নির্ধারিত দামে বিক্রি হয় না ভোজ্যতেল

30

ফারুক আবদুল্লাহ

আন্তর্জাতিক বজারের সাথে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু দাম নির্ধারণ করে দিলেও কঠোরভাবে বাজার তদারিক না করায় তা মানা হয় না। এতে সারাবছরই ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে কারসাজি চলে। যার কারণে এর সুফল পায় না ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে যখন তেলের দাম কমানো হয় তখন বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। এতে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমে যাওয়ায় তেলের দাম নিয়ে চলে তেলেসমাতি কারবার। আবার একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে তেলের দাম বাড়ানো হলে তখন কম মূল্যের তেল রাতারাতি উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়। এ ধরনের কারসাজি বন্ধে মিলগেট থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত কঠোরভাবে তদারকি করা দরকার। তা না হলে ভোক্তারা কখনোই এর সুফল পাবে না।
এদিকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৮ টাকা এবং ৫ লিটারের দাম ৮৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। আজ মঙ্গলবার থেকে বাজারে নতুন দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হবে। কিন্তু এ দরে তেল কিনতে পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন ভোক্তা সংশ্লিষ্টরা।
কারণ এর আগে বিশ্ববাজারে দাম কমায় গত ১৭ জুলাই সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমিয়ে দেয় তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। সেই সময়েও সরকার নির্ধারিত দামে তেল কিনতে পারেনি ভোক্তারা। বাজারে ছিল তেলের কৃত্রিম সংকট।
গত ২২ সেপ্টেম্বর চিনি ও পাম তেলের দাম কিছুটা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ দাম কার্যকর হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পাম সুপার নামে খোলা ভোজ্যতেলের খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম লিটারপ্রতি ১৩৩ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ দাম কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পুরোপুরি দেখা যায়নি।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। অন্যদিকে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির সর্বোচ্চ দাম কেজিপ্রতি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এই পণ্য দুটি গত ছয় মাসের বেশি সময় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বেচাকেনা হচ্ছে।
জানা যায়, বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া। মোট চাহিদার ৩৯ শতাংশই তারা রপ্তানি করে। এর পরেই মালয়েশিয়ার অবস্থান। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন ও শ্রীলঙ্কা সীমিত আকারে পাম অয়েল উৎপাদন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৫ লাখ ১৫ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭৫ হাজার টন কম। অবশ্য একই সময়ে সয়াবিন বীজের আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার টন বেশি। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার টনের কিছু বেশি। আগের বছর কোনো পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়নি।
এছাড়া গত রোববার (২ অক্টোবর) দেশের বাজারে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে ১২০০ টাকা নির্ধারণ করে নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। নির্ধারিত নতুন দাম ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়। একইসঙ্গে অটোগ্যাসের দামও কমানো হয়েছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এই দামে মিলছে না বোতলজাত সিলিন্ডার।