর পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। মানুষের বাসায় গিয়ে ধোয়া-মোছার কাজ করেন তিনি। দৈনিক দু-একশো টাকা যা পান তা দিয়ে বাজার করেন। গত এক বছর মাছ, মাংস খেতে পারেননি তিনি। শুধু কোরবানির ঈদে একটু গরুর মাংস খেতে পেরেছিলেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াতে অল্প সবজি ও কিছু মসলাপাতির বাজার করতে পারেন। এভাবেই চলছে গোলাপজানের জীবন। শুধু গোলাপজানই নন; নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
তাদের দাবি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি। প্রত্যেক পণ্যের দাম একবার বাড়লে বিক্রেতারা তা আর কমাতে চায় না। ওভাবেই থাকে।
সরেজমিন কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এছাড়া মসুর ডাল, আদা, চিনি, ভোজ্য তেলসহ প্রায় সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি সবজি, মুরগি এবং মুরগির ডিমের দামও ডজনপ্রতি অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে গত তিন সপ্তাহে।
আর তাতে মধ্য এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি এক ধরণের চাপ তৈরি হয়েছে।
কিন্তু দাম বাড়ানোর দায় নিতে নারাজ বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, আড়ৎদারেরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন, ফলে তাদেরও বাড়তি দামে পণ্য বেচতে হচ্ছে।
রেয়াজুদ্দিন বাজারের বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, আমরা পাইকারি মার্কেট থেকে পণ্য কিনে আনি। তারা বলে দাম বেশি, নিলে নেন, না নিলে না নেন। আমার মনে হয় এইটা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের মত বড় আড়ৎগুলো করছে। এখন বাজারে জিনিসপত্রের ঘাটতি নেই, তবু জিনিসের দাম বেশি। লকডাউনে গাড়ি বন্ধ ছিল, তখন দাম বাড়ে নাই এখন তাহলে কেন বেশি হবে এটার উত্তর মেলাতে পারছি না।
এদিকে সরকার বলছে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে বৈঠক করে। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী সাংবাদিকদের বলেছেন, পেঁয়াজ-ভোজ্যতেল-চিনিসহ যে ক’টি পণ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমদানি করা হয়, সেগুলোর দাম কমানোর জন্য শুল্ক প্রত্যাহার এবং শুল্ক হ্রাসের জন্য রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
টিপু মুনশী বলেন, পেঁয়াজ আমাদের যা প্রয়োজন তার ৮০ শতাংশ আমাদের দেশে হয়, বাকি ২০ শতাংশের বড় অংশটা ভারত থেকে আমদানি হয়। স¤প্রতি ওখানে (ভারতে) দুর্গাপূজা এবং টানা বৃষ্টি হওয়ায় ওরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে আমাদের ইমপোর্ট ভ্যালু বেড়েছে। সেইটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা অনুরোধ করেছি যে পেঁয়াজের ওপর যে পাঁচ শতাংশ শুল্ক আছে, সেটা যেন এই মূহুর্তে বন্ধ করে দেয়া হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে এরকম অনুরোধ জানানোর পর আগেও এনবিআর শুল্ক কমিয়েছিল বা কোনো ক্ষেত্রে প্রত্যাহার করেছিল। যার ফলে দাম কমে এসেছিল।
এছাড়া দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া ছাড়াও আড়ৎদারেরা পণ্য মজুদ করছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে কেউ পণ্য মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব আলম পূর্বদেশকে বলেন, কোনো ব্যবসায়ী দাম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে না। বিশ্ববাজার তথা আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব চট্টগ্রামেও পড়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি কারও নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেই। বাজারে কোনো ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারবে না। আমরা সবসময় তদারকির মধ্যে রেখেছি। কেউ অসাধুপায় অবলম্বন করে কৃত্রিম সংকট তৈরির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকব। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ তৈরি করতে পারবে না।