নিত্যপণ্যের বাজার মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় এবার যুক্ত হলো ডিম

26

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তেল, ডালের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চালের দাম। এবার তার সাথে যুক্ত হলো ডিমও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। ডিম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পোল্ট্রি খাদ্যের দামবৃদ্ধির কারণে ডিম ও মুরগির দামবৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ডিমের চাহিদা একটু বেশি। তাই দাম কমুক বা বাড়ুক ডিমের চাহিদা বরাবরই থাকে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর রিয়াজউদ্দীন বাজার ও কাজীর দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাল ডিম বর্তমানে ডজন প্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিমের ডজন ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। পাশাপাশি দেশি মুরগির ডিমে ২০ টাকা বেড়ে ডজনপ্রতি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাজীর দেউড়ী বাজারের ডিম বিক্রেতা আবুল হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ডিমের উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেড়ে গেছে। তার ওপর মুরগির খাবারের বস্তায় ৪০০ টাকার বেশি বেড়েছে। সাথে যুক্ত হয়েছে পরিবহন খরচও। আগে পরিবহনে এক হাজার টাকা লাগলেও এখন ১৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত পরিবহন খরচ পড়ে যায়। এসব কারণে ডিমের বাজার দর বেড়ে যাচ্ছে। দাম কমানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, যদি সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তবে ডিমের দামও কমে যাবে।
এদিকে দাম হু-হু করে বাড়ার কারণে ‘অশনি সংকেত’ মনে করছেন ক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা রহিমা আক্তার বলেন, একমাত্র সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া বাকি সকলকে বাজার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের মত মধ্যবিত্তরা কীভাবে বাজার করছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। আগে সংসার চালাতে মাসে ৫-৭ হাজার টাকা লাগলেও এখন ১৫ হাজারেও কুলাতে পারি না। এটা দেশের জন্য অশনি সংকেত। সরকার সবদিকের উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু মানুষ যে দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে তার দিকে খেয়াল নেই।
সবজির বাজারে কেজিপ্রতি ঝিঙা আর চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৭০, ঢেড়শ ৪০ থেকে ৫০, কাকরোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৫০ টাকা, লাউ পিস ৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা ও কাঁচকলার হালি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজারে দেখা গেছে, প্রতিকেজি রুই ৩০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া-পাঙাস ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, শিং মাছ আকারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, শোল মাছ আকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কই মাছ ২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
পাশাপাশি প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা ও লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া গরুর মাংস প্রতিকেজি ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকায় অপরিবর্তিত দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রতিকেজি চায়না রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি রসুন ৮০ টাকা, খোলা চিনি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা, খোলা আটা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা ফরিদুল আলম বলেন, সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। কোন কিছুই আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে নেই। একটা জিনিসের দাম দুই টাকা কমলে দশটা জিনিসের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ে। আমাদের আয় বাড়ে নাই। ঘরভাড়া বছর বছর বাড়ছে। গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বাড়তি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ বন্ধ নেই। আমরা খুব কষ্টে আর চাপে সময় পার করছি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা বাজার কর্মকর্তা সেলিম মিয়া পূর্বদেশকে বলেন, বর্তমানে পর্যাপ্ত সবজি বাজারে আছে। লেবার ও জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির কারণে কয়েকটি পণ্য বেশি দরে বিক্রি করছেন দোকানিরা। তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে এখনও যায়নি। প্রত্যেকটি বাজারে আমাদের নজরদারী আছে। কারও কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাদের জানাতে পারবেন।